Thursday, December 3, 2015

ওয়েডিং গিফ্ট




ক্লাস টেনে পড়ার সময়ে, তখন ভবানীপুরে থাকতুম, মিলিদের পাশের বাড়িতেই , কেননা বাবা এই বাঙলোবাড়িটায় থাকতে চাইতেন না । বলতেন, ওটা বাড়ি নাকি ? দাদুর বেলেল্লাপনার মিউজিয়াম । মিলির সঙ্গে ছোটোবেলা থেকে চেনাজানা ছিল ।  এই চল, একদিন দুজনে মিলে লুকিয়ে চুমু খাই, বলতেও ও রাজি হয়ে গেল । বলেছিল, তুই এর আগে চুমু খাসনি তো কাউকে ? উচ্ছিষ্ট হয়ে যাসনি তো ? আজকালকার ছোঁড়ারা তো নিজে চুল আঁচড়াতে শিখলেই উচ্ছিষ্ট হয়ে যায় । কত স্যামপেল যে দেখলুম আজ পজ্জন্ত ।সত্যিই আগে কাউকে চুমু খাইনি । তুই খেয়েছিস কি খাসনি তাতে আমার কিচ্ছু এসে যায় না । মিলির মোটা-মোটা গোল টুপটুপে ঠোঁট কাছ থেকে দেখলেই চুমু খাবার ইচ্ছে হতো ।  আসলে যেকোনো মেয়েকেই চুমু খাবার ইচ্ছে হতো ।  ক্লাসের সহপাঠীরা প্রতিদিনই গল্প করত কেমন চুমু খেল, ফ্রকে হাত ঢুকিয়ে আনন্দ করল , বান্ধবীর হাত নিয়ে নিজের ট্রাউজারে রাখতে দিল ইত্যাদি ।
মিলির দেহ-কাঠামো দারুণ, যদিও মুখশ্রী তত ভালো ছিল না । ছোটো-ছোটো চোখের আর চ্যাপ্টা নাকের কারণে । স্কুলের সবাই জানত, ও নিজেও জানত যে ও সেক্সি । আমার আগে অনেক সহপাঠী লাইন মেরেছিল ওকে । আমি বলেছিলুম , না খাইনি, তাইতো খেতে চাইছি , কিরকম লাগে জানতে চাই । ও বলেছিল, আমিও খাইনি, প্রমিস, গড প্রমিস, কাউকে দেখে পছন্দ না হলে কেন চুমু খাব ! কেন বলতো ? চুমু খাওয়াটা তো আর খাওয়া নয়, প্রেম করা ।
আমিও জানি না কিরকম লাগে, কিন্তু কাউকে চুমু খেতে খুব ইচ্ছে করে , ইচ্ছে করে কসসে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ চুমু খাই কোনো ছেলেকে । তবে সব ছেলে আমার পছন্দ নয় , তুই যেরকম খোলাখুলি বললি সেভাবে কেউ বলেনি । শুধু গন্দা-গন্দা মন্তব্য করে । মুখ দেখেই বলে দিতে পারি যে কোন ছেলের মুখ দিয়ে কিরকম গন্ধ বেরোয় । তোর তো প্রেমিক হবার সব গুণ আছে । কেন বলতো ? তুই বেশ খাবসুরাত । সত্যি ।  আমার বন্ধু দিপলি, তুই তো চিনিস ওকে, ও রোজ ওর প্রেমিকের গল্প করে , কত কি করে দুজনে ওরা ; আমারও খুব ইচ্ছে হয় । চল না , তুই আর আমি প্রেমিক-প্রেমিকা হই । বলেছিল মিলি ।
আমি জিগ্যেস করেছিলুম, দিপলির বয়ফ্রেন্ড কে রে ? তারপর বলেছিলুম , কোথায় গিয়ে চুমু খাব ?
ও বলেছিল, আপাতত চল না কোনো সিনেমায় যাই , অন্ধকার হলেই দুজনে চুমু খাবো , দিপলির মতন নানা ব্যাপার করব । দিপলির প্রেমিক নীতিদিদির বর ; নীতিদিদিটা নাকি একদম রেফরিজারেটার । কেন বলতো ? পাশ ফেরালে পাশ ফেরে , কাৎ করালে কাৎ হয়, চিৎ হতে বললে চিৎ হয়, উপুড় হতে বললে উপুড় হয়, নিজে থেকে কিছুই করে না । অমন ঠান্ডা প্রেমিকাকে কে-ই বা নেবে ? বল ! তুই তো লম্বা চওড়া জোয়ান ছেলে, সবে গোঁফের রেখা দেখা দিয়েছে । তুই নির্ঘাৎ নীতিদিদির বরের চেয়ে ভালো প্রেমিক হবি । আরো কেন বলতো ? তোর বাবা কায়েত আর তোর মা বামুন , তার মানে তোর রক্তে প্রেমিক-প্রেমিকার ইচ্ছে বইছে । আজকে কোনো ফিলিম দেখতে চল । যেদিন আমার বাবা-মা দক্ষিণেশ্বরে যাবে , সেদিনকে তোকে বাড়িতে নিয়ে যাব । প্রেমিক হতে হলে কিন্তু সাহসী হতে হয় । কেন বলতো ? নানা বাধা বিপত্তি আসে, তাই ।
সিনেমা দেখতে গিয়েছিলুম মীনার হলে । কী ফিল্ম দেখাচ্ছিল কে জানে ; যতবার দুজনে কাছাকাছি হবার চেষ্টা করি অন্ধকারটা হঠাৎ সরে গিয়ে  আলো হয়ে যায় । আলো হলে ওকে কাছ থেকে কত লোভনীয় মনে হচ্ছিল, অথচ কিছু করার উপায় নেই । আসলে সঠিক সিনেমা হল আর অন্ধকারাচ্ছন্ন ফিল্ম বাছাই না করেই চলে গিয়েছিলুম।
মিলি বলল, এখানে চুমু খাওয়া কঠিন , বার-বার আলো হয়ে যাচ্ছে , তোর মুখের ওপর ফোকাস মারছে , শেষে কেউ দেখে ফেলবে, তার চেয়ে আমরা ধরাধরি খেলি । বলে, মিলি হঠাৎ আমার প্যান্টের ওপর হাত রাখল , বলল, বোতাম খোলো, বোতাম খোল, এবার থেকে বোতাম খুলে রাখবি । দিপলি বলেছে, প্রেমিকের বোতাম সদাসর্বদা খোলা থাকা দরকার । একেবারে উজবুক তুই, তোকেও আগ্রহ দেখাতে হবে তো । প্রেমিককে প্রেমিকার চেয়ে বেশি-বেশি আগ্রহ দেখাতে হয় ।
আমি বোতাম খুলতেই হাত চালিয়ে দিল মিলি । বলল, যাক বাবা, ভেতরে কিছু পরে আসিসনি ; তারপর প্রকৃত বিস্ময়ে ফিসফিস করল, ও, এরকম হয় বুঝি , এই ফুলে যাচ্ছে রে, গরমও হয়ে যাচ্ছে , ঠিকি যেমন দিপলি বলেছে । আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে রে, বুক ঢিপ-ঢিপ করছে ; তোর কিছু হচ্ছে না ? মানে এখানে নয়, যেটা ধরে আছি, মনের মধ্যে কিছু ? কিংবা বুকে ? বাবা-মা কোনদিন যে দক্ষিণেশ্বর যাবে কে জানে !
আমি ওর হাত সরিয়ে বললুম, বার-বআর দিপলিদিপলি করিসনি , ওর নাম শুনলে তোর মুখের বদলে ওর মুখটাই ভাসবে চোখের সামনে ; এবার তোরটায় হাত দিতে দে । হাত চালিয়ে দিতে ন্যাকড়া-বাঁধা পেলুম । চাপা উত্তেজনায় বললুম, ও, নিজেরটা বেঁথে এনেছিস । কেন ? চাস না যে হাত দিই !
মিলি বলেছিল, ধ্যাৎ বোকা , এখুন ধ্যাড়ানি চলছে ; কালকে খুলব , তখন যত ইচ্ছে হাত দিস । দিপলি বলেছে ওর প্রেমিক মুখও দ্যায়, কিন্তু এখানে তো আর তুই মুখ দিতে পারবি না । বাবাকে বলব, যাও দক্ষিণেশ্বরে পুজো দিয়ে্ এসো , যাতে এবার ক্লাসে প্রোমোশান পাই । বাবা আমার কথা ফেলে না ।
আমি বলেছিলুম, হোকগে থ্যাড়ানি, আমি এখনই হাত দেবো , টের পাচ্ছিস তো আমি ষাঁড়ের মতন হয়ে যাচ্ছি । মিলি ন্যাকড়া ঢিলে করতে হাত ঢোকালুম , কিরকম চটচটে । আমার হাতটা নিয়ে নিজের ফ্রকে পুঁছে মিলি বলেছিল, দেখলি তো ? কালকের দিনটা অপেক্ষা করতে পারলি না । তুই কিন্তু সত্যিই ষাঁড় । বড়বাজারে গিসলুম একবার, তখন দেখেছিলুম একটা ষাঁড় ওই করছে। একদম গোলাপি । তুইও নিশ্চই গোলাপি । কেন বলতো ? তুই তোফর্সা । নীতিদিদির বরটাতো কালোকুচ্ছিত , তবে দিপলি বলেছে প্রেমে কালো-ফর্সা বলে কিছু হয় না । মিলন হলেই সব একাকার , বুকের ভেতর আলোয় আলো । এই তুই কবিতা জানিস ? কেন বলতো ? দিপলি বলছিল যে যখন শরীর গরম হতে থাকে তখন নীতিদিদির বর ওর কানে-কানে কবিতা শোনায়, গানও শোনায় ।  আমি তো কবিতাও জানি না আর গানের গলাও নেই কী করব বল !
—কবিতা ? কী যে বলিস ! আমি সাইন্সের ছাত্র , অঙ্কতে সবচে বেশি নম্বর পাই ক্লাসে । তবে নার্সারি রাইম জানি , ছোটোবেলায় শিখেছিলুম । বলেছিলুম ওকে ।
মিলি তাইতেই সন্তুষ্ট । ঘাড় নেড়ে সায় দিয়ে বলেছিল, তবে তা-ই শোনাস । ক্লাস এইটা আর ক্লাস নাইনে একবার করে ফেল  করেছে মিলি । তাতে কি । কত মোটা-মোটা গোলাপি ওর ঠোঁট দুটো । বুকও ঢেউ খেলতে শুরু করেছে , আর আমার চেয়ে অনেক ফর্সা । জামা খুললে ঘরে বোধহয় আলো জ্বালতে হয় না । কথাটা ওকে বলতে মিলির খুব ভালো লাগল । বলল, তুই যা বললি তা নীতিদিদির বরের কবিতারচে অনেক-অনেক মিষ্টি । এই রকম কথা মাঝে-মাঝে বলিস । কেন বলতো ? যে কথার মানে হয় না অথচ শুনতে ভালো লাগে তা শোনার জন্যেই তো মানুষ বেঁচে থাকে ; মানুষ তো শুধু খাবার আর হাগবার জন্যে বেঁচে থাকে না ।
পরের দিন গেলুম ভবানী সিনেমায় । মিলি নিজে সিনেমার টিকিট কেটে রেখেছিল। দেয়ালে ঠেসান-দেয়া সিট পেয়েছিলুম । ভালই হল । আমি ফিসফিস করে বললুম, আজকে কিছু বাঁথিসনি তো ? মিলি আমার বাঁ-হাতর মধ্যমা আঙুলটা নিয়ে বলেছিল, এইতে রাখ, শুধু রাখবি, নাড়াবিনা কিন্তু, নাড়ালে কাল থেকে আসবো না ।
আমি আঙুলটা নাড়াতে-নাড়াতে বললুম, নাড়ালে কী হয় ?
