Thursday, November 5, 2015

পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস। আল-কোরআন ও বিজ্ঞানের আলোকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি- ( ১ম পর্ব)

আল-কোরআন ও
বিজ্ঞানের
আলোকে আকাশমন্ডলী ও
পৃথিবী সৃষ্টি- ( ১ম পর্ব)

জ্ঞানগর্ভ কিতাব আল-কোরআনে
আল্লাহতায়ালা অসংখ্য বৈজ্ঞানিক
ঐশী তথ্যের উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহতায়ালা মানুষকে যে
সীমাবদ্ধ জ্ঞানদান করেছেন তার
যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে জ্ঞানী
মানুষেরা যেন এইসব তথ্য সম্পর্কে
বৈজ্ঞানিক চিন্তা ভাবনা ও
গবেষণার মধ্য দিয়ে মহাজ্ঞানী
আল্লাহর অসীম জ্ঞানের কথা উপলব্ধি
করার সাথে সাথে প্রকৃত সত্যের সন্ধান
লাভ করতে পারে সেজন্য বার বার
তাগিদ দেয়া হয়েছে। সেইসাথে
বিবেকবান মানুষেরা যেন
মানবকল্যাণে ব্রতী হওয়ার
পাশাপাশি সবসময় এক আল্লাহর কাছে
মাথানত করে এবং তাঁর মহত্ব ও করুণার
কথা স্মরণ করে। পবিত্র কোরআনে এমন
কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য নেই যা ভুল বলে
প্রমাণিত হয়েছে। জ্ঞানের
সীমাবদ্ধতার কারণে কিছুদিন পূর্বেও
মানুষ যে সমস্ত তথ্য সম্পর্কে
বিভ্রান্তিতে ছিল, জ্ঞান সাধনার
ফলে তার অনেকটাই আজ সত্যের
আলোতে উদ্ভাসিত হয়েছে। তবে এখনও
এমন কিছু তথ্য রয়েছে, যার প্রকৃত অর্থ
অনুধাবনের জন্য আরও উন্নততর চিন্তা-
ভাবনা ও গবেষণার যথেষ্ট প্রয়োজন
রয়েছে। এভাবেই পবিত্র কোরআনে
উল্লেখিত বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক
তথ্যাদি যুগ যুগ ধরে মানুষকে
সঠিকভাবে জ্ঞানবিজ্ঞান সাধনার
প্রতি উৎসাহিত করে আসছে। পবিত্র
কোরআনে উল্লেখিত বৈজ্ঞানিক
তথ্যসমৃদ্ধ আয়াতগুলোর মধ্য থেকে
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি বিষয়ক
কয়েকটি উল্লেখযোগ্য আয়াতের
বাংলা আনুবাদ এই আলোচনার
বিভিন্ন পর্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
সেইসাথে মহাবিশ্ব সম্পর্কে বর্তমান
যুগের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও ধ্যান-
ধারণা (স্টিফেন ডব্লু হকিং-এর সাড়া
জাগানো গবেষণা-ধর্মী (A Brief History
of Time) এবং (Blackhole And Baby Universes
And Other Essays) শত্রুজিত দাশগুপ্ত- কর্তৃক
বাংলায় অনুবাদকৃত (কালের সংক্ষিপ্ত
ইতিহাস) ও (কৃষ্ণগহ্বর এবং শিশু-মহাবিশ্ব
ও অন্যান্য রচনা) নামক পুস্তক দুটি থেকে
সংগৃহিত ) এবং পবিত্র কোরআনে মহান
আল্লাহ্ প্রদত্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য ও
ইংগিতের সাথে সমন্বয় সৃষ্টির সাথে
সাথে আমার নিজস্ব কিছু
বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তা-ভাবনার
বহিঃপ্রকাশই এই আলোচনার মূল
বিষয়বস্তু। প্রকৃত খবর মহাজ্ঞানী মহান
আল্লাহতায়ালাই ভাল জানেন। মানুষ
মাত্রই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, সুতরাং আমার
এই চিন্তা-ভাবনার মাঝে অক্ষমতা
হেতু অনিচ্ছাকৃত ভুল-ভ্রান্তি ঘটে
যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। তাই দয়াময়
আল্লাহতায়ালার কাছে সব সময় এই
প্রার্থণা জানাই, তিনি যেন তার এই
অধম বান্দাকে সর্বপ্রকার অনিচ্ছাকৃত
