ধূমপান করা ( ﺍَﻟﺘَّﺪْﺧِﻴْﻦُ )
(মুফতী শায়খ মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-
উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)
প্রশ্নঃ সম্মানিত শায়খের কাছে
আমার জিজ্ঞাসা যে- ধূমপান ও হুক্কা
টানা সম্পর্কে ইসলামী বিধান কী? এ
ব্যাপারে কুরআন ও হাদীস থেকে কোন
দলীল-প্রমাণ আছে কি?
উত্তরঃ ধূমপান করা হারাম। অনুরূপভাবে
হুক্কা টানাও হারাম। ধূমপান হারাম
হওয়ার দলীল সমূহ নিম্নে বর্ণনা করা
হলোঃ- ১. মহান আল্লাহ্ বলেন,
ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮْﺍ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻜُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﺑِﻜُﻢْ ﺭَﺣِﻴْﻤًﺎ (ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ২৯)
অর্থাঃ “তোমরা তোমাদের নাফসকে
হত্যা করোনা। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্
তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু” (সূরা
নিসাঃ ২৯)। ২. আল্লাহ্ তা’আলা
আরো বলেন,
ﻭَﻻَ ﺗُﻠْﻘُﻮْﺍ ﺑِِﺄَﻳْﺪِﻳْﻜُﻢْ ﺇِِﻟَﻰ ﺍﻟﺘَّﻬْﻠُﻜَﺔِ (ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ১৯৫)
অর্থাৎ “তোমরা নিজ হাতে নিজেকে
ধ্বংসে পতিত করোনা”(সূরা
বাক্বারাহ, ১৯৫)। চিকিৎসাশাস্ত্র
প্রমাণ করেছে যে, ধূমপান একটি
ক্ষতিকর বস্তু। আর যে সকল বস্তু স্বাস্থ্যের
জন্যে ক্ষতিকর, ইসলামী বিধান তাকে
হারাম করেছে। যেমন আল্লাহ্
তা‘আলা বলেন,
{ ﻭَﻻَ ﺗُﺆْﺗُﻮْﺍ ﺍﻟﺴُّﻔَﻬَﺎﺀَ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻜُﻢُ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﺟَﻌَﻞَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻟَﻜُﻢْ ﻗِِﻴَﺎﻣًﺎ {
(ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ :৫)
অর্থাৎ “তোমরা তোমাদের সম্পদ
নির্বোধদেরকে প্রদান করোনা। যে
সম্পদকে আল্লাহ্ পাক তোমাদের জীবন-
যাত্রার অবলম্বন করেছেন”(সূরা
নিসাঃ ৫)।
উপরোক্ত আয়াতে ধূমপায়ী
নির্বোধদেরকে আমাদের সম্পদ
থেকে প্রদান করতে নিষেধ করা
হয়েছে। কেননা তারা সম্পদের অপচয়
করবে, আর বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। তাহলে
নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে,
হুক্কা টানায় ও ধূমপানে সম্পদের অপচয়
হয়। আর অত্র আয়াত অপচয়, অপব্যয় ও বিপর্যয়
সৃষ্টি না করার প্রমাণ বহন করে।
এছাড়াও রাসূলুল্লা-হ (ছাল্লাল্লা-হু
আলাইহি অ-সাল্লাম) সম্পদ বিনষ্ট করতে
নিষেধ করেছেন। ধূমপানে সম্পদের
অপচয় ও অপব্যয় হয়। আর এ অপব্যয়ই হচ্ছে সম্পদ
বিনষ্ট করা। রাসূলুল্লা-হ (ছাল্লাল্লা-
হু আলাইহি অ-সাল্লাম) বলেছেন,
“ ﻻَﺿَﺮَﺭَ ﻭَﻻَﺿِِﺮَﺍﺭَ ”
অর্থা “তোমরা নিজেদের ক্ষতিসাধন
করোনা এবং অপরের ক্ষতি সাধনও
করোনা”। ধূমপান এমনই এক বিষয় যা
গ্রহণের কারণে নিজের ক্ষতির সাথে
সাথেই পার্শ্ববর্তী মানুষের কষ্টের
কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া ধূমপায়ী
ধূমপানের মাধ্যমে সম্পদ হারিয়ে
নিজেকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়
