ময়মনসিংহ জেলা বাংলাদেশের
মধ্যাঞ্চলের ময়মনসিংহ বিভাগের
একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। ময়মনসিংহ
জেলা মৈমনসিংহ গীতিকা , মহুয়া,
মলুয়া, দেওয়ানা মদীনা, চন্দ্রাবতী,
কবিকঙ্ক, দীনেশচন্দ্র সেনের জন্য
বিখ্যাত।
ভৌগোলিক সীমানা
ময়মনসিংহ জেলার উত্তরে ভারতের
মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে গাজীপুর
জেলা, পূর্বে নেত্রকোনা ও
কিশোরগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে
শেরপুর , জামালপুর ও টাঙ্গাইল জেলা
অবস্থিত।
প্রশাসনিক এলাকাসমূহ
ময়মনসিংহ জেলার অভ্যন্তরীণ
মানচিত্র
ময়মনসিংহ জেলা মোট ১৩ টি
উপজেলা নিয়ে গঠিত। এগুলো হল
ময়মনসিংহ সদর উপজেলা
ত্রিশাল উপজেলা
গৌরীপুর উপজেলা
মুক্তাগাছা উপজেলা
ফুলপুর উপজেলা
হালুয়াঘাট উপজেলা
ভালুকা উপজেলা
ফুলবাড়িয়া উপজেলা
গফরগাঁও উপজেলা
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা
নান্দাইল উপজেলা
ধোবাউড়া উপজেলা
তারাকান্দা উপজেলা
নামকরণ
মোগল আমলে মোমেনশাহ নামে
একজন সাধক ছিলেন, তাঁর নামেই
মধ্যযুগে অঞ্চলটির নাম হয়
মোমেনশাহী। ষোড়শ শতাব্দীতে
বাংলার স্বাধীন সুলতান সৈয়দ
আলাউদ্দিন হোসেন শাহ তাঁর পুত্র
সৈয়দ নাসির উদ্দিন নসরত শাহ'র জন্য এ
অঞ্চলে একটি নতুন রাজ্য গঠন
করেছিলেন, সেই থেকেই নসরতশাহী
বা নাসিরাবাদ নামের সৃষ্টি।
নাসিরাবাদ নাম পরিবর্তন হয়ে
ময়মনসিংহ হয় একটি ভুলের কারণে।
বিশ টিন কেরোসিন বুক করা
হয়েছিল বর্জনলাল এন্ড কোম্পানীর
পক্ষ থেকে নাসিরাবাদ রেল
স্টেশনে। এই মাল চলে যায়
রাজপুতনার নাসিরাবাদ রেল
স্টেশনে। এ নিয়ে অনেক দুর্ভোগ
পোহাতে হয়। পরবর্তীতে আরো কিছু
বিভ্রান্তি ঘটায় রেলওয়ে
স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে
ময়মনসিংহ রাখা হয়। সেই থেকে
নাসিরাবাদের পরিবর্তে
ময়মনসিংহ ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
ইতিহাস
মূল নিবন্ধ: ময়মনসিংহের ইতিহাস
ময়মনসিংহ বাংলাদেশের একটি
পুরোনো জেলা। ইস্ট ইন্ডিয়া
কোম্পানি র শাসনামলে রাজস্ব
আদায়, প্রশাসনিক সুবিধা বৃদ্ধি এবং
বিশেষ করে স্থানীয় বিদ্রোহ দমনের
জন্য এই জেলা গঠন করা হয়। ১৭৮৭
সালের মে ১ তারিখে এই জেলা
প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে এখনকার
বেগুনবাড়ির কোম্পানিকুঠিতে
জেলার কাজ শুরু হয় তবে পরবর্তী
সময়ে সেহড়া মৌজায় ১৭৯১ সালে
তা স্থানান্তরিত হয়। আদি
ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন স্থান
একে একে সিলেট, ঢাকা, রংপুর ও
পাবনা জেলার অংশ হয়ে পড়ে।
১৮৪৫ সালে জামালপুর, ১৮৬০ সালে
কিশোরগঞ্জ, ১৮৬৯ সালে টাঙ্গাইল
ও ১৮৮২ সালে নেত্রকোনা মহকুমা
গঠন করা হয়। পরে সবকটি মহকুমা
জেলায় উন্নীত হয়। ময়মনসিংহ শহর হয়
১৮১১ সালে। শহরের জন্য জায়গা দেন
মুক্তাগাছার জমিদার রঘুনন্দন আচার্য।
১৮৮৪ সালে রাস্তায় প্রথম
কেরোসিনের বাতি জ্বালানো হয়।
১৮৮৬ সালে ঢাকা-ময়মনসিংহ
রেলপথ ও ১৮৮৭ সালে জেলা বোর্ড
গঠন করা হয়।
কৃতি ব্যক্তিত্ব
কানাহরি দত্ত (১২ - ১৩ শতক)
ছিলেন মনসামঙ্গল কাব্যের আদি
কবি। তাঁর জন্ম নান্দাইল উপজেলার
সিংরৈল দত্তবাড়িতে।
করম শাহ বা 'ফকির করম শা (? - ১৮১৩ )
ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি -
বিরোধী আন্দোলনের একজন
ব্যক্তিত্ব।
হেমেন্দ্রমোহন বসু (জন্ম: ১৮৬৬ - মৃত্যূ:
২৮ আগস্ট ১৯১৬ ) একজন বাঙালি
ব্যবসায়ী।
হেমেন্দ্রকিশোর আচার্য চৌধুরী
( ২৮ মে , ১৮৮১ - জুন , ১৯৩৮ ) ছিলেন
ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ
বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের
একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং
অগ্নিযুগের বিপ্লবী।
মুজিবুর রহমান খান ফুলপুরী ( ১৮৮৯ - ৫
জানুয়ারি ১৯৬৯ ) ছিলেন
ময়মনসিংহের একজন সাংবাদিক ও
রাজনৈতিক কর্মী।
চন্দ্রকুমার দে ( ১৮৮৯ - ১৯৪৬ ) একজন
লেখক এবং পূর্ব বাংলার
ময়মনসিংহে প্রচলিত লোকগীতির
সুবিখ্যাত সংগ্রাহক।
আনন্দকিশোর মজুমদার ( ১৮৯২ - ১৯৪০ )
ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের
ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা
আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব।
সুরেন্দ্রমোহন ঘোষ ( ২২ এপ্রিল, ১৮৯৩
- ৭ সেপ্টেম্বর , ১৯৭৬ ) ছিলেন
ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ
বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের
একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব।
শ্রী অনির্বাণ বা নরেন্দ্রচন্দ্র ধর
(১৮৯৬ - ১৯৭৮) বিংশ শতাব্দীর একজন
পণ্ডিত সন্ন্যাসী।
আবুল কালাম শামসুদ্দীন (নভেম্বর ৩,
১৮৯৭ - ১৯৭৮) ছিলেন একধারে একজন
সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং
ভাষাবিদ।
আবুল মনসুর আহমেদ (১৮৯৮- ১৮ মার্চ,
১৯৭৯) একজন বাংলাদেশী
সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ এবং
সাংবাদিক।
নরেশ রায় (? - ২২ এপ্রিল, ১৯৩০ )
ছিলেন ভারত উপমহাদেশের ব্রিটিশ
বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের
একজন ব্যক্তিত্ব এবং চট্টগ্রাম
অস্ত্রাগার লুন্ঠনের একজন বিপ্লবী।
হরুবালা রায় ( ? - ৪ মে ১৯৪৪ )
ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের
ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা
আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও
অগ্নিযুগের বিপ্লবী।
মতিলাল পুরকায়স্থ (বিশ শতক)
ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের
ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা
আন্দোলনের একজন অগ্নিযুগের
বিপ্লবী ও রাজনীতিবিদ।
ভূপেন্দ্রকিশোর রক্ষিত রায়, (বিশ
শতক) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের
ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা
আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব।
প্রতুল ভট্টাচার্য বা প্রতুলচন্দ্র
ভট্টাচার্য (১৬ জানুয়ারি, ১৯০০ - ২৯
আগস্ট, ১৯৭৮) ছিলেন ভারতীয়
উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী
স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম
ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী।
হরসুন্দর চক্রবর্তী (১৯০৫ - ২১ মে, ১৯৭৩)
ছিলেনভারতীয় উপমহাদেশের
ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা
আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব
এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী।
বিনোদচন্দ্র চক্রবর্তী (১৯০৯ - ২৫
এপ্রিল, ১৯৭৩) ছিলেন ভারতীয়
উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী
স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম
ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী।
জয়নুল আবেদীন (২৯ ডিসেম্বর, ১৯১৪
- ২৮ মে, ১৯৭৬) বাংলাদেশের
বিখ্যাত চিত্রশিল্পী।
আফম আহসানউদ্দিন চৌধুরী (১৯১৫ -
আগস্ট ৩০, ২০০১) বাংলাদেশের একজন
সাবেক রাষ্ট্রপতি।
আবদুল জব্বার (১৯১৯ - ২১শে
ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২) ভাষা
আন্দোলনের অন্যতম শহীদ।
কানাইলাল নিয়োগী (১৯২৪ - ১৯
মে ১৯৬১) ১৯৬১ সালে ভারতের বরাক
উপত্যাকায় বাংলা ভাষা
আন্দোলনে নিহত ব্যক্তি।
বিলায়েত খাঁ (৮ই আগস্ট, ১৯২৮ - ১৩ই
মার্চ, ২০০৪) বিখ্যাত বাঙালি
সেতার বাদক।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ( নভেম্বর ২ ,
১৯৩৫ ) বিখ্যাত বাংলা ঔপন্যাসিক।
শামীম আজাদ (জন্ম: ১১ নভেম্বর,
১৯৫২) একজন নামকরা বাংলাদেশী
কবি ও সাহিত্যিক।
তসলিমা নাসরিন (জন্ম: ২৫ আগস্ট
১৯৬২) বাংলাদেশের একজন
সাহিত্যিক ও চিকিৎসক।
মোহাম্মদ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ( জন্ম:
৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৬ ) একজন
বাংলাদেশী ক্রিকেটার ।
দর্শনীয় স্থান
ময়মনসিংহ সদরে আলেকজান্ডার
ক্যাসেল, জয়নুল আবেদীন
সংগ্রহশালা, সার্কিট হাউজ,
সিলভার প্যালেস, বিপিন পার্ক,
রামগোপালপুর জমিদার বাড়ি,
বোটানিক্যাল গার্ডেন, চীন-
বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু,
ময়মনসিংহ টাউনহল, দুর্গাবাড়ী,
ব্রহ্মপুত্র নদ, কাশবন, গৌরীপুর
রাজবাড়ী, মুক্তাগাছার রাজবাড়ী,
কেল্লা তাজপুর,নিজাম উদ্দিন
আওলিয়ার মাজার, হাজী ছাবেদ
আলী ফকির (আবু ফহির) এর বাড়ী
ইত্যাদি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ,
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম
বিশ্ববিদ্যালয় , ময়মনসিংহ
মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, আনন্দমোহন
বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, শহীদ সৈয়দ
নজরুল ইসলাম কলেজ, মুমিনুন্নিসা
সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ
গার্লস ক্যাডেট কলেজ, গৌরীপুর
সরকারি কলেজ, গভঃ কমার্শিয়াল
ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহ, নটর ডেম
কলেজ, ময়মনসিংহ , ময়মনসিংহ জিলা
স্কুল , বিদ্যাময়ী সরকারী বালিকা
উচ্চ বিদ্যালয় , ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক
স্কুল ও কলেজ, মোমেনশাহী, পুুলিশ
লাইন উচ্চ বিদ্যালয়, রাজেন্দ্র
কিশোর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়,
গৌরীপুর , ময়মনসিংহ ল্যাবরেটরি উচ্চ
বিদ্যালয়, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি
স্কুল, নাসিরাবাদ কলেজিয়েট স্কুল,
ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ,
নান্দাইল চণ্ডীপাশা সরকারি উচ্চ
বিদ্যালয় প্রভৃতি এখানকার
উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
সুত্রঃ ইন্টারনেট
0 comments:
Post a Comment