ভুল-ভ্রান্তির জন্য ক্ষমা করেন।
আলোচনার সূচনায় কয়েকটি সূরার
ক্রমিক নম্বর এবং আয়াত সংখ্যা
উল্লেখপূর্বক বাংলা অনুবাদ প্রদত্ত
হলো-
(৫৯ : ২৩) হুয়াল্লা হুল্লাজি লা ইলাহা
ইল্লা হুয়া আল মালিকুল্ কুদ্দুসুস্ সালামুল
মুমিনুল মুহাইমিনুল আজিজুল জাব্বারুল
মুতাকাব্বির সুবহানাল্লাহি আম্মা
ইউশরিকুন। (৫৯ : ২৩) অর্থ- তিনিই আল্লাহ,
যিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই,
যিনি বাদশাহ, পবিত্র, নির্দোষ,
ক্ষমাকারী, রক্ষক, পরাক্রমশালী.
সংশোধক, মহান; অবিশ্বাসীগণ কর্তৃক
বর্নীত অংশীদারদের থেকে আল্লাহ
পবিত্র, মহান। (59 : 23) He is Allah, besides
Whom none is to be worshipped the Sovereign,
the most Holy, the Source of peace, the Giver of
Security, the Protector, the Esteemed one, the
Exalted the Majestic. Glory is to Allah from what
they associate.
(৫৯ : ২৪) হুওয়াল্লা-হুল খা-লিক্বুল বা-
রিউল মুছাব্বিরু লাহুল আছমা – উল হুছনা;
ইয়ুছাব্বিহু লাহূ মা- ফিছছামা- ওয়া-
তি ওয়াল আরদ্ব, ওয়া হুওয়াল আযীযুল
হাকীম। (৫৯ : ২৪) অর্থ- তিনিই আল্লাহ্,
যিনি সৃষ্টির পরিকল্পনাকারী, এর
বাস্তবায়নকারী -সেই অনুযায়ী
রূপদানকারী, সকল উত্তম নাম তাঁরই।
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু
আছে সবই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা
ঘোষণা করে। তিনি মহাপরাক্রমশালী,
প্রজ্ঞাময়। (59 : 24) He is Allah, the Makers the
Creator, the Evolver, the Bestower of form to
everyone. His are all good names; all that is in
the spaces and the earth glorifies Him: and He is
the Esteemed One the Wise.
(০২ : ১১৬) অর্থ- এবং তারা বলে,
আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। তিনি
অতি পবিত্র, বরং আকাশমন্ডলী ও
পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব আল্লাহরই,
সব কিছু তাঁরই একান্ত অনুগত। (02 : 116) And
they say ‘Allah has taken unto Himself a son’,
sanctity is for Him. Nay, whatever is in the
spaces and is in the earth is His possession. All
are unto Him subservient.
(০২ : ১১৭) অর্থ- যিনি আকাশমন্ডলী ও
পৃথিবীকে অনস্তিত্ব হতে অস্তিত্বে
আনায়ন করেন এবং যখন তিনি কিছু
করবার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন শুধু
বলেন হও, আর তা হয়ে যায়। (2 : 117) He is
the Originator of existence of the spaces and the
earth from emptiness, and when He decrees any
thing, then says to it only, “Be, and it becomes at
once.
(১০ : ৩) অর্থ:- তোমাদের প্রতিপালক
আল্লাহ, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী
ছয় দিনে সৃষ্টি করেন, অতঃপর তিনি
আরশে সমাসীন হন। তিনি সকল বিষয়
নিয়ন্ত্রণ করেন। (10 : 3) No doubt, your Lord
is Allah Who made the spaces and earth in six
days, then seated Himself on the Throne befitting
to His Dignity, He plans the work. No intercessor
is there but after His leave. This is Allah your
Lord, and then worships Him. Do you then not
ponder?