এবং নিঃস্ব অবস্থায় দুনিয়াতে বসবাস
করে। অতএব যে নিজেকে ধূমপানে
অভ্যস্ত করলো, সে ধনবান থেকে
নিঃস্বে পরিণত হলো। (মুফতী শায়খ
মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উসাইমীন
রাহিঃ)
ধূমপানের অপকারিতা সম্পর্কে
আমরা যা জানি
১- ধূমপান একটি অপবিত্র, দুর্গন্ধময় ও
ক্ষতিকারক বস্তু।
২- ধূমপান ক্যান্সার, যক্ষ্মা প্রভৃতির মত
ধ্বংসাÍক রোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ।
৩- ধূমপায়ী স্বয়ং নিজের নাফসকে
ধ্বংস করে দেয়।
৪- ধূমপান নিজের ক্ষতির সাথে-সাথে
পার্শ্ববর্তী লোকেরও কষ্টের কারণ
হয়ে দাঁড়ায়।
৫- ধূমপান করার অর্থই হচ্ছে নেশাদার
বা হারাম জিনিষ খেয়ে মহান
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী
করা, ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের নাফসকে
বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে
সহযোগিতা করা আর অর্থের অপচয় করা।
এ সমস্ত কাজের প্রত্যেকটাই শয়তানী
কাজের অন্তর্ভুক্ত।
৬- ধূমপানকারী নিজে প্রকাশ্যভাবে
গোনাহ করে থাকে আর সে এ গুনাহের
কাজের বিস্তার ঘটিয়ে থাকে।
সেহেতু ধূমপানের গোনাহ বড় ধরনের
গোনাহ। অতএব ধূমপানকারীকে
অতিশীঘ্রই তাওবা করা উচিত।
৭- ধূমপানকারী সম্পদ ধ্বংসকারী ,
যাকে আল্লাহ্ মোটেই পছন্দ করেন না।
৮- ধূমপান মানুষের হৃদযন্ত্রকে অকেজো
করে ফেলে। আর শরীরের শক্তিকে
দুর্বল করে দেয়।
৯- এর দ্বারা দাঁতগুলো হলুদ হয়ে যায়,
ঠোঁট দুটি কালো হয়ে যায়, চেহারার
লাবন্য নষ্ট হয়ে যায়, দৃষ্টিশক্তি কমে
যায় আর স্নায়ু দুর্বলতা দেখা দেয়
ইত্যাদি।
১০-এর দ্বারা কফ, কাশি এবং
বক্ষব্যাধির সৃষ্টি হয়।
১১-এর কারণে যক্ষ্মা ও হৃদ রোগ হয়।
হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুও ঘটে।
১২-খাবারে রুচি নষ্ট করে ফেলে আর
হজমে ব্যাঘাত ঘটায়।
১৩-এর দ্বারা রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত
হয় আর হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক
কার্যাবলীতে গোলযোগ দেখা দেয়।
১৪-সুরুচিশীল লোকদের নিকট ধূমপান
একটি অপবিত্র ও ঘৃণিত বস্তু বলে গণ্য।
১৫-ধূমপান একটি নেশাদার বস্তু যা
পরিষ্কার হারাম।
১৬-ধূমপান একটা দুর্গন্ধময় বস্তু। যারা
সিগারেট খায়না তারা এর দ্বারা
খুবই কষ্ট পায়,
অপরদিকে সম্মানিত ফেরেশতাকুলও খুবই
কষ্ট পান।
১৭- এটা দ্বীন-দুনিয়া ও আখেরাতের
জন্য বড় ক্ষতিকর।
১৮- বর্তমান বড় বড় দেশগুলি কঠোরভাবে
ধূমপান বিরোধী অভিযান চালাচ্ছে।
সিগারেটের মোড়কে লেখা
হচ্ছেঃ ‘ধূমপানে বিষপান’, ‘ধূমপান
স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর’ ইত্যাদি।
২০- এর ফলে অর্থনৈতিক সংকট দেখা
দেয়।
২১-ধূমপানের বিজ্ঞাপন যেন
বলে,‘আপনার ফুলদানী হোক ছাইদানী’।
২২-ধূমপানের বিজ্ঞাপন স্বাস্থ্য ও সম্পদ
নষ্টের বিজ্ঞাপন।
২৩-ধূমপান ইসলামী শরী‘য়াত ও সুস্থ
বিবেকের দৃষ্টিতে হারাম। অতএব
ধূমপানকারীর সংগ বর্জন করুন আর মহান
আল্লাহর নিকট তাওবা করুন।
২৪-ধূমপান করার আগে ভেবে দেখুন-
এটা হারাম না হালাল? উপকারী না
ধ্বংসকারী? পবিত্র না অপবিত্র?