মিলি আমার বোতাম-খোলা প্যান্টে হাত ঢুকিয়ে টিপে-টিপে ফোলাতে লাগল আর বলতে লাগল, এই হয়, এই হয়, এই হয়, এই হয়, হেই হয়, এই হয়, এটা আমার আমার আমার । আমি এত উত্তেজিত হয়েগিয়েছিলুম যে সামলাতে পারলুম না । রুমাল বের করে পুঁছতে হল । রুমালটা নিজের কাছে রেখে নিয়ে মিলি বলেছিল, এটা আমার ওয়েডিং গিফ্ট । রুমালটা বুকের মধ্যে গুঁজে মিলি বলল, চল এবার, ফিলিম দেখে কী হবে ? আমরা দুজনে বাইরে বেরিয়ে গেলুম , ইনটারভালের আগেই । বাইরে বেরিয়ে মিলি রুমালটা শুঁকতে-শুঁকতে খুব জোরে হাসতে লাগল । হাসতে-হাসতে বলল, অদ্ভূত ব্যাপার এই প্রেম ; তুই এটা প্রেম ভাবছিস তো ? আমি কিন্তু ঠিক করে নিয়েছি তু-ই আমার প্রেমিক । কিন্তু আমার কিছু হবার আগেই তোর হয়ে গেল কেন ? তোর সঙ্গে ঘর বাঁথা যাবে না , এক্কেবারে প্রেমিক হবার অযোগ্য তুই । দিপলি বলেছে, দুজনের একসঙ্গে হওয়া মানে প্রেমিক-প্রেমিকার রাজযোটক । ঠিকুজি-কুষ্টি মেলাবার সময়ে আঁক কষে এটাই তো দ্যাখে , সেই বিয়ে সফল হয় ।
—তোর জন্যেই তো হল, বলেছিলুম ওকে ।
দিপলি বলেছিল, প্রথম দিনেই দেখে নিতে । তাই টেস্ট করলুম। তুই পাস । লেটার পাবি প্রেমে । বাব্বাঃ, কত স্টক তোর , প্রেমে টইটুম্বুর । আনন্দিত আননে বলেছিল মিলি ।
আমরা দুজনে অনেকক্ষণ চুপচাপ হাঁটলুম , চিনেবাদাম খেলুম  । চিনেবাদাম খেতে-খেতে মিলি বলেছিল, ফুচকা খেয়ে চুমু খাস , তার মতন আর মজা নেই । দিপলি আর নীতিদিদির বর প্রায়ই ফুচকা খেয়ে চুমু খায়, টকঝাল চুমু । নানা স্বাদের চুমু হয় । বড়-বড় কবি-মনীষিরা লেখে গেছেন । তুই সেসব পড়তে পারবি না , সংস্কৃততে লেখা ।
যাবার আগে আমি বললুম, কালকে আমার পালা, তুই কিছু করবি না । ও বলেছিল, ঠিক আছে , তুই যা করার করে নিবি , তারপর আমি আমার ওয়েডিং গিফ্ট নেবো । আমার তো আর অত তাড়াতাড়ি তোর মতন রসগোল্লার রস বেরোবে না ।  আমি নিজে-নিজেও নিজের মজা নিই , ক্লাসে অনেকেই নিজে-নিজে আনন্দ নেয় । ছেলেরাও তো নিজে-নিজে আনন্দ নেয় । তুই নিস ? রোজ দুটো করে হাফ-বয়েল ডিম খাবি । কেন বলতো ? তাহলে রস অক্ষুন্ন থাকবে , দিপলি বলেছে । দেখিসনি, ফুচকায় রস থাকে বলে খেতে ভালো লাগে , মুখে ঢোকালি কি ফুচ ।
পরের দিন আমরা লাইটহাউসে গেলুম । মিলি বাড়ি থেকে চাইলেই পয়সা পেতো । আমি বাড়িতে হাতখরচ চাইলে খেতুম চড় । লাইটহাউসে আমরা চুমু খাবার সুযোগ পেয়ে গেলুম । উনটারভালে বাইরে বেরিয়ে ফুচকা খেয়ে আবার চুমু খেলুম । চুমু খেতে যে এত ভালো লাগে জানতুম না , ফুচকা অর নো ফুচকা ।  চুমুটা খাবার পর থেকে আমরা দুজনেই চুমু খাবার সুযোগ খুঁজতুম । মিলির মোটা-মোটা ঠোঁটের গরম গন্ধ আমার ভালো লাগত । ওর ভাল লাগত ওয়েডিং গিফ্ট ; এই ওয়েডিং গিফ্ট খেলা খেলতে ওর ভালো লাগত । কত যে ওয়েডিং গিফ্ট ওকে দিয়েছি তার হিসেব নেই । তবে রুমালের বদলে কাপড়ের টুকরো ওই আনত ।
একদিন ওকে বললুম তোর বুকে হাত বোলাবো কী করে ? তোর বুক দেখতে খুব ইচ্ছে করে । ও বলল, শীতকাল তো আসছে , একটু অপেক্ষা কর , সামনে দিকে বোতামখোলা একটা সোয়েটার আছে আমার , সেইটে পরে বেরোব , ভেতরে পরব না কিছু । বড়দিনের দিন সেই দিনটা এলো । অমরা ছবিঘর সিনেমা হলে গিয়েছিলুম । মিলি ওর সোয়েটারে বোতাম খুলতেই ফিল্মের আলোয় ওর বুকের ঢেউ আরও গোলাপি হয়ে উঠেছিল , আর ওর বুকের ওপর দেখতে পাচ্ছিলুম নায়ক আর খলনায়কের মারামারির আলোছায়া । আমি ওর কাছ ঘেঁষে হাত বোলালুম , বললুম, মুখ দিতে ইচ্ছে করছে রে । মিলি বলল, পরশু বাড়িতে কেউ থাকবে না ; মা-বাবা যাবে দক্ষিণেশ্বরে , আমি বলে দিয়েছি পরীক্ষার পড়া আছে । তুই দুপুর বেলা চলে আসিস , সঙ্গে বইখাতা নিয়ে আসিস । কেন বলতো ? যদি অন্য কেউ হঠাৎ এসে পড়ে । ড্রইংরুমে বইখাতা খুলে রাখব । কেন বলতো ? কেউ এলে ভাববে তুই আমাকে পড়াচ্ছিস । সবাই জানে তুই ভাল ছাত্র , আর আমি ফেলটুস । পড়ে কি করব ? কেন বলতো ? সংসার তো তুই চালাবি , আমার শুধু তো সংসারের খাটনি থাকবে । কত প্রেম করব দুজনে , ওফ, ভাবলেই তোকে আলুপোস্ত করে ফেলতে ইচ্ছে করে ।
আমি স্কুলব্যাগ বইখাতা জিওমেট্রর বাক্স নিয়ে মিলিদের বাড়ি গিয়ে দেখি ও ড্রইংরুমের কার্পেটের ওপর বই-খাতা খুলে রেখেছে । আমার কাঁধ থেকে তাড়াতাড়ি স্কুলব্যাগ নিয়ে বই-খাতা পেনসিল বের করে রাখল , এমনভাবে যাতে মনে হয় ওকে বুঝিয়ে দিচ্ছি । বলল, দাঁড়া, আমার টাওয়েলটা নিয়ে আসি ; কেন বলতো ? তোর রসগোল্লার রসে যদি কার্পেট নোংরা হয়ে যায়, বড়রা ঠিক টের পেয়ে যাবে । তারপর  জিগ্যেস করল, রবার এনেছিস ?
আমি বললুম, হ্যাঁ, জিওমেট্রি বক্সে আছে ।
—ওঃ মাগো, একে নিয়ে কী করব ! দুহাত ওপরে তুলে বিরক্তি প্রকাশ করল মিলি : ওই রবার নয় রে গাধা, প্রেম করার রবার , ওফ, যদি জানতুম তাহলে দিপলির কাছ থেকে নিয়ে নিতুম । নীতিদিদির বর নিজের পকেটে নিয়ে ঘোরে , জানিস ? কখন দরকার পড়ে, বলা তো যায় না । কোনো সুযোগ ছাড়ে না ওরা । আমার অবাক চেহারাখানা দেখে আরও বিরক্ত হল মিলি । বলল, প্রেম করার সময়ে ছেলেরা পরে, জানিস না ? কেন বলতো ? না পরলে রসগোল্লার রস ভেতরে পড়ে বাচ্চা ফুটিয়ে ফেলবে । আজকের পুরো সুযোগটা ডোবালি তুই । নাঃ, তোকে নিয়ে পারা যায় না , মোটেই প্রেমিক হবার যোগ্য নোস । হয় ভগবান, কাকে যে প্রেমিক বাছলুম ।
ও বারবার এত হাত নাড়িয়ে কথা বলছিল যে ওর ফ্রক ওপরে উঠে যাচ্ছিল ঞাঝে-মাঝে , আর তাইতে বুঝে গেলুম যে ফ্রকের তলায় কিছু পরে নেই । আমি সজোরে জড়িয়ে ধরে ওর মোটা-মোটা ঠোটে আমার ঠোঁট চেপে ধরে মিলির কথাবলা থামালুম। ও আমাকে টেনে বই-খাতার মধ্যে ফেলল, বলল, তুই আমার পায়ের দিকে মাথা কর , দিপলি বলেছে, রবার সঙ্গে না থাকলে এই উপায় করতে হয় । আমার আগে মিলি নিজেই আমার মাথার দিকে পা করে ফেলল আর আমায় বলল, ওখানে জিভ ঘসতে থাক , মুখ ঘসতে থাক । যখন বলব তখন থামবি ; আমার হয়ে গেলে আমি তোর শুরু করব ।
উল্টো দিকে মুখ করে শুয়ে মিলি বলল, তোর বুকের মধ্যে কী বাজছে বলতো ?
আমি জিগ্যাস করলুম, কী ?
ও আমাকে বলার আগেই গাল ঘসতে লেগে গিয়েছিলুম ; নেশা ধরা গন্ধ, চোখ বুজে গন্ধ নিতে-নিতে আমার উঠতি দাড়ি দিয়ে ঘসছিলুম । মিলি বলল, কবিতা বল না , যা জানিস, তা-ই বল, আর যা করছিস তা-ই কর, ভেতরে গিয়ে বল ; ওটাও কবিতা বোঝে ।
আমি টুইংকল টুইংকল লিটল স্টার হাউ আই ওয়ান্ডার হোয়াট ইউ আর বলতে-বলতে কী যে করছিলুম, নিজেই জানি না, যতক্ষণ না মিলি থামতে বলল, ততক্ষণ । মিলি কেঁপে-কেঁপে জোরে জড়িয়ে ধরল ।  তারপর যা করল তা আজও মনে হয় আত্ম-আবিষ্কার । মুখে পুরে নিয়ে জিভ ব্যবহার করে রসগোল্লার রস বের করে ফেলল , আর গিলে নিল, স্পষ্ট টের পেলুম ।
—কী করছিস কি, পাগল না কি তুই, বললুম উঠে বসে ।
মিলি বলল, দিপলিও খায় , বেশ ভালো স্বাদ , মন ভরে গেল, সত্যি, আলোয় আলো হয়ে গেল মনটা । তুই এবার বই-খাতা গুটিয়ে, যা, কেটে পড় ; ভাগ্যিস কেউ আসেনি । এবার আমিই রবার যোগাড় করে রাখব , তোর দ্বারা কিসসু হবে না ।
আমি বললুম, এখনও তোর বুকটাই ভালো করে দেখা হল না আর তুই তাড়িয়ে দিচ্ছিস । মিলি ফ্রক ওপরে তুলে বলল, নে, যত পারিস দেখে নে শিগগির ; আশ মিটিয়ে নে । ফ্রক তোলার ফলে ওর মুখ ঠাকা পড়ে গিয়েছিল । আমি সেই সুযোগে ওকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মুখ গুঁজে দিলুম । ঢেউয়ের ওপর জিভের নৌকো বাইতে লাগলুম , ও বাধা দিল না ; বলল, ঠিক আছে, কর কর , বেশ ভাল্লাগছে । বলল, তোর ভেতর কোন বাজনা বাজছে বলতো ? পুজোর বাজনা : না না চাই, হ্যাঁ হ্যাঁ চাই না, না না চাই , হ্যাঁ হ্যাঁ চাই না, না না চাই, হ্যাঁ হ্যাঁ চাই না , না না চাই, ঠিক কি না ?