(২১ : ৩০) অর্থ:- যারা কুফরী করে তারা
কি ভেবে দেখে না যে আকাশমন্ডলী
ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে;
অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম
এবং প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম
পানি হতে, তবুও কি তারা বিশ্বাস
করবে না? (21 : 30) Did the infidels not
consider that the spaces and earth were closed
up through and though, then We opened them
out? And We made every made living thing from
water. Will they then believe?
(২৪ : ৩৫) অর্থ-আল্লাহ্ আকাশমন্ডলী ও
পৃথিবীর জ্যোতি…জ্যোতির উপর
জ্যোতি (24 : 35) Allah is the Light of the
spaces and the earth. The similitude of His Light
is as a niche wherein is a lamp. The lamp is in a
chandelier (of glass). The chandelier is as it were
a star glittering like a pearl; it is lighted from the
blessed olive tree which is neither of east nor of
west, it is near that its oil may flare up even
though the fire touches it not. The Light is upon
the Light. Allah guides to His Light whomsoever
He will and Allah narrates examples for the
people. And Allah knows all things
(২৯ : ১৯) অর্থ- ওরা কি লক্ষ করেনা,
কিভাবে আল্লাহ সৃষ্টিকে অস্তিত্ব
দান করেন, অতঃপর তা পূনরায় সৃষ্টি
করেন? নিশ্চয়ই এটা আল্লাহর জন্য সহজ।
(29 : 19) And have they not seen, how Allah
originates creation, then He will reproduce it?
Undoubtedly, it is easy for Allah.
(২৯ : ২০) অর্থ:- বল, পৃথিবীতে পরিভ্রমণ
কর এবং অনুধাবন কর কিভাবে তিনি
সৃষ্টিকে আরম্ভ করেছেন? অতঃপর
আল্লাহ্ পুনর্বার সৃষ্টি করবেন।
নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে
সর্বশক্তিমান। (29 : 20) Say you, ‘travel in the
earth, then see, how Allah makes first, then Allah
up brings the second growth. Undoubtedly Allah
can do everything.
(৫০ : ৩৮) অর্থ- আমরা আকাশমন্ডলী ও
পৃথিবী এবং তাদের অন্তর্বর্তী সমস্ত
কিছু সৃষ্টি করেছি ছয় দিনে,
আমাদেরকে “কোন ক্লান্তি স্পর্শ করে
নাই।” (50 : 38) Surely, We made the spaces and
the earth and what ever is in between in six days
and weariness came not to Us.
আলোচনা
এই আয়াতগুলো থেকে এই ইঙ্গিত
পাওয়া যায় যে পরাক্রমশালী
প্রজ্ঞাময় (২৯:২০) সর্ববিষয়ে
সর্বশক্তিমান এক আল্লাহতায়ালা তাঁর
ইচ্ছায় এক মহাশক্তির (২৪:৩৫)- (জ্যোতির
উপর জ্যোতি শক্তির) প্রভাবে কোন এক
অজ্ঞাত সময়ে আকাশমন্ডলী ও
পৃথিবীকে (২:১১৭) অনস্তিত্ব থেকে
অস্তিত্বে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেন।
সুতরাং প্রতীয়মান হয় যে, সৃষ্টিকে
অস্তিত্ব দানের পূর্বে (২:১১৬)
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী আল্লাহর অসীম
শক্তির মাঝে বিলীন ছিল। আল্লাহর
ইচ্ছায় (১০:৩) নিয়ন্ত্রিতভাবে এই
শক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সৃষ্টির শুরুতে
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী
(২১:৩০) ওতপ্রোতভাবে একত্রিত অবস্থায়
ও একই রূপে বিরাজ করছিল। একদা মহান
স্রষ্টা যখন সৃষ্টিকে প্রকাশের ইচ্ছা
করেন তথন থেকেই সৃষ্টিকালীন-দিনের
সূচনা ঘটে। পরবর্তীতে (৫০:৩৮)