চিন্তা করলে অবশ্যই জানতে পারবেন
যে, এটা হারাম, ক্ষতিকর এবং অপবিত্র
।
২৫-বাহ্যিকভাবে ধূমপানের মাধ্যমে
সমাজের লোকদেরকে ক্ষতিগ্র¯ত হওয়ার
দিকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়।
২৬-মোট কথা ‘একজন ধূমপায়ী’ তার
ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী, পিতা-মাতা,
আত্মীয়-স্বজন এবং
সুশীল সমাজের নিকট-সর্বোপরি মহান
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিকট অর্থ
অপচয়কারী,
বদ অভ্যাসের দাস ও হারাম খোর
হিসাবে পরিচিত।
২৭-বাস্তবতার আলোকে আমরা যেটা
দেখতে পাই সেটা হলোঃ ক্ষেতে
খামারে, মাঠে-ময়দানে বিভিন্ন
স্থানে রক্ষিত বিভিন্ন ধরনের শাক-
সবজি ও ফসলাদি যা গরু-ছাগল, ভেড়া-
মহিষ, হাস-মুর্গী নষ্ট করে, বা খেয়ে
ফেলে- যার ফলে চাষী ভাইয়েরা ঐ
সমস্ত জানোয়ারের ক্ষয় ক্ষতির হাত
থেকে তাদের ফসলাদিকে রক্ষা করার
জন্য মাঠের ক্ষেত এবং বাড়িতে
খামারে রাখা ফসলাদি ঘিরে
রাখার ব্যবস্থা করে থাকে। এখানে
লক্ষণীয় যে, পান ও বিড়ি-
সিগারেটের তামাক এমনই অপবিত্র ও
ক্ষতিকারক বস্তু- যার ফলে কোন জীব
জানোয়ার ও পশু-পাখী পর্যন্ত তা খায়
না। ফলে বাংলাদেশের বৃহত্তর
রংপুরে মাঠের হাজার হাজার বিঘা
তামাকের ক্ষেত ও বাড়ির খামারে
রক্ষিত তামাক ঘিরে রাখার কোন
প্রয়োজন হয়না। অপরদিকে সৃষ্টির সেরা
মানুষ ঐ হারাম ও অপবিত্র জিনিস
খেয়ে নিজে অর্থনৈতিক ও, শারীরিক
দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আর
সর্বোপরি ধর্মীয় অনুভূতিকে ধংস
করছে। এর পরেও ওহে ধূমপায়ী ভাই!
আপনি কি বিষয়টা একটু ভেবে দেখবেন
না?