আমি দাঁত বসিয়ে দিতে, উঃ, জানোয়ার কোথাকার, সুযোগ পেয়েছিস কি নিজের রূপে এসে গেলি ।
তখনকার মতো আমার প্রথম প্রেমের সেখানেই ইতি ।
আমাদের দুজনকে বাবা কোথায় একসঙ্গে দেখে ফেলেছিলেন । আমরা নাকি খুব হাসাহাসি করছিলুম । ব্যাস, চড়, চড়ের পর চড়, আরও চড় । বাবার ধারণা যে বাইজি নাচাবার রক্ত আমার শরীরে ডাক দিতে লেগেছে । আমাকে ওই রক্তদোষ থেকে বাঁচাবার জন্যে বাবা এই বাগানবাড়িতে থাকাটা শ্রেয় মনে করলেন ।  আমার নারী-সঙ্গর সাহস, কেন কে জানে, ছিল না তখন । তা ঢুকল কলেজে ঢুকে , হস্টেলে থাকার সময়ে , বাবার চোখের আড়ালে ।
বাবা প্রেম ব্যাপারটা একেবারে সহ্য করতে পারতেন না , সম্ভবত নিজে প্রেম করে বিয়ে করাটা সফল হয়নি বলে । স্কুলের দিনে মিলির সঙ্গে তারপর দেখা হলে ওয়েডিং গিফ্ট বলে ডাকত না । বলত, কী রে জারজ, বাপকে ভয় পাস, প্রেম করার মুরোদ নেই চললেন উনি বুকে হাত বোলাতে । তবে তোকে আমি ছাড়ব না, দেখে নিস । যদি আমার বিয়েও হয়ে যায়, আমি তোর বাচ্চাকে পেটে নেবোই নেবো । তুই পৃথিবীর যেখানেই থাকিস খুঁজে বের করব তোকে । তোর মতন কেউ আমার সঙ্গে প্রেম করতে পারবে না , জানি আমি । তারপর রাস্তায় দাঁড়িয়েই কাঁদতে আরম্ভ করে দিয়েছিল ।
আমি বলেছিলুম, তুই কি উন্মাদ ?
ও বলেছিল, হ্যাঁ, আমি উন্মাদ ; তা না হলে কি করে এক কথায় রাজি হয়ে যেতুম ? তুই এত ভিতু ? এরকম ঢ্যাঙা ছেলে, চওড়া ছাতি, হিরি-হিরো চেহারা, আর সেই ছেলেটা কিনা নিজের বাবাকে ভয় পায় ! প্রেমকে ভয় পায় ! প্রেমের জন্যে মানুষ মরতে পর্যন্ত রাজি হয় আর তুই প্রেমিক হয়েও পালালি বাপের ঠ্যাঙানির ভয়ে ! তবে ছাড়ব না তোকে, এই বলে রাখলুম , দক্ষিণেশ্বরের দিব্বি ।
বাবাকে কেউ নিশ্চই খবর দিয়ে থাকবে । আমার এখন মনে হয় দিপলির সঙ্গে সব কথা বলাবলি করার ফলে নীতিদিদির বরের কানে গিয়ে থাকবে আমাদের প্রেম-কাহিনি । বাবা পাড়াটাই ছেড়ে দিলেন ।
আমরা তারপর দাদুর বাগানবাড়িতে চলে এলুম । একদিক থেকে ভালো হল । শহর থেকে দূরে বলে বাবার গাড়ি করে স্কুলে যাতায়াতের সুবিধে হয়ে গেল । তারপর কলেজে গিয়ে  হস্টেলে ভর্তি হলুম । মিলির সঙ্গে প্রেমের নবীকরণের সুযোগ ছিল । কিন্তু আমার কেমন যেন গিল্ট ফিলিং হতে লাগল । কত আর ধোকা দেব বোকা মেয়েটাকে ! বোকা বলেই ওকে ভালো লাগত । ভয় ছিল যে শেষে পেটে বাচ্চা-ফাচ্চা এসে গেলে কেলেঙ্কারি , এমন ডাকাবুকো মেয়ে মিলি যে নিজে থেকেই হয়তো চেষ্টা করত যাতে পেটে বাচ্চা এসে যায় ।  বাবা জানতে পারলে চড় মেরে-মেরে আধমরা করে দিতেন ।
কলেজে ঢুকে সহপাঠীদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সহায়তায় কল গার্লদের জগতটার সঙ্গে পরিচয় হল ।
এক কথায় রাজি হয়ে যাওয়া, এই অভিব্যক্তিটা এই বুড়ো বয়সে আমায় হন্ট করে । উন্মাদ ? হ্যাঁ, আজ জানি, আমি উন্মাদ ।
বাগানবাড়িটা নিয়ে দাদু আর দাদুর বাবার বনিবনা ছিল না । দাদুর বাবা নাকি বাইজিদের নিয়ে কেলো করতেন বাড়িটায় । দাদুর নামে করে দিয়ে যাননি । নোটিফায়েড এরিয়ে বলে দাদুও বিশেষ গা করেননি দাদুর বাবা মারা যাবার পর ।  দাদু মারা যেতে বাবাও মিউটেশানের জন্যে করেননি কিছু ।  আমিই বা কী করব সম্পত্তির মালিকানার ঝঞ্ঝাটে ঢুকে !
ইউরোপ যাবার আগে, উত্তর ইউরোপের কয়েকটা দেশের ভিসা পেয়েছিলুম , বাবা এত টাকা আমার জন্যে রেখে গিয়েছিলেন যে মন ভালো করার উদ্দেশ্যে ঘুরে বেড়ানো ছাড়া অন্য পথ ছিল না । অন্ধ্র থেকে ফিরে এসে আমার মন ভেঙে পড়েছিল । দেশে থাকলে বাগানবাড়িতে, নতুবা বিদেশে, এভাবেই জীবন কাটাব ঠিক করেছিলুম ।
ওবেরয় গ্র্যান্ড থেকে বেরিয়ে , এয়ার কান্ডিশানের শীতটা দেহ থেকে ঝরিয়ে ফেলার উদ্দেশ্যে, ফুটপাতের রোদে গিয়ে দাঁড়াতেই , একজন মহিলা, কাঁধে চামড়ার সুদৃশ্য ব্যাগ, আমাকে আঁকড়ে ধরলেন ।  ছাড়ুন, ছাড়ুন, কী করছেন কি , এভাবে, কে আপনি ? বলে, ছাড়াতে, দেখি মিলি । দেখেই ভয় করে উঠল , বাবার ভয় নব< বাবা তো স্বর্গে , অন্য এক অচেনা ভয় , বিশ্বাসঘাতকরা হয়তো এরকম ভয়ে আচমকা আক্রান্ত হয় ।  বুকের ভেতরে  বাবা তখন হৃৎপুণ্ডকে চড় মেরে চলেছেন ।
—জানি, তুই চিনতে পারবি না , মিলি কে চিনতিস কি , যখন স্কুলে পড়তিস ? আমি সেই মিলি । আজকেই, আজকেই বলি কেন, এই কিছুক্ষণ আগে আমার ডিভোর্স হয়ে গেল । কেন বলতো ? আমার বর ভালো চাকরি করে না , আমার রোজগার উড়িয়ে বেঁচে থাকতে চাইছিল বাঞ্চোতটা । মিলি বলল, সরাসরি আমার চোখে চোখ রেখে ।
—আমি তো পরশু ইউরোপ চলে যাচ্ছি । ভয়ে আমার মুখ দিয়ে পলায়নের অ্যালিবাই বেরোলো । টের পাচ্ছিলুম ঘেমে উঠছি ।
—তোর বাবা তো কবেই অক্কা পেয়েছেন , এখনও কিসের ভয়ে মরিস ? প্রথম প্রেমকে ভয় পাস ? নিজেকেই ভয় পাস তুই । কেন বলতো ? নিজেই নিজেকে জানিস না ।
—প্রেমকে ভয় ? মায়ার স্মৃতি উসকে উঠল । মিলি বুঝতে পারছিল আমি কোনো সংবেদন চেপে রাখতে চাইছি । বললুম, না রে, প্রেমকে ভয় পাই না আর , প্রেম বিপর্যস্ত করে দিয়ে চলে যায় । আমি তোকে বিপর্যস্ত করে দিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছিলুম । তোর দুঃখ আর অসহায়তা আজ অনুভব করি ।
—চল না, তোর বাড়ি যাই , দুজনে দুঃখ ভাগাভাগি করব । চিনেবাদামের দুপুর আর ফুচকার রাতগুলোর গল্প করব । তুই তো সেই উত্তর চব্বিশ পরগণার কোথায় যেন থাকিস , বিশাল প্রাসাদ আছে তোদের, তা তো দেখাই হয়নি । নিয়ে চল না । ভয় নেই তোর চলে আসব , আমার নিজের ছোট্ট ফ্ল্যাট আছে গল্ফগ্রীনের চার তলায় ; সেখানে তোকে নিয়ে যেতে পারতাম । আজকে নয় । কেন বলতো ? লোকেরা আজকে আমার মুখ দেখার জন্যে তৈরি হয়েই থাকবে , বিয়ে ভাঙনের আনন্দ নেবে । আমার হাত দুটো নিয়ে বলল মিলি ।
নিয়ে গেলুম ওকে । পথে দুবার ট্যাক্সি পাল্টালুম । নির্বাক দীর্ঘ পথে গায়ে গা লাগিয়ে মিলি আড়চোখে মাপজোক করছিল আমরা পরস্পরের কত আলোকবর্ষ দূরে চলে গেছি ।
বাড়িতে ঢুকে দরজা বনধ করার সঙ্গে-সঙ্গেই মিলি জড়িয়ে ধরল আমাকে । ফোঁপাতে লাগল । কারণ ঠাহর করতে পারলুম না । কাঁদবার রসায়ন আমার শরীরে ঘোর অনর্থ গড়া শুরু করেছিল ; তা চাপা দিতে আমিও জড়িয়ে ধরলুম মিলিকে যাতে ও আমার মুখের দিকে তাকাতে না পারে । ও আমার শঅর্ট টেনে ছেঁড়ার চেষ্টা করতে লাগল, ছিঁড়েও গেল বোতামগুলো । বলতে লাগল, তোর বাচ্চা চাই, তোর বাচ্চা চাই, তোর বাচ্চা চাই…
আমার ভয় নাকি যৌনতা তা জানি না । একজন যুবতী জড়িয়ে ধরেছে আমায় , তার নরম বুক চেপে বসিয়ে দিয়েছে  আমার বুকে, নিজের পোশাক নিজেই দ্রুত খুলে ফেলার প্রয়াস করছে । আমি চোখ বুজতেই মায়া ভেসে উঠল, মায়ার উলঙ্গ দেহ দেখতে পেলুম চোখের সামনে ।
মিলি বলল, আমি আজ তোকে খুন করে তবে যাব , খোল, খোল, খোল, খোল….জানি, তোর বুকের ভেতরে সেই পুরানো বাজনাটা বাজছে, না না চাই, হ্যাঁ হ্যাঁ চাই না, না না চাই, হ্যাঁ হ্যাঁ চাই না, না না চাই, হ্যাঁ হ্যাঁ চাই না, না না চাই, হ্যাঁ হ্যাঁ চাই না, না না চাই, হ্যাঁ হ্যাঁ চাই না, না না চাই, হ্যাঁ হ্যাঁ চাই না , না না চাই, হ্যাঁ হ্যাঁ চাই না । আর আমার ভেতরেও সেই পুরানো বাজনাটা বাজছে চাই চাই চাই চাই চাই চাই চাই চাই চাই চাই চাই…..
—কি করছিস কি , পরশু আমি চলে যাব রে , কি করবি তুই তারপর , এখনও তুই উন্মাদ থেকে গেছিস, ছাড়, ছাড়, ছাড় ।
—ওসব আমি বুঝব ; বললুম না তোকে । আজ তোকে খুন করে তবেই যাব , তোর খাবারে বিষ মেশাব , দে, তোর বাচ্চা দে…
নারী জড়িয়ে ধরলে আমার পক্ষে আত্মনিয়ন্ত্রণ যে আসম্ভব তা আমি জানি । বোধহয় মিলিও জানত । আমি ওকে দুহাতে পাঁজাকোলা করে তুলে দাদুর বাবার ঘরে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করালুম , এই আশায় যে ঘরের আসবাব ওকে পাগলামি থেকে মুক্ত করবে । দাদুর বাবার ঘরে ওনার সময়ে শিকার করা স্টাফড বাঘ, হরিণ, মোষ, জংলি বিড়াল ইত্যাদি দিয়ে সাজানো ; দেয়ালে ওনার সঙ্গে ওনার স্ত্রী আর দাদুর তেলরঙে বিরাট ছবি , ওনার প্রিয় বাইজির তেলরঙে পোরট্রেট , দেয়ালে মোষের, হরিণের করোটি । মিলির কোনো পরিবর্তন হল না । পরিবর্তে , আমার গলা জড়িয়ে বলে উঠল, ওঃ, এই ঘরটায় তো কত অবৈধ ভালবাসাবসি হয়েছিল , না হয় আরেকটা হল । রসে রস মিশলে প্রেম আর অবৈধ থাকে না , বলে রাখলুম তোকে ।
সারা রাত পোশাকহীন আর অভূক্ত থেকে সকালে শাড়ি-ব্লাউজ পরতে-পরতে ও বলেছিল, রক্ত দেখে তোর সন্দেহ হয়নি ? তোকে মিথ্যা কথা বলেছিলুম , আমার বিয়েই হয়নি তো ডিভোর্স হবে কোথ্থেকে !
আমি স্তম্ভিত ।
রাতে ওর বুকে একটা দাগ দেখিয়ে বলেছিল মিলি, এই দ্যাখ, সেই তুই কামড়ে দিয়েছিলি, তোর দাঁতের বিষে ঘা হয়ে গিয়েছিল । আমি ওষুধ লাগাতে দিইনি, লাগাইনি, তোর স্মৃতিচিহ্ণ ধরে রেখেছি ।
আমার জীবনে আমি কোনো নারীকে বুঝে উঠতে পারিনি । হয়তো সেকারণেই আমি আকৃষ্ট হই, আজও । এই বার্ধক্যে ।
ও বলেছিল, তোর বাড়ি দেখে রাখলুম , যদি আমার আজকের উদ্দেশ্য সফল না হয়, তাহলে একদিন চুপচাপ এসে তোকে খুন করে যাব । এমনভাবে খুন করব যে কেউ বুঝতে পারবে না তুই কি করে  মরলি ।
আমি ওকে ট্যাক্সিতে চাপিয়ে, ভাড়া দিয়ে দিতে চাইছিলুম । মিলি বলল, ট্যাক্সিঅলার সামনেই, তুই কি সেবার দাম দিচ্ছিস নাকি ? আমাকে পি পথবৌমা পেয়েছিস নাকি ? দেখি কি হয়, নয়তো সত্যইই তোকে জীবন দিয়ে দাম চোকাতে হবে । মনে রাখিস । ঠাট্টা করছি না, সিরিয়াসলি বলছি । ডায়েরিতে লিখে রাখ , পুলিস তোর লাশ পেয়ে আমার খোঁজে আসবে তাহলে ।
শেষনির কথামতন লিখতে-লিখতে বেশ লাগছে । সব-কিছুই মনে করতে পারছি , এত দিন পরও । মিলির মোটা-মোটা  ঠোঁট, গোলাপি ভরাট বুক, বুকে কামড়ে দেবার দাগ, সোঁদা-সোঁদা গন্ধ । আর ওর প্রতিজ্ঞা যে, আমার বাচ্চাকে ও পেটে নেবেই নেবে , নয়তো খুন করবে আমাকে ।  আমি ওর স্মৃতিতে আমার শুক্রকীট ডক্টে অনিল পালেসকরের লিকুইড নাইট্রোজেনে ফ্রিজ করিয়ে রেখেছি ; চল্লিশ বছর রেখে দেবার কনট্র্যাক্ট । এখন তো কাগজে পড়ি ষাট-বাষট্টি বছরেও ফ্রোজ করা স্পার্ম থেকে বাচ্চা হয় । ডক্টর পালেসকর বলেছেন কোনো সমস্যা হবে না । আপনার নির্দেশ অনুযায়ী দাবিদার মহিলা যোগাযোগ করলে আমরা প্রয়োজনীয় আইভিএফ করে দিতে পারব , আপনার স্পার্ম কাউন্ট অনেক বেশি ।
মিলি তুই কোথায় ? তুই কি সফল হয়েছিলি ? তুই কি কেওড়াতলার স্বর্গদ্বার দিয়ে উধাও হয়ে গেছিস ? কেই বা তোকে জানাবে তোকে নিবেদিত আমার স্পার্মের কথা , শীতঘুমে নিদ্রিত তোর সন্তান-সন্ততির অপেক্ষার কথা !
ওর, মানে মিলির, চামড়ার ব্যাগটা পড়ে রয়েছে ; মিলি বাড়িতে ঢুকেই যেখানে ওটা রেখেছিল । ব্যাগটায় একটা ছোরা দেখে আমার আরও ভয় হল যে সত্যিই মিলি ইনসেন নয়তো । বা, হয়তো, ওর প্রেম ইনসেন , ও নয় ।
আমারও বেশ লাগল হে কংকাল প্রেমিক, তোমার প্রথম প্রেমের গল্প পড়ে । ইন্সপেক্টার রিমা খান নিজেকে শুনিয়ে বলল , সিগারেটের ধোঁয়া হাওয়ায় উড়িয়ে । তবে তুমি নিজের ঠিকানাটা লিখলে না কেন ? কোথায় থাকতে ভবানীপুরে ? মিলিদের বাড়ির নম্বরটাই বা কি ? মিলির বাপের নাম কি ?  দিপলি কে ? নীতিদিদির বর লোকটা কে ? শ্রাদ্ধ করতে বসে লোকে দাদু-দাদুর বাপের নাম  বলতে পারে না । আর এখানে একজন, যে কিনা নিজের নাম বলছে না, অথচ গ্রেটগ্র্যান্ড ফাদারের কাহিনি শোনাচ্ছে ! প্রথম প্রেমের রহস্যময়ী প্রেমিকার কাহিনি শোনাচ্ছে , নিজেকে শোনাচ্ছে ।  হাউ অ্যাবসার্ড । মায়া পাল নামে সেই মহিলার কী হল তাহলে ? এটা কি ডাইভারসানারি ট্যাকটিকস ? কংকালটা বেশ ঘোড়েল ।
মিলি কি এসে খুন করে যাবে ? মনে তো হয় না । প্রেমে উন্মাদ প্রেমিকা বলে কথা, অপেক্ষা করেছে বছরের পর বছর পালিয়ে যাওয়া প্রেমিকের জন্য ।  কিন্তু মিলির চামড়ার ব্যাগটা তো সিজার লিস্টে নেই । ওটা কি হল ? কংকাল প্রেমিকের দাদুর বাবার কিউরিও ঘরটাও  অব্যবহৃত । ওই ঘরটার তালা জংধরা ছিল ; অর্থাৎ কংকাল প্রেমিক নিজেও, সম্ভবত মিলি এপিসোডের পর খোলেনি । বেডরুমটা কংকাল প্রেমিক ব্যবহার করত না , স্টাডিতেই শুত , আর সেখানেই মরেছে । লোকটার স্টাডিতেও জমকালো পালঙ্ক । মহিলার চুলের গোছা পাওয়া গেছে , সেটা তাহলে মিলির নয় বলেই মনে হচ্ছে । তাহলে কার ?