পর্যায়ক্রমে ছয়দিনে [এখানে ছয়দিন
বলতে সুনির্দিষ্ট ও সুনিয়ন্ত্রিত অতি
ক্ষুদ্র অথবা অতি বৃহৎ অথবা অতি ক্ষুদ্র ও
অতি বৃহৎ ছয়টি পর্যায়ক্রমিক
সৃষ্টিকালীন সময়কালের সমাহার বুঝতে
হবে।] বিভিন্ন পরিবর্তন ও প্রক্রিয়ার
মধ্য দিয়ে আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং
এদের মধ্যে অবস্থিত দৃশ্য ও অদৃশ্য সমস্ত
কিছু সৃষ্টির বিষয়ে পূর্ণতা দান করেন।
এরপর থেকে (২৯:১৯) আল্লাহতায়ালার
ইচ্ছায় ও নিয়ন্ত্রণে সৃষ্টিকালীন
ছয়দিনে সৃষ্ট অদৃশ্য বিষয়সমূহ দৃশ্য অবস্থায়
এবং দৃশ্য বিষয় সমূহ অদৃশ্য অবস্থায়
রূপান্তরিত হচ্ছে অথবা নব নব অবস্থায়
পরিগঠিত হচ্ছে মাত্র।
সৃষ্টিকালীন ছয়-দিন এর বিষয়ে
পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন
আয়াতসমূহে প্রদত্ত ইংগিতের
সাথে মিল রেখে বর্তমান
কালের অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক
তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনাঃ
সৃষ্টিকালীন ১ম-দিন (১ম-ইওম বা
নির্দিষ্ট সময়):
(১১ : ৭) অর্থ- আল্লাহ্ ছয় দিবসে
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন, তখন
তাঁর আরশ (নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ) পানির
( তরলিত অবস্থার ) উপর ( নিবদ্ধ ) ছিল।
(11 : 7) And it is He who has created the spaces
and earth in six days, then His Throne(control
system) was (fixed) on the water (liquefied state)
(৫১ :৪৭) অর্থ- এবং আমরা আকাশ
নির্মাণ করেছি ক্ষমতাবলে এবং
আমরা অবশ্যই মহাসমপ্রসারণকারী। (51 :
47) And We have made the space with own
power, and undoubtedly We are Makers of the
vast expansion.
সৃষ্টি সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক মতবাদঃ
সৃষ্টির শুরুতে মহাবিশ্ব যখন উত্তর মেরুর
মতো একক বিন্দু ছিল তখন এর কোন
অন্তর্বস্তু ছিল না। আক্ষরিক অর্থে
সৃষ্টির শুরু হয়েছিল শুন্যতা থেকে। কিন্তু
এখন মহাবিশ্বের যে অংশ আমরা
পর্যবেক্ষণ করি তাতে রয়েছে অন্তত ১০
কে ১০ দিয়ে ৮০ বার গুণ করলে যত হয় তত
সংখ্যক কনিকা। এই সমস্ত কনিকা এল
কোথা থেকে? উত্তরটা হল: অপেক্ষবাদ
এবং কণাবাদী বলবিদ্যা শক্তি থেকে
বস্তু সৃষ্টি অনুমোদন করে। Until recently, the
first hundredth of a second after the Big Bang
was a mystery, leaving Weinberg and others
unable to describe exactly what the universe
would have been like during this period. New
experiments at the Relativistic Heavy Ion Collider
in Brookhaven National Laboratory have provided
physicists with a glimpse through this curtain of
high energy, so they can directly observe the
sorts of behavior that might have been taking
place in this time frame. At these energies, the
Quark that comprise Proton and Neutron (ups and
downs) were not yet joined together, and a dense,
superhot mix of quarks and Gluon with some
electrons thrown in, was all that could exist in the
microseconds before it cooled enough to form
into the sort of matter particles we observe
today. During the earliest era of the big bang
theory, the universe is believed to have formed a
hot, dense Plasma.