২৮-ধূমপায়ী ভাইদের মধ্য হতে অনেকেরই
ধারণা যে, টয়লেটে বসে সিগারেট
টানলে তাতে পায়খানা ভাল
ক্লিয়ার হয়। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা তথা
বদ অভ্যাস মাত্র। আর এটা নিঃসন্দেহে
শয়তানী কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়।
বাস্তবতার আলোকে দেখা যায় যে,
একজন ধূমপায়ী সিগারেট জ্বালিয়ে
টয়লেটে ঢুকার পর কমপক্ষে ১০মিনিট
যাবৎ টয়লেটের কাজ ও সিগারেট
টানার কাজ শেষ করে যখন বের হয়ে
আসল- তখন ঘটনা ক্রমে অন্য একজন
অধূমপায়ী ব্যক্তি প্রয়োজন মিটাতে ঐ
টয়লেটে ঢুকেই বিকট দুর্গন্ধের
মোকাবিলা করে টয়লেটের কাজ
সমাধা করতে হিমসিম খেয়ে যায়।
কেননা চার দেয়াল বেষ্টিত ছোট্ট
টয়লেটে তখন একদিকে সিগারেটের
বিষাক্ত ধুয়া অপরদিকে টয়লেটের
দুর্গন্ধ একত্রিত হয়ে বিকট দুর্গন্ধময়
গ্যাসে ভরে রয়েছে। ফলে টয়লেটের
দুর্গন্ধ চাপা পড়ে গিয়ে এখন শুধু
সিগারেটের বিষাক্ত গ্যাসই ঐ
অধূমপায়ী ব্যক্তির কাছে অনুভূত হচ্ছে।
যার ফলে টয়লেটের কাজ সমাধা করতে
সে এখন বড় বিপদে পড়েছে। এক্ষণে
বিশেষ করে ধূমপায়ী সূধী মহলের নিকট
প্রশ্ন যে, ঐ টয়লেটে আপনার ধূমপান
করার কারণে ঐ দূর্গন্ধময় বিষাক্ত
গ্যাসের ভিতর কমপক্ষে ১০মিনিট সময়
আপনি কেমন করে বসে থাকেন? শ্বাস
প্রশ্বাসের মাধ্যমে ঐ বিষাক্ত গ্যাস
অবশ্যই আপনার শরীরের ভিতর প্রবেশ
করে- যা আপনার শরীরের জন্য কতটুকু
কল্যাণকর একটু ভেবে দেখবেন কি?
২৯-ক্ষেতে-খামারে, মাঠে-ময়দানে,
অফিসে-আদালতে, শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানে, মিল-কল কারখানায় –
তথা সকল প্রকার কর্মস্থলে কর্মরত
ভাইদের মধ্যহতে অনেকেই ধারণা
করেন যে, ক্লান্তি -শ্রান্তি ও
দুঃশ্চিন্তা দূর করার জন্য ধূমপান বড়
উপকারী। মাঝে মাঝে একটু ধূমপান
করে নিলে ক্লান্তি-শ্রান্তি ও
দুঃশ্চিন্তা দূর হয়, ফলে কর্মের তৎপরতা
বা গতি বৃদ্ধি পায়। ধূমপায়ীদের এই
যুক্তি অগ্রহণযোগ্য। কেননা বাস্তবতার
আলোকে ধূমপানের মাধ্যমে যদিও
সাময়িক কিছুটা উপকার অনুভূত হয় ধরে
নেওয়া যায়- তবে বিচক্ষণতার দ্বারা
যাচাই বাছাই করে দেখতে হবে যে,
এই ধূমপানের দ্বারা উপকার বা লাভের
পরিমাণ কতটুকু আর ক্ষতির পরিমাণ বা
কতটুকু? বলা যেতে পারে যে, ধূমপানের
দ্বারা যদি ১ আনা পরিমাণ উপকার বা
লাভ হয়- তাহলে বাকী ১৫ আনাই ক্ষতি
সাধিত হয়। তাহলে এখন আপনি আপনার