যাহোক, দুটো সূত্র তো পাওয়া গেল । বেডরুমে হাতের ছাপ যা পাওয়া গেছে, তার দ্বিতীয় আর তৃতীয় স্যামপেলের একটা হয়তো মিলির ; অন্যটা কার সন্ধান করতে হবে । প্রথম আর দ্বিতীয় ইনভেসটিগেটিং অফিসাররা আঙুলের ছাপ স্টেট ক্রাইম ব্র্যাঞ্চ রেকর্ডস ব্যুরোয় সংরক্ষিত ছাপগুলোর সঙ্গে মিলিয়েছিলেন ; মেলেনি , কেননা রেকর্ডে কেবল ক্রিমিনালদের ছাপই রক্ষিত । কংকাল প্রেমিকের হত্যায় কোনো পেশাদার খুনির হাত আছে বলে আপাতত মনে হচ্ছে না ।
শুক্রকীত সংরক্ষণ করার এই ডাকতারের নাম দেখেছি সংবাদপত্রে । অনেকের আইভিএফ করে বাচ্চার জন্ম দিয়েছেন । ইনি নিশ্চয় মুম্বাইয়ের সেই বিখ্যাত ডাকতার । নিজেই যাব । ডিজিকে অনুরোধ করব যাতায়াতের খরচ অনুমোদন আর মুম্বাইয়ের কমিশনারকে একটা চিঠি দিয়ে দিতে যাতে সরকারি অতিথি হয়ে থাকতে পারি ।
রিমা পড়তে-পড়তে ভাবছিল, কংকালটা বেশ লিখেছে , উপন্যাস টাইপের । ডিজিকে জিগ্যেস করতে হবে এই পুরো লেখাটা কোনো ডিটেকটিভ রাইটারকে দিয়ে নিরঞ্জন দত্ত নামে বই ছাপানো যায় কি না । কিন্তু মাঝখানে হঠাৎ এই গল্পটা ঢোকাতে গেল কেন ? কংকালটা বোধ হয় ঠাহর করতে পারেনি যে তার প্রকৃত প্রেমিকা কে ! সত্যিই, দুজন তরুণি যদি একজন পুরুষকে ভালোবাসে , তাহলে কোন নিক্তি প্রবোগ করেই বা বুঝবে যে কাকে ও চায় । ধরা যাক আরও কয়েকজন তরুণী পুরুষটাকে প্রেম নিবেদন করে বসল , তখন লোকটা কি করবে ? মায়া আর মিলি এই দুজন একেবারে বিপরীত মেরুর মহিলা । এদের দুজনকেই যদি খুঁজে পাওয়া যায় , তাহলে বাঙলোবাড়িতে এনে কংকালটাকে দেখিয়ে জানতে চাইবে, চেনে কিনা ।

ক্লাস টেনে পড়ার সময়ে, তখন ভবানীপুরে থাকতুম, মিলিদের পাশের বাড়িতেই , কেননা বাবা এই বাঙলোবাড়িটায় থাকতে চাইতেন না । বলতেন, ওটা বাড়ি নাকি ? দাদুর বেলেল্লাপনার মিউজিয়াম । মিলির সঙ্গে ছোটোবেলা থেকে চেনাজানা ছিল ।  এই চল, একদিন দুজনে মিলে লুকিয়ে চুমু খাই, বলতেও ও রাজি হয়ে গেল । বলেছিল, তুই এর আগে চুমু খাসনি তো কাউকে ? উচ্ছিষ্ট হয়ে যাসনি তো ? আজকালকার ছোঁড়ারা তো নিজে চুল আঁচড়াতে শিখলেই উচ্ছিষ্ট হয়ে যায় । কত স্যামপেল যে দেখলুম আজ পজ্জন্ত ।সত্যিই আগে কাউকে চুমু খাইনি । তুই খেয়েছিস কি খাসনি তাতে আমার কিচ্ছু এসে যায় না । মিলির মোটা-মোটা গোল টুপটুপে ঠোঁট কাছ থেকে দেখলেই চুমু খাবার ইচ্ছে হতো ।  আসলে যেকোনো মেয়েকেই চুমু খাবার ইচ্ছে হতো ।  ক্লাসের সহপাঠীরা প্রতিদিনই গল্প করত কেমন চুমু খেল, ফ্রকে হাত ঢুকিয়ে আনন্দ করল , বান্ধবীর হাত নিয়ে নিজের ট্রাউজারে রাখতে দিল ইত্যাদি ।
মিলির দেহ-কাঠামো দারুণ, যদিও মুখশ্রী তত ভালো ছিল না । ছোটো-ছোটো চোখের আর চ্যাপ্টা নাকের কারণে । স্কুলের সবাই জানত, ও নিজেও জানত যে ও সেক্সি । আমার আগে অনেক সহপাঠী লাইন মেরেছিল ওকে । আমি বলেছিলুম , না খাইনি, তাইতো খেতে চাইছি , কিরকম লাগে জানতে চাই । ও বলেছিল, আমিও খাইনি, প্রমিস, গড প্রমিস, কাউকে দেখে পছন্দ না হলে কেন চুমু খাব ! কেন বলতো ? চুমু খাওয়াটা তো আর খাওয়া নয়, প্রেম করা ।
আমিও জানি না কিরকম লাগে, কিন্তু কাউকে চুমু খেতে খুব ইচ্ছে করে , ইচ্ছে করে কসসে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ চুমু খাই কোনো ছেলেকে । তবে সব ছেলে আমার পছন্দ নয় , তুই যেরকম খোলাখুলি বললি সেভাবে কেউ বলেনি । শুধু গন্দা-গন্দা মন্তব্য করে । মুখ দেখেই বলে দিতে পারি যে কোন ছেলের মুখ দিয়ে কিরকম গন্ধ বেরোয় । তোর তো প্রেমিক হবার সব গুণ আছে । কেন বলতো ? তুই বেশ খাবসুরাত । সত্যি ।  আমার বন্ধু দিপলি, তুই তো চিনিস ওকে, ও রোজ ওর প্রেমিকের গল্প করে , কত কি করে দুজনে ওরা ; আমারও খুব ইচ্ছে হয় । চল না , তুই আর আমি প্রেমিক-প্রেমিকা হই । বলেছিল মিলি ।
আমি জিগ্যেস করেছিলুম, দিপলির বয়ফ্রেন্ড কে রে ? তারপর বলেছিলুম , কোথায় গিয়ে চুমু খাব ?
ও বলেছিল, আপাতত চল না কোনো সিনেমায় যাই , অন্ধকার হলেই দুজনে চুমু খাবো , দিপলির মতন নানা ব্যাপার করব । দিপলির প্রেমিক নীতিদিদির বর ; নীতিদিদিটা নাকি একদম রেফরিজারেটার । কেন বলতো ? পাশ ফেরালে পাশ ফেরে , কাৎ করালে কাৎ হয়, চিৎ হতে বললে চিৎ হয়, উপুড় হতে বললে উপুড় হয়, নিজে থেকে কিছুই করে না । অমন ঠান্ডা প্রেমিকাকে কে-ই বা নেবে ? বল ! তুই তো লম্বা চওড়া জোয়ান ছেলে, সবে গোঁফের রেখা দেখা দিয়েছে । তুই নির্ঘাৎ নীতিদিদির বরের চেয়ে ভালো প্রেমিক হবি । আরো কেন বলতো ? তোর বাবা কায়েত আর তোর মা বামুন , তার মানে তোর রক্তে প্রেমিক-প্রেমিকার ইচ্ছে বইছে । আজকে কোনো ফিলিম দেখতে চল । যেদিন আমার বাবা-মা দক্ষিণেশ্বরে যাবে , সেদিনকে তোকে বাড়িতে নিয়ে যাব । প্রেমিক হতে হলে কিন্তু সাহসী হতে হয় । কেন বলতো ? নানা বাধা বিপত্তি আসে, তাই ।
সিনেমা দেখতে গিয়েছিলুম মীনার হলে । কী ফিল্ম দেখাচ্ছিল কে জানে ; যতবার দুজনে কাছাকাছি হবার চেষ্টা করি অন্ধকারটা হঠাৎ সরে গিয়ে  আলো হয়ে যায় । আলো হলে ওকে কাছ থেকে কত লোভনীয় মনে হচ্ছিল, অথচ কিছু করার উপায় নেই । আসলে সঠিক সিনেমা হল আর অন্ধকারাচ্ছন্ন ফিল্ম বাছাই না করেই চলে গিয়েছিলুম।
মিলি বলল, এখানে চুমু খাওয়া কঠিন , বার-বার আলো হয়ে যাচ্ছে , তোর মুখের ওপর ফোকাস মারছে , শেষে কেউ দেখে ফেলবে, তার চেয়ে আমরা ধরাধরি খেলি । বলে, মিলি হঠাৎ আমার প্যান্টের ওপর হাত রাখল , বলল, বোতাম খোলো, বোতাম খোল, এবার থেকে বোতাম খুলে রাখবি । দিপলি বলেছে, প্রেমিকের বোতাম সদাসর্বদা খোলা থাকা দরকার । একেবারে উজবুক তুই, তোকেও আগ্রহ দেখাতে হবে তো । প্রেমিককে প্রেমিকার চেয়ে বেশি-বেশি আগ্রহ দেখাতে হয় ।
আমি বোতাম খুলতেই হাত চালিয়ে দিল মিলি । বলল, যাক বাবা, ভেতরে কিছু পরে আসিসনি ; তারপর প্রকৃত বিস্ময়ে ফিসফিস করল, ও, এরকম হয় বুঝি , এই ফুলে যাচ্ছে রে, গরমও হয়ে যাচ্ছে , ঠিকি যেমন দিপলি বলেছে । আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে রে, বুক ঢিপ-ঢিপ করছে ; তোর কিছু হচ্ছে না ? মানে এখানে নয়, যেটা ধরে আছি, মনের মধ্যে কিছু ? কিংবা বুকে ? বাবা-মা কোনদিন যে দক্ষিণেশ্বর যাবে কে জানে !
আমি ওর হাত সরিয়ে বললুম, বার-বআর দিপলিদিপলি করিসনি , ওর নাম শুনলে তোর মুখের বদলে ওর মুখটাই ভাসবে চোখের সামনে ; এবার তোরটায় হাত দিতে দে । হাত চালিয়ে দিতে ন্যাকড়া-বাঁধা পেলুম । চাপা উত্তেজনায় বললুম, ও, নিজেরটা বেঁথে এনেছিস । কেন ? চাস না যে হাত দিই !
মিলি বলেছিল, ধ্যাৎ বোকা , এখুন ধ্যাড়ানি চলছে ; কালকে খুলব , তখন যত ইচ্ছে হাত দিস । দিপলি বলেছে ওর প্রেমিক মুখও দ্যায়, কিন্তু এখানে তো আর তুই মুখ দিতে পারবি না । বাবাকে বলব, যাও দক্ষিণেশ্বরে পুজো দিয়ে্ এসো , যাতে এবার ক্লাসে প্রোমোশান পাই । বাবা আমার কথা ফেলে না ।
আমি বলেছিলুম, হোকগে থ্যাড়ানি, আমি এখনই হাত দেবো , টের পাচ্ছিস তো আমি ষাঁড়ের মতন হয়ে যাচ্ছি । মিলি ন্যাকড়া ঢিলে করতে হাত ঢোকালুম , কিরকম চটচটে । আমার হাতটা নিয়ে নিজের ফ্রকে পুঁছে মিলি বলেছিল, দেখলি তো ? কালকের দিনটা অপেক্ষা করতে পারলি না । তুই কিন্তু সত্যিই ষাঁড় । বড়বাজারে গিসলুম একবার, তখন দেখেছিলুম একটা ষাঁড় ওই করছে। একদম গোলাপি । তুইও নিশ্চই গোলাপি । কেন বলতো ? তুই তোফর্সা । নীতিদিদির বরটাতো কালোকুচ্ছিত , তবে দিপলি বলেছে প্রেমে কালো-ফর্সা বলে কিছু হয় না । মিলন হলেই সব একাকার , বুকের ভেতর আলোয় আলো । এই তুই কবিতা জানিস ? কেন বলতো ? দিপলি বলছিল যে যখন শরীর গরম হতে থাকে তখন নীতিদিদির বর ওর কানে-কানে কবিতা শোনায়, গানও শোনায় ।  আমি তো কবিতাও জানি না আর গানের গলাও নেই কী করব বল !
—কবিতা ? কী যে বলিস ! আমি সাইন্সের ছাত্র , অঙ্কতে সবচে বেশি নম্বর পাই ক্লাসে । তবে নার্সারি রাইম জানি , ছোটোবেলায় শিখেছিলুম । বলেছিলুম ওকে ।
মিলি তাইতেই সন্তুষ্ট । ঘাড় নেড়ে সায় দিয়ে বলেছিল, তবে তা-ই শোনাস । ক্লাস এইটা আর ক্লাস নাইনে একবার করে ফেল  করেছে মিলি । তাতে কি । কত মোটা-মোটা গোলাপি ওর ঠোঁট দুটো । বুকও ঢেউ খেলতে শুরু করেছে , আর আমার চেয়ে অনেক ফর্সা । জামা খুললে ঘরে বোধহয় আলো জ্বালতে হয় না । কথাটা ওকে বলতে মিলির খুব ভালো লাগল । বলল, তুই যা বললি তা নীতিদিদির বরের কবিতারচে অনেক-অনেক মিষ্টি । এই রকম কথা মাঝে-মাঝে বলিস । কেন বলতো ? যে কথার মানে হয় না অথচ শুনতে ভালো লাগে তা শোনার জন্যেই তো মানুষ বেঁচে থাকে ; মানুষ তো শুধু খাবার আর হাগবার জন্যে বেঁচে থাকে না ।
পরের দিন গেলুম ভবানী সিনেমায় । মিলি নিজে সিনেমার টিকিট কেটে রেখেছিল। দেয়ালে ঠেসান-দেয়া সিট পেয়েছিলুম । ভালই হল । আমি ফিসফিস করে বললুম, আজকে কিছু বাঁথিসনি তো ? মিলি আমার বাঁ-হাতর মধ্যমা আঙুলটা নিয়ে বলেছিল, এইতে রাখ, শুধু রাখবি, নাড়াবিনা কিন্তু, নাড়ালে কাল থেকে আসবো না ।
আমি আঙুলটা নাড়াতে-নাড়াতে বললুম, নাড়ালে কী হয় ?
মিলি আমার বোতাম-খোলা প্যান্টে হাত ঢুকিয়ে টিপে-টিপে ফোলাতে লাগল আর বলতে লাগল, এই হয়, এই হয়, এই হয়, এই হয়, হেই হয়, এই হয়, এটা আমার আমার আমার । আমি এত উত্তেজিত হয়েগিয়েছিলুম যে সামলাতে পারলুম না । রুমাল বের করে পুঁছতে হল । রুমালটা নিজের কাছে রেখে নিয়ে মিলি বলেছিল, এটা আমার ওয়েডিং গিফ্ট । রুমালটা বুকের মধ্যে গুঁজে মিলি বলল, চল এবার, ফিলিম দেখে কী হবে ? আমরা দুজনে বাইরে বেরিয়ে গেলুম , ইনটারভালের আগেই । বাইরে বেরিয়ে মিলি রুমালটা শুঁকতে-শুঁকতে খুব জোরে হাসতে লাগল । হাসতে-হাসতে বলল, অদ্ভূত ব্যাপার এই প্রেম ; তুই এটা প্রেম ভাবছিস তো ? আমি কিন্তু ঠিক করে নিয়েছি তু-ই আমার প্রেমিক । কিন্তু আমার কিছু হবার আগেই তোর হয়ে গেল কেন ? তোর সঙ্গে ঘর বাঁথা যাবে না , এক্কেবারে প্রেমিক হবার অযোগ্য তুই । দিপলি বলেছে, দুজনের একসঙ্গে হওয়া মানে প্রেমিক-প্রেমিকার রাজযোটক । ঠিকুজি-কুষ্টি মেলাবার সময়ে আঁক কষে এটাই তো দ্যাখে , সেই বিয়ে সফল হয় ।
—তোর জন্যেই তো হল, বলেছিলুম ওকে ।
দিপলি বলেছিল, প্রথম দিনেই দেখে নিতে । তাই টেস্ট করলুম। তুই পাস । লেটার পাবি প্রেমে । বাব্বাঃ, কত স্টক তোর , প্রেমে টইটুম্বুর । আনন্দিত আননে বলেছিল মিলি ।
আমরা দুজনে অনেকক্ষণ চুপচাপ হাঁটলুম , চিনেবাদাম খেলুম  । চিনেবাদাম খেতে-খেতে মিলি বলেছিল, ফুচকা খেয়ে চুমু খাস , তার মতন আর মজা নেই । দিপলি আর নীতিদিদির বর প্রায়ই ফুচকা খেয়ে চুমু খায়, টকঝাল চুমু । নানা স্বাদের চুমু হয় । বড়-বড় কবি-মনীষিরা লেখে গেছেন । তুই সেসব পড়তে পারবি না , সংস্কৃততে লেখা ।
যাবার আগে আমি বললুম, কালকে আমার পালা, তুই কিছু করবি না । ও বলেছিল, ঠিক আছে , তুই যা করার করে নিবি , তারপর আমি আমার ওয়েডিং গিফ্ট নেবো । আমার তো আর অত তাড়াতাড়ি তোর মতন রসগোল্লার রস বেরোবে না ।  আমি নিজে-নিজেও নিজের মজা নিই , ক্লাসে অনেকেই নিজে-নিজে আনন্দ নেয় । ছেলেরাও তো নিজে-নিজে আনন্দ নেয় । তুই নিস ? রোজ দুটো করে হাফ-বয়েল ডিম খাবি । কেন বলতো ? তাহলে রস অক্ষুন্ন থাকবে , দিপলি বলেছে । দেখিসনি, ফুচকায় রস থাকে বলে খেতে ভালো লাগে , মুখে ঢোকালি কি ফুচ ।
পরের দিন আমরা লাইটহাউসে গেলুম । মিলি বাড়ি থেকে চাইলেই পয়সা পেতো । আমি বাড়িতে হাতখরচ চাইলে খেতুম চড় । লাইটহাউসে আমরা চুমু খাবার সুযোগ পেয়ে গেলুম । উনটারভালে বাইরে বেরিয়ে ফুচকা খেয়ে আবার চুমু খেলুম । চুমু খেতে যে এত ভালো লাগে জানতুম না , ফুচকা অর নো ফুচকা ।  চুমুটা খাবার পর থেকে আমরা দুজনেই চুমু খাবার সুযোগ খুঁজতুম । মিলির মোটা-মোটা ঠোঁটের গরম গন্ধ আমার ভালো লাগত । ওর ভাল লাগত ওয়েডিং গিফ্ট ; এই ওয়েডিং গিফ্ট খেলা খেলতে ওর ভালো লাগত । কত যে ওয়েডিং গিফ্ট ওকে দিয়েছি তার হিসেব নেই । তবে রুমালের বদলে কাপড়ের টুকরো ওই আনত ।
একদিন ওকে বললুম তোর বুকে হাত বোলাবো কী করে ? তোর বুক দেখতে খুব ইচ্ছে করে । ও বলল, শীতকাল তো আসছে , একটু অপেক্ষা কর , সামনে দিকে বোতামখোলা একটা সোয়েটার আছে আমার , সেইটে পরে বেরোব , ভেতরে পরব না কিছু । বড়দিনের দিন সেই দিনটা এলো । অমরা ছবিঘর সিনেমা হলে গিয়েছিলুম । মিলি ওর সোয়েটারে বোতাম খুলতেই ফিল্মের আলোয় ওর বুকের ঢেউ আরও গোলাপি হয়ে উঠেছিল , আর ওর বুকের ওপর দেখতে পাচ্ছিলুম নায়ক আর খলনায়কের মারামারির আলোছায়া । আমি ওর কাছ ঘেঁষে হাত বোলালুম , বললুম, মুখ দিতে ইচ্ছে করছে রে । মিলি বলল, পরশু বাড়িতে কেউ থাকবে না ; মা-বাবা যাবে দক্ষিণেশ্বরে , আমি বলে দিয়েছি পরীক্ষার পড়া আছে । তুই দুপুর বেলা চলে আসিস , সঙ্গে বইখাতা নিয়ে আসিস । কেন বলতো ? যদি অন্য কেউ হঠাৎ এসে পড়ে । ড্রইংরুমে বইখাতা খুলে রাখব । কেন বলতো ? কেউ এলে ভাববে তুই আমাকে পড়াচ্ছিস । সবাই জানে তুই ভাল ছাত্র , আর আমি ফেলটুস । পড়ে কি করব ? কেন বলতো ? সংসার তো তুই চালাবি , আমার শুধু তো সংসারের খাটনি থাকবে । কত প্রেম করব দুজনে , ওফ, ভাবলেই তোকে আলুপোস্ত করে ফেলতে ইচ্ছে করে ।
আমি স্কুলব্যাগ বইখাতা জিওমেট্রর বাক্স নিয়ে মিলিদের বাড়ি গিয়ে দেখি ও ড্রইংরুমের কার্পেটের ওপর বই-খাতা খুলে রেখেছে । আমার কাঁধ থেকে তাড়াতাড়ি স্কুলব্যাগ নিয়ে বই-খাতা পেনসিল বের করে রাখল , এমনভাবে যাতে মনে হয় ওকে বুঝিয়ে দিচ্ছি । বলল, দাঁড়া, আমার টাওয়েলটা নিয়ে আসি ; কেন বলতো ? তোর রসগোল্লার রসে যদি কার্পেট নোংরা হয়ে যায়, বড়রা ঠিক টের পেয়ে যাবে । তারপর  জিগ্যেস করল, রবার এনেছিস ?
আমি বললুম, হ্যাঁ, জিওমেট্রি বক্সে আছে ।
—ওঃ মাগো, একে নিয়ে কী করব ! দুহাত ওপরে তুলে বিরক্তি প্রকাশ করল মিলি : ওই রবার নয় রে গাধা, প্রেম করার রবার , ওফ, যদি জানতুম তাহলে দিপলির কাছ থেকে নিয়ে নিতুম । নীতিদিদির বর নিজের পকেটে নিয়ে ঘোরে , জানিস ? কখন দরকার পড়ে, বলা তো যায় না । কোনো সুযোগ ছাড়ে না ওরা । আমার অবাক চেহারাখানা দেখে আরও বিরক্ত হল মিলি । বলল, প্রেম করার সময়ে ছেলেরা পরে, জানিস না ? কেন বলতো ? না পরলে রসগোল্লার রস ভেতরে পড়ে বাচ্চা ফুটিয়ে ফেলবে । আজকের পুরো সুযোগটা ডোবালি তুই । নাঃ, তোকে নিয়ে পারা যায় না , মোটেই প্রেমিক হবার যোগ্য নোস । হয় ভগবান, কাকে যে প্রেমিক বাছলুম ।
ও বারবার এত হাত নাড়িয়ে কথা বলছিল যে ওর ফ্রক ওপরে উঠে যাচ্ছিল ঞাঝে-মাঝে , আর তাইতে বুঝে গেলুম যে ফ্রকের তলায় কিছু পরে নেই । আমি সজোরে জড়িয়ে ধরে ওর মোটা-মোটা ঠোটে আমার ঠোঁট চেপে ধরে মিলির কথাবলা থামালুম। ও আমাকে টেনে বই-খাতার মধ্যে ফেলল, বলল, তুই আমার পায়ের দিকে মাথা কর , দিপলি বলেছে, রবার সঙ্গে না থাকলে এই উপায় করতে হয় । আমার আগে মিলি নিজেই আমার মাথার দিকে পা করে ফেলল আর আমায় বলল, ওখানে জিভ ঘসতে থাক , মুখ ঘসতে থাক । যখন বলব তখন থামবি ; আমার হয়ে গেলে আমি তোর শুরু করব ।
উল্টো দিকে মুখ করে শুয়ে মিলি বলল, তোর বুকের মধ্যে কী বাজছে বলতো ?
আমি জিগ্যাস করলুম, কী ?
ও আমাকে বলার আগেই গাল ঘসতে লেগে গিয়েছিলুম ; নেশা ধরা গন্ধ, চোখ বুজে গন্ধ নিতে-নিতে আমার উঠতি দাড়ি দিয়ে ঘসছিলুম । মিলি বলল, কবিতা বল না , যা জানিস, তা-ই বল, আর যা করছিস তা-ই কর, ভেতরে গিয়ে বল ; ওটাও কবিতা বোঝে ।
আমি টুইংকল টুইংকল লিটল স্টার হাউ আই ওয়ান্ডার হোয়াট ইউ আর বলতে-বলতে কী যে করছিলুম, নিজেই জানি না, যতক্ষণ না মিলি থামতে বলল, ততক্ষণ । মিলি কেঁপে-কেঁপে জোরে জড়িয়ে ধরল ।  তারপর যা করল তা আজও মনে হয় আত্ম-আবিষ্কার । মুখে পুরে নিয়ে জিভ ব্যবহার করে রসগোল্লার রস বের করে ফেলল , আর গিলে নিল, স্পষ্ট টের পেলুম ।
—কী করছিস কি, পাগল না কি তুই, বললুম উঠে বসে ।
মিলি বলল, দিপলিও খায় , বেশ ভালো স্বাদ , মন ভরে গেল, সত্যি, আলোয় আলো হয়ে গেল মনটা । তুই এবার বই-খাতা গুটিয়ে, যা, কেটে পড় ; ভাগ্যিস কেউ আসেনি । এবার আমিই রবার যোগাড় করে রাখব , তোর দ্বারা কিসসু হবে না ।
আমি বললুম, এখনও তোর বুকটাই ভালো করে দেখা হল না আর তুই তাড়িয়ে দিচ্ছিস । মিলি ফ্রক ওপরে তুলে বলল, নে, যত পারিস দেখে নে শিগগির ; আশ মিটিয়ে নে । ফ্রক তোলার ফলে ওর মুখ ঠাকা পড়ে গিয়েছিল । আমি সেই সুযোগে ওকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মুখ গুঁজে দিলুম । ঢেউয়ের ওপর জিভের নৌকো বাইতে লাগলুম , ও বাধা দিল না ; বলল, ঠিক আছে, কর কর , বেশ ভাল্লাগছে । বলল, তোর ভেতর কোন বাজনা বাজছে বলতো ? পুজোর বাজনা : না না চাই, হ্যাঁ হ্যাঁ চাই না, না না চাই , হ্যাঁ হ্যাঁ চাই না, না না চাই, হ্যাঁ হ্যাঁ চাই না , না না চাই, ঠিক কি না ?
আমি দাঁত বসিয়ে দিতে, উঃ, জানোয়ার কোথাকার, সুযোগ পেয়েছিস কি নিজের রূপে এসে গেলি ।
তখনকার মতো আমার প্রথম প্রেমের সেখানেই ইতি ।
আমাদের দুজনকে বাবা কোথায় একসঙ্গে দেখে ফেলেছিলেন । আমরা নাকি খুব হাসাহাসি করছিলুম । ব্যাস, চড়, চড়ের পর চড়, আরও চড় । বাবার ধারণা যে বাইজি নাচাবার রক্ত আমার শরীরে ডাক দিতে লেগেছে । আমাকে ওই রক্তদোষ থেকে বাঁচাবার জন্যে বাবা এই বাগানবাড়িতে থাকাটা শ্রেয় মনে করলেন ।  আমার নারী-সঙ্গর সাহস, কেন কে জানে, ছিল না তখন । তা ঢুকল কলেজে ঢুকে , হস্টেলে থাকার সময়ে , বাবার চোখের আড়ালে ।
বাবা প্রেম ব্যাপারটা একেবারে সহ্য করতে পারতেন না , সম্ভবত নিজে প্রেম করে বিয়ে করাটা সফল হয়নি বলে । স্কুলের দিনে মিলির সঙ্গে তারপর দেখা হলে ওয়েডিং গিফ্ট বলে ডাকত না । বলত, কী রে জারজ, বাপকে ভয় পাস, প্রেম করার মুরোদ নেই চললেন উনি বুকে হাত বোলাতে । তবে তোকে আমি ছাড়ব না, দেখে নিস । যদি আমার বিয়েও হয়ে যায়, আমি তোর বাচ্চাকে পেটে নেবোই নেবো । তুই পৃথিবীর যেখানেই থাকিস খুঁজে বের করব তোকে । তোর মতন কেউ আমার সঙ্গে প্রেম করতে পারবে না , জানি আমি । তারপর রাস্তায় দাঁড়িয়েই কাঁদতে আরম্ভ করে দিয়েছিল ।
আমি বলেছিলুম, তুই কি উন্মাদ ?
ও বলেছিল, হ্যাঁ, আমি উন্মাদ ; তা না হলে কি করে এক কথায় রাজি হয়ে যেতুম ? তুই এত ভিতু ? এরকম ঢ্যাঙা ছেলে, চওড়া ছাতি, হিরি-হিরো চেহারা, আর সেই ছেলেটা কিনা নিজের বাবাকে ভয় পায় ! প্রেমকে ভয় পায় ! প্রেমের জন্যে মানুষ মরতে পর্যন্ত রাজি হয় আর তুই প্রেমিক হয়েও পালালি বাপের ঠ্যাঙানির ভয়ে ! তবে ছাড়ব না তোকে, এই বলে রাখলুম , দক্ষিণেশ্বরের দিব্বি ।
বাবাকে কেউ নিশ্চই খবর দিয়ে থাকবে । আমার এখন মনে হয় দিপলির সঙ্গে সব কথা বলাবলি করার ফলে নীতিদিদির বরের কানে গিয়ে থাকবে আমাদের প্রেম-কাহিনি । বাবা পাড়াটাই ছেড়ে দিলেন ।
আমরা তারপর দাদুর বাগানবাড়িতে চলে এলুম । একদিক থেকে ভালো হল । শহর থেকে দূরে বলে বাবার গাড়ি করে স্কুলে যাতায়াতের সুবিধে হয়ে গেল । তারপর কলেজে গিয়ে  হস্টেলে ভর্তি হলুম । মিলির সঙ্গে প্রেমের নবীকরণের সুযোগ ছিল । কিন্তু আমার কেমন যেন গিল্ট ফিলিং হতে লাগল । কত আর ধোকা দেব বোকা মেয়েটাকে ! বোকা বলেই ওকে ভালো লাগত । ভয় ছিল যে শেষে পেটে বাচ্চা-ফাচ্চা এসে গেলে কেলেঙ্কারি , এমন ডাকাবুকো মেয়ে মিলি যে নিজে থেকেই হয়তো চেষ্টা করত যাতে পেটে বাচ্চা এসে যায় ।  বাবা জানতে পারলে চড় মেরে-মেরে আধমরা করে দিতেন ।
কলেজে ঢুকে সহপাঠীদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সহায়তায় কল গার্লদের জগতটার সঙ্গে পরিচয় হল ।
এক কথায় রাজি হয়ে যাওয়া, এই অভিব্যক্তিটা এই বুড়ো বয়সে আমায় হন্ট করে । উন্মাদ ? হ্যাঁ, আজ জানি, আমি উন্মাদ ।
বাগানবাড়িটা নিয়ে দাদু আর দাদুর বাবার বনিবনা ছিল না । দাদুর বাবা নাকি বাইজিদের নিয়ে কেলো করতেন বাড়িটায় । দাদুর নামে করে দিয়ে যাননি । নোটিফায়েড এরিয়ে বলে দাদুও বিশেষ গা করেননি দাদুর বাবা মারা যাবার পর ।  দাদু মারা যেতে বাবাও মিউটেশানের জন্যে করেননি কিছু ।  আমিই বা কী করব সম্পত্তির মালিকানার ঝঞ্ঝাটে ঢুকে !
ইউরোপ যাবার আগে, উত্তর ইউরোপের কয়েকটা দেশের ভিসা পেয়েছিলুম , বাবা এত টাকা আমার জন্যে রেখে গিয়েছিলেন যে মন ভালো করার উদ্দেশ্যে ঘুরে বেড়ানো ছাড়া অন্য পথ ছিল না । অন্ধ্র থেকে ফিরে এসে আমার মন ভেঙে পড়েছিল । দেশে থাকলে বাগানবাড়িতে, নতুবা বিদেশে, এভাবেই জীবন কাটাব ঠিক করেছিলুম ।
ওবেরয় গ্র্যান্ড থেকে বেরিয়ে , এয়ার কান্ডিশানের শীতটা দেহ থেকে ঝরিয়ে ফেলার উদ্দেশ্যে, ফুটপাতের রোদে গিয়ে দাঁড়াতেই , একজন মহিলা, কাঁধে চামড়ার সুদৃশ্য ব্যাগ, আমাকে আঁকড়ে ধরলেন ।  ছাড়ুন, ছাড়ুন, কী করছেন কি , এভাবে, কে আপনি ? বলে, ছাড়াতে, দেখি মিলি । দেখেই ভয় করে উঠল , বাবার ভয় নব< বাবা তো স্বর্গে , অন্য এক অচেনা ভয় , বিশ্বাসঘাতকরা হয়তো এরকম ভয়ে আচমকা আক্রান্ত হয় ।  বুকের ভেতরে  বাবা তখন হৃৎপুণ্ডকে চড় মেরে চলেছেন ।
—জানি, তুই চিনতে পারবি না , মিলি কে চিনতিস কি , যখন স্কুলে পড়তিস ? আমি সেই মিলি । আজকেই, আজকেই বলি কেন, এই কিছুক্ষণ আগে আমার ডিভোর্স হয়ে গেল । কেন বলতো ? আমার বর ভালো চাকরি করে না , আমার রোজগার উড়িয়ে বেঁচে থাকতে চাইছিল বাঞ্চোতটা । মিলি বলল, সরাসরি আমার চোখে চোখ রেখে ।
—আমি তো পরশু ইউরোপ চলে যাচ্ছি । ভয়ে আমার মুখ দিয়ে পলায়নের অ্যালিবাই বেরোলো । টের পাচ্ছিলুম ঘেমে উঠছি ।
—তোর বাবা তো কবেই অক্কা পেয়েছেন , এখনও কিসের ভয়ে মরিস ? প্রথম প্রেমকে ভয় পাস ? নিজেকেই ভয় পাস তুই । কেন বলতো ? নিজেই নিজেকে জানিস না ।
—প্রেমকে ভয় ? মায়ার স্মৃতি উসকে উঠল । মিলি বুঝতে পারছিল আমি কোনো সংবেদন চেপে রাখতে চাইছি । বললুম, না রে, প্রেমকে ভয় পাই না আর , প্রেম বিপর্যস্ত করে দিয়ে চলে যায় । আমি তোকে বিপর্যস্ত করে দিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছিলুম । তোর দুঃখ আর অসহায়তা আজ অনুভব করি ।
—চল না, তোর বাড়ি যাই , দুজনে দুঃখ ভাগাভাগি করব । চিনেবাদামের দুপুর আর ফুচকার রাতগুলোর গল্প করব । তুই তো সেই উত্তর চব্বিশ পরগণার কোথায় যেন থাকিস , বিশাল প্রাসাদ আছে তোদের, তা তো দেখাই হয়নি । নিয়ে চল না । ভয় নেই তোর চলে আসব , আমার নিজের ছোট্ট ফ্ল্যাট আছে গল্ফগ্রীনের চার তলায় ; সেখানে তোকে নিয়ে যেতে পারতাম । আজকে নয় । কেন বলতো ? লোকেরা আজকে আমার মুখ দেখার জন্যে তৈরি হয়েই থাকবে , বিয়ে ভাঙনের আনন্দ নেবে । আমার হাত দুটো নিয়ে বলল মিলি ।
নিয়ে গেলুম ওকে । পথে দুবার ট্যাক্সি পাল্টালুম । নির্বাক দীর্ঘ পথে গায়ে গা লাগিয়ে মিলি আড়চোখে মাপজোক করছিল আমরা পরস্পরের কত আলোকবর্ষ দূরে চলে গেছি ।
বাড়িতে ঢুকে দরজা বনধ করার সঙ্গে-সঙ্গেই মিলি জড়িয়ে ধরল আমাকে । ফোঁপাতে লাগল । কারণ ঠাহর করতে পারলুম না । কাঁদবার রসায়ন আমার শরীরে ঘোর অনর্থ গড়া শুরু করেছিল ; তা চাপা দিতে আমিও জড়িয়ে ধরলুম মিলিকে যাতে ও আমার মুখের দিকে তাকাতে না পারে । ও আমার শঅর্ট টেনে ছেঁড়ার চেষ্টা করতে লাগল, ছিঁড়েও গেল বোতামগুলো । বলতে লাগল, তোর বাচ্চা চাই, তোর বাচ্চা চাই, তোর বাচ্চা চাই…
আমার ভয় নাকি যৌনতা তা জানি না । একজন যুবতী জড়িয়ে ধরেছে আমায় , তার নরম বুক চেপে বসিয়ে দিয়েছে  আমার বুকে, নিজের পোশাক নিজেই দ্রুত খুলে ফেলার প্রয়াস করছে । আমি চোখ বুজতেই মায়া ভেসে উঠল, মায়ার উলঙ্গ দেহ দেখতে পেলুম চোখের সামনে ।
মিলি বলল, আমি আজ তোকে খুন করে তবে যাব , খোল, খোল, খোল, খোল….জানি, তোর বুকের ভেতরে সেই পুরানো বাজনাটা বাজছে, না না চাই, হ্যাঁ হ্যাঁ চাই না, না না চাই, হ্যাঁ হ্যাঁ চাই না, না না চাই, হ্যাঁ হ্যাঁ চাই না, না না চাই, হ্যাঁ হ্যাঁ চাই না, না না চাই, হ্যাঁ হ্যাঁ চাই না, না না চাই, হ্যাঁ হ্যাঁ চাই না , না না চাই, হ্যাঁ হ্যাঁ চাই না । আর আমার ভেতরেও সেই পুরানো বাজনাটা বাজছে চাই চাই চাই চাই চাই চাই চাই চাই চাই চাই চাই…..
—কি করছিস কি , পরশু আমি চলে যাব রে , কি করবি তুই তারপর , এখনও তুই উন্মাদ থেকে গেছিস, ছাড়, ছাড়, ছাড় ।
—ওসব আমি বুঝব ; বললুম না তোকে । আজ তোকে খুন করে তবেই যাব , তোর খাবারে বিষ মেশাব , দে, তোর বাচ্চা দে…
নারী জড়িয়ে ধরলে আমার পক্ষে আত্মনিয়ন্ত্রণ যে আসম্ভব তা আমি জানি । বোধহয় মিলিও জানত । আমি ওকে দুহাতে পাঁজাকোলা করে তুলে দাদুর বাবার ঘরে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করালুম , এই আশায় যে ঘরের আসবাব ওকে পাগলামি থেকে মুক্ত করবে । দাদুর বাবার ঘরে ওনার সময়ে শিকার করা স্টাফড বাঘ, হরিণ, মোষ, জংলি বিড়াল ইত্যাদি দিয়ে সাজানো ; দেয়ালে ওনার সঙ্গে ওনার স্ত্রী আর দাদুর তেলরঙে বিরাট ছবি , ওনার প্রিয় বাইজির তেলরঙে পোরট্রেট , দেয়ালে মোষের, হরিণের করোটি । মিলির কোনো পরিবর্তন হল না । পরিবর্তে , আমার গলা জড়িয়ে বলে উঠল, ওঃ, এই ঘরটায় তো কত অবৈধ ভালবাসাবসি হয়েছিল , না হয় আরেকটা হল । রসে রস মিশলে প্রেম আর অবৈধ থাকে না , বলে রাখলুম তোকে ।
সারা রাত পোশাকহীন আর অভূক্ত থেকে সকালে শাড়ি-ব্লাউজ পরতে-পরতে ও বলেছিল, রক্ত দেখে তোর সন্দেহ হয়নি ? তোকে মিথ্যা কথা বলেছিলুম , আমার বিয়েই হয়নি তো ডিভোর্স হবে কোথ্থেকে !
আমি স্তম্ভিত ।
রাতে ওর বুকে একটা দাগ দেখিয়ে বলেছিল মিলি, এই দ্যাখ, সেই তুই কামড়ে দিয়েছিলি, তোর দাঁতের বিষে ঘা হয়ে গিয়েছিল । আমি ওষুধ লাগাতে দিইনি, লাগাইনি, তোর স্মৃতিচিহ্ণ ধরে রেখেছি ।
আমার জীবনে আমি কোনো নারীকে বুঝে উঠতে পারিনি । হয়তো সেকারণেই আমি আকৃষ্ট হই, আজও । এই বার্ধক্যে ।
ও বলেছিল, তোর বাড়ি দেখে রাখলুম , যদি আমার আজকের উদ্দেশ্য সফল না হয়, তাহলে একদিন চুপচাপ এসে তোকে খুন করে যাব । এমনভাবে খুন করব যে কেউ বুঝতে পারবে না তুই কি করে  মরলি ।
আমি ওকে ট্যাক্সিতে চাপিয়ে, ভাড়া দিয়ে দিতে চাইছিলুম । মিলি বলল, ট্যাক্সিঅলার সামনেই, তুই কি সেবার দাম দিচ্ছিস নাকি ? আমাকে পি পথবৌমা পেয়েছিস নাকি ? দেখি কি হয়, নয়তো সত্যইই তোকে জীবন দিয়ে দাম চোকাতে হবে । মনে রাখিস । ঠাট্টা করছি না, সিরিয়াসলি বলছি । ডায়েরিতে লিখে রাখ , পুলিস তোর লাশ পেয়ে আমার খোঁজে আসবে তাহলে ।
শেষনির কথামতন লিখতে-লিখতে বেশ লাগছে । সব-কিছুই মনে করতে পারছি , এত দিন পরও । মিলির মোটা-মোটা  ঠোঁট, গোলাপি ভরাট বুক, বুকে কামড়ে দেবার দাগ, সোঁদা-সোঁদা গন্ধ । আর ওর প্রতিজ্ঞা যে, আমার বাচ্চাকে ও পেটে নেবেই নেবে , নয়তো খুন করবে আমাকে ।  আমি ওর স্মৃতিতে আমার শুক্রকীট ডক্টে অনিল পালেসকরের লিকুইড নাইট্রোজেনে ফ্রিজ করিয়ে রেখেছি ; চল্লিশ বছর রেখে দেবার কনট্র্যাক্ট । এখন তো কাগজে পড়ি ষাট-বাষট্টি বছরেও ফ্রোজ করা স্পার্ম থেকে বাচ্চা হয় । ডক্টর পালেসকর বলেছেন কোনো সমস্যা হবে না । আপনার নির্দেশ অনুযায়ী দাবিদার মহিলা যোগাযোগ করলে আমরা প্রয়োজনীয় আইভিএফ করে দিতে পারব , আপনার স্পার্ম কাউন্ট অনেক বেশি ।
মিলি তুই কোথায় ? তুই কি সফল হয়েছিলি ? তুই কি কেওড়াতলার স্বর্গদ্বার দিয়ে উধাও হয়ে গেছিস ? কেই বা তোকে জানাবে তোকে নিবেদিত আমার স্পার্মের কথা , শীতঘুমে নিদ্রিত তোর সন্তান-সন্ততির অপেক্ষার কথা !
ওর, মানে মিলির, চামড়ার ব্যাগটা পড়ে রয়েছে ; মিলি বাড়িতে ঢুকেই যেখানে ওটা রেখেছিল । ব্যাগটায় একটা ছোরা দেখে আমার আরও ভয় হল যে সত্যিই মিলি ইনসেন নয়তো । বা, হয়তো, ওর প্রেম ইনসেন , ও নয় ।
আমারও বেশ লাগল হে কংকাল প্রেমিক, তোমার প্রথম প্রেমের গল্প পড়ে । ইন্সপেক্টার রিমা খান নিজেকে শুনিয়ে বলল , সিগারেটের ধোঁয়া হাওয়ায় উড়িয়ে । তবে তুমি নিজের ঠিকানাটা লিখলে না কেন ? কোথায় থাকতে ভবানীপুরে ? মিলিদের বাড়ির নম্বরটাই বা কি ? মিলির বাপের নাম কি ?  দিপলি কে ? নীতিদিদির বর লোকটা কে ? শ্রাদ্ধ করতে বসে লোকে দাদু-দাদুর বাপের নাম  বলতে পারে না । আর এখানে একজন, যে কিনা নিজের নাম বলছে না, অথচ গ্রেটগ্র্যান্ড ফাদারের কাহিনি শোনাচ্ছে ! প্রথম প্রেমের রহস্যময়ী প্রেমিকার কাহিনি শোনাচ্ছে , নিজেকে শোনাচ্ছে ।  হাউ অ্যাবসার্ড । মায়া পাল নামে সেই মহিলার কী হল তাহলে ? এটা কি ডাইভারসানারি ট্যাকটিকস ? কংকালটা বেশ ঘোড়েল ।
মিলি কি এসে খুন করে যাবে ? মনে তো হয় না । প্রেমে উন্মাদ প্রেমিকা বলে কথা, অপেক্ষা করেছে বছরের পর বছর পালিয়ে যাওয়া প্রেমিকের জন্য ।  কিন্তু মিলির চামড়ার ব্যাগটা তো সিজার লিস্টে নেই । ওটা কি হল ? কংকাল প্রেমিকের দাদুর বাবার কিউরিও ঘরটাও  অব্যবহৃত । ওই ঘরটার তালা জংধরা ছিল ; অর্থাৎ কংকাল প্রেমিক নিজেও, সম্ভবত মিলি এপিসোডের পর খোলেনি । বেডরুমটা কংকাল প্রেমিক ব্যবহার করত না , স্টাডিতেই শুত , আর সেখানেই মরেছে । লোকটার স্টাডিতেও জমকালো পালঙ্ক । মহিলার চুলের গোছা পাওয়া গেছে , সেটা তাহলে মিলির নয় বলেই মনে হচ্ছে । তাহলে কার ?
যাহোক, দুটো সূত্র তো পাওয়া গেল । বেডরুমে হাতের ছাপ যা পাওয়া গেছে, তার দ্বিতীয় আর তৃতীয় স্যামপেলের একটা হয়তো মিলির ; অন্যটা কার সন্ধান করতে হবে । প্রথম আর দ্বিতীয় ইনভেসটিগেটিং অফিসাররা আঙুলের ছাপ স্টেট ক্রাইম ব্র্যাঞ্চ রেকর্ডস ব্যুরোয় সংরক্ষিত ছাপগুলোর সঙ্গে মিলিয়েছিলেন ; মেলেনি , কেননা রেকর্ডে কেবল ক্রিমিনালদের ছাপই রক্ষিত । কংকাল প্রেমিকের হত্যায় কোনো পেশাদার খুনির হাত আছে বলে আপাতত মনে হচ্ছে না ।
শুক্রকীত সংরক্ষণ করার এই ডাকতারের নাম দেখেছি সংবাদপত্রে । অনেকের আইভিএফ করে বাচ্চার জন্ম দিয়েছেন । ইনি নিশ্চয় মুম্বাইয়ের সেই বিখ্যাত ডাকতার । নিজেই যাব । ডিজিকে অনুরোধ করব যাতায়াতের খরচ অনুমোদন আর মুম্বাইয়ের কমিশনারকে একটা চিঠি দিয়ে দিতে যাতে সরকারি অতিথি হয়ে থাকতে পারি ।
রিমা পড়তে-পড়তে ভাবছিল, কংকালটা বেশ লিখেছে , উপন্যাস টাইপের । ডিজিকে জিগ্যেস করতে হবে এই পুরো লেখাটা কোনো ডিটেকটিভ রাইটারকে দিয়ে নিরঞ্জন দত্ত নামে বই ছাপানো যায় কি না । কিন্তু মাঝখানে হঠাৎ এই গল্পটা ঢোকাতে গেল কেন ? কংকালটা বোধ হয় ঠাহর করতে পারেনি যে তার প্রকৃত প্রেমিকা কে ! সত্যিই, দুজন তরুণি যদি একজন পুরুষকে ভালোবাসে , তাহলে কোন নিক্তি প্রবোগ