পৃথিবী যদি অপবর্জন নীতি (Poulis
exclusion principle)ছাড়া সৃষ্টি হত তা হলে
কার্কগুলি বিচ্ছিন্ন ও সুসংজ্ঞিত
পরমাণু গঠন করতে পারত না। তারা
সবাই চুপসে মোটামুটি একরকম ঘন একটি
সুপ তৈরী করত। বলবাহী মৌল
কণিকাগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম হল,
তারা অপবর্জন নীতি (Exclusion principle)
মানে না। [সূত্রঃ কৃষ্ণগহ্বর এবং শিশু
মহাবিশ্ব ও অন্যান্য রচনা- অধ্যায়-৯ –
মহাবিশ্বের উৎপত্তি)। কালের
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস- অধ্যায়-৫-মৌলকণা
ও প্রাকৃতিক বল]
আলোচনা
বিজ্ঞানের মতে সৃষ্টির শুরুতে এই
মহাবিশ্ব ক্ষুদ্র একক বিন্দুর মত ছিল এবং
কোন অন্তর্বস্তু ছিল না, অর্থাৎ সৃষ্টির শুরু
হয়েছিল শুন্যতা বা অনস্তিত্ব থেকে।
(২:১১৬), (২:১১৭) ও (২০:৩০) ইত্যাদি
আয়াতগুলো পর্যালোচনা করলে এই
ইংগিত পাওয়া যায় যে, আকাশমন্ডলী
ও পৃথিবী এবং এর মাঝে যা কিছু আছে
সবই সর্বশক্তিমান আল্লহতায়ালার অসীম
শক্তির মাঝে বিলীন ছিল এবং তাঁরই
একান্ত অনুগত ছিল। (৫১:৪৭) নং আয়াতে
দেয়া তথ্য অনুসারে যেহেতু সকল শক্তির
আধার আল্লাহ মহান স্রষ্টা, সুতরাং
শক্তি থেকেই যে সৃষ্টির শুরু হয়েছিল
তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর
বিজ্ঞানও অর্থাৎ অপেক্ষবাদ এবং
কণাবাদী বলবিদ্যা শক্তি থেকে বস্তু
সৃষ্টি অনুমোদন করে। মহান
আল্লহতায়ালা যখন সৃষ্টিকে অস্তিত্বে
আনার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তখন থেকেই
অর্থাৎ সেই অসীম শুন্যতা বা অনস্তিত্ব
(২:১১৭) বা বস্তুহীন পরিবেশে কোন এক
অজ্ঞাত ক্ষণে সৃষ্টিকালীন সময়ের ( ১ম
ইওম বা দিনের) সূচনা ঘটে। (৫১:৪৭) নং
আয়াতে সামা- আ বলতে সম্ভবত এমন এক
আকাশকে বোঝান হয়েছে যে আকাশ
শুধুমাত্র বলবাহী মৌল-কণিকা দ্বারা
ভরপুর ছিল এবং ডাইমেনশন বা
মাত্রাগত পার্থক্য না থাকায় সেই
আদি একক আকাশে কোন স্তর-ভেদ ছিল
না। ফলে সপ্ত-আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির
আদি পর্যায়ে একক আকাশ রূপে একে
অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে
ছিল। পরবর্তীতে মহান
আল্লাহতায়ালা তাঁর অসীম
ক্ষমতাবলে সেই একক আকাশকে
মহাসমপ্রসারীত করেন এবং ডাইমেনশন
বা মাত্রাগত ছকে সাজিয়ে পৃথিবী ও
সপ্ত-আকাশমন্ডলী সৃষ্টি করেন। আমরা
হয়ত সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনার ক্ষণটি
অর্থাৎ ভরবাহী মৌল কণিকা গঠনের
ক্ষণটিকে সঠিকভাবে খুঁজে পাবার
সামর্থ রাখি। কিন্তু মহাবিশ্ব সৃষ্টির
ক্ষেত্রে বস্তুহীনতা বা অনস্তিত্ব বা
চরম শুন্যতার একটা পর্যায় ছিল এবং সেই
অসীম শুন্যতায় শুধু অসীম শক্তি
বিরাজমান ছিল। এভাবে যে কতটা সময়
অতিবাহিত হয়েছে তা সঠিকভাবে
নিরুপণ করা কখনই সম্ভব নয়। কারন
আমাদের জীবন ও পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা
স্থান ও কালের যে মাত্রা বা
ডাইমেনশনের বেড়াজালে আবদ্ধ,
সৃষ্টিকালীন আদি বা প্রাথমিক
পর্যায়টি ছিল সেই মাত্রা বা
ডাইমেনশন বহির্ভূত ঘটনা। কারণ তখন
স্থানের কোন অস্তিত্ব ছিল না।
সুতরাং মহাবিশ্ব সৃষ্টির আদি পর্যায়ের
ঘটনাচক্র ও আদি কাল বা সৃষ্টি শুরুর সময়
সম্পর্কে আমরা অনুভবের আলোকে
কিছুটা ব্যাখ্যা করতে পারলেও
পূংখানুপূংখভাবে বিশ্লেষণ করা
সত্যিই অসম্ভব। উপরের আলোচনা থেকে
বুঝে নেয়া যায় যে, সৃষ্টিকে
অস্তিত্বে আনার ইচ্ছা থেকে কোন এক
অজ্ঞাত সময়ে সৃষ্টিকালীন ১ম-ইওম বা
দিনের সূচনা ঘটে এবং তখন
আল্লাহতায়ালার ইচ্ছায় একটি
নির্দিষ্ট পরিমাণ মহাশক্তি অর্থাৎ
(২৪:৩৫) জ্যোতির উপর জ্যোতি সম্ভবত
প্রচন্ডতম তাপশক্তি একটি নির্দিষ্ট
সময়কাল ব্যাপী প্রয়োগের ফলে
বিভিন্ন পরিবর্তন ও প্রক্রিয়ার মধ্য
দিয়ে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির
জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ বলবাহি মৌল
কণিকাগুলো ( গ্লুয়ন, ফোটন ইত্যাদি )
(২:১১৬) সম্মিলিতভাবে ঘনিভূত ও
তরলিত শক্তিরূপে বিরাজ করছিল।
বিজ্ঞানের বর্ণনায় আমরা দেখেছি
যে, বলবাহী মৌল কণিকাগুলো অপবর্জন
নীতি (Exclusion principle) মানে না। আর
যে কণিকাগুলো অপবর্জন নীতি মানে
না তারা সবাই চুপসে মোটামুটি একরকম
ঘন একটি স্যুপ (Soup = hot, dense plasma)
তৈরী করে। সুতরাং সৃষ্টিকালীন
প্রাথমিক পর্যায়ে কল্পিত বলবাহী
মৌল কণিকাগুলো অপবর্জন নীতি
বিবর্জিত অবস্থায় উত্তপ্ত, ঘনিভূত ও
তরলিত (hot, dense plasma) শক্তিরূপে
একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ ছিল
এবং তখন (১১:৭) সর্বশক্তিমান মহান
আল্লাহতায়ালার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
(আরশ) সেই স্যুপ অর্থাৎ উত্তপ্ত, ঘনিভূত ও
তরলিত গন্ডিবদ্ধ শক্তির (পানির) উপর
নিবদ্ধ ছিল।</strong> এভাবে একটি
নির্দিষ্ট সময় ( অতি ক্ষুদ্র বা বৃহৎ কাল )
অতিবাহিত হবার ফলে [ দুর্বল
কেন্দ্রকীয় বলের (Weak neuclear force) উদ্ভব
হবার পূর্বে ] বলবাহী মৌল
কণিকাসমূহের মধ্যে পারস্পরিক
অভিক্রিয়া শুরু হয় এবং ১ম-ইওম বা
দিনের সমাপ্তি ঘটে।

সুত্রঃ ইন্টারনেট

0 comments:

Post a Comment