সুস্থ বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন যে,
আপনি কি ১ আনা লাভ করতে যেয়ে ১৫
আনাই ক্ষতি স্বীকার করবেন। আর
এজন্যেই মদের ব্যাপারে আল্লাহ
তা‘আলা বলেছেন যে, ‘‘মদের ভিতর
মানুষের জন্য সামান্য পরিমাণ উপকার
আছে- তবে ক্ষতির পরিমাণ অনেকগুণ
বেশী’’। আর এজন্যেই আল্লাহ তা‘আলা
মদ পান করা মানুষের জন্য হারাম করে
দিয়েছেন।
এখন কথা হলো- কর্মের মাঝে ক্লান্তি-
শ্রান্তি ও দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য
ইসলামী বিধান মুতাবিক ‘মিসওয়াক’
করা, ‘উয’ করা বা ‘উযূ করে দু‘রাক‘আত
নামায পড়া’, গরম দুধ ও চা পান করা বা
কিছু নাশতা করা- ইত্যাদি মাধ্যমগুলি
গ্রহণ করা যেতে পারে। তাই বলে তো
ক্লান্তি-শ্রান্তি ও দুশ্চিন্তা দুর করার
অজুহাতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল প্রদর্শিত
হালাল পদ্ধতিগুলি বাদ দিয়ে আল্লাহ
ও তাঁর রাসূলের নিষেধকৃত হারাম
বস্তুগুলি খাওয়া, এটা কেমন ধরণের
ঘৃণিত ও পাপের কাজ? একবার ভেবে
দেখুনতো। প্রকাশ থাকে যে, পানের
সাথে যে সম¯ত জর্দা, বা কাঁচা
তামাক খাওয়া হয়, এমনিভাবে যে
সমস্ত গুল ব্যবহার করা হয় মোটকথা যার
দ্বারা নেশা হয় এ ধরণের সমস্ত জিনিস
খাওয়া বা ব্যবহার করা হারাম।
কেননা বাস্তবে দেখা গেছে যে,
একজন পানে তামাক খাওয়ায় অভ্যস্ত-
কিন্তু ঘটনা ক্রমে যদি সে তামাকের
পরিমাণ একটু বেশী মুখে দিয়ে ফেলে
তাহলে অবশ্যই সে মাথাঘুরে পড়ে
যাবে। অপরদিকে একজন অনভ্যস্ত ব্যক্তি
সে তো পানের তামাক কিছুটা মুখে
দিয়ে চিবাতেই সঙ্গে সঙ্গে মাথা
ঘুরে পড়ে যেয়ে কঠিন বিপদের সম্মুখীন
হবে। অতএব এগুলির সবই খাওয়া ও ব্যবহার
করা হারাম। এখন বলা যেতে পারে
যে, বিড়ি সিগারেটের তামাক
যেটা বিশেষ প্রক্রিয়ায় আগুন দিয়ে
জ্বালিয়ে তার বিষাক্ত ধূয়া টানা
হয়, আর পানের তামাক যা শুকনা
তামাক, যাকে কাঁচা পানের সাথে
চিবিয়ে তার বিষাক্ত স্বাদ গ্রহণ করা
হয়, এদু‘টি পদ্ধতির মাঝে কোনই পার্থক্য
নেই, এ যেন একই টাকার এপিঠ ওপিঠ।
অতএব সিগারেট ও হুক্কা টানা এবং
পানের তামাক, জর্দা ও গুল খাওয়া ও
ব্যবহার করা ইসলামী শরী‘য়াতে সবই
হারাম। কেননা জনাব রাসূলুল্লা-হ
(ছাল্লাল্লা-হু আলাইহি অ-সাল্লাম)
বলেছেন” ﻛُﻞُّ ﻣُﺴْﻜِﺮٍٍ ﺧَﻤْﺮٌ ﻭَ ﻛُﻞُّ ﻣُﺴْﻜِِﺮٍ ﺣَﺮَﺍﻡٌ
” (ﻣﺴﻠﻢ )
অর্থঃ‘‘প্রত্যেক নিশাদার বস্তুই হলো মদ,
আর প্রত্যেক নিশাদার বস্তুই হলো
হারাম”(মুসলিম)। “ ﻣَﺎ ﺃَﺳْﻜَﺮَ ﻛَﺜِﻴْﺮُﻩُ ﻓَﻘَﻠِﻴْﻠُﻪُ
ﺣَﺮﺍﻡٌ ” ( ﺃﺣْﻤَﺪُ )তিনি আরো বলেছেন, ‘‘যে
বস্তুর বেশী পরিমাণ নেশা সৃষ্টি করে
তার কম পরিমাণও হারাম” (আহমাদ)।
৩০-প্রকাশ থাকে যে, বেশ কয়েকটি
হাদীছের আলোকে এটাই প্রমাণিত
যে, ইসলামী শরীয়াত যে সমস্ত বস্তু
খেতে, পান করতে এবং ব্যবহার করতে
নিষেধ করেছে- সেই সমস্ত বস্তুর মূল্য
গ্রহণ করা এবং সেই সমস্ত বস্তু দিয়ে
ব্যবসা করাও হারাম। এ হিসাবে
বিড়ি, সিগারেট এবং পানের তামাক
ও জর্দা এ জাতীয় বস্তু বিক্রয় করাও
হারামের ভিতর গণ্য। অতএব সাবধান!
৩১-কিছুদিন আগে বাংলাদেশের
স্বাস্ত ’মন্ত্রী ডঃ মুশাররাফ হুসাইন
বাংলাদেশের সংসদ অধিবেশনে
ধূমপানের অপকারিতা ও তার ক্ষতিকর
বিষয়গুলি বিস্তারিতভাবে
পর্যালোচনা করেন। পরিশেষে
সর্বসম্মতিক্রমে সরকারীভাবে রাস্তা-
ঘাটে হাটে-বাজারে, বিভিন্ন
প্রকার যানবাহনে এবং সকল শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে
তথা বিভিন্ন সমাবেশে ও লোকালয়ে
ধূমপান করা এবং ধূমপানের সামগ্রী
অর্থাৎ বিড়ি সিগারেট ইত্যাদি
বিক্রয় করা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ
হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে
ধূমপায়ীদের এবং বিড়ি সিগারেট
বিক্রেতাদের শাস্তির জন্য জেল ও
জরিমানার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
পরিশেষে ধূমপানকারী ভাইদের নিকট
আকুল আবেদন এই যে, আপনি একজন
মুসলমান, যে কোন মুহূর্তে আপনার
মৃত্যুঘন্টা বেজে উঠতে পারে, আর মৃত্যুর
পরে আপনার সারাটি জীবনের সকল
প্রকার কর্মকাণ্ডের হিসাব মহান
আল্লাহর দরবারে দিতে হবে। আর
আপনি যেহেতু পরিষ্কারভাবে
জানতে পারলেন যে, ধূমপান ক্ষতিকর
এবং হারাম, তাই আপনার কর্তব্য হলোঃ
১. আল্লাহর উদ্দেশ্যে ধূমপানকে ঘৃণা
করা।
২.এটি বর্জনের দৃঢ় সংকল্প করা।
৩. সিগারেটের পরিবর্তে দাঁতন-
মিসওয়াক অথবা অন্য কোন হালাল ও
পবিত্র দ্রব্য ব্যবহার করা।
৪. ধূমপায়ীদের সমাবেশে না যাওয়া।
অতএব আপনি চিরতরে ধূমপান বর্জন করার
জন্যে সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ্র
নিকট সাহায্য চান, আর প্রার্থনা করুন-
হে আল্লাহ্! ধূমপানের প্রতি আমাদের
অন্তরে ঘৃণা সৃষ্টি করে দিন এবং এ
থেকে বাঁচার তাওফিক দিন- আমীন।
সুত্রঃ ইন্টারনেট।
লিংকঃ www.islamicambit.com/archives/5263
0 comments:
Post a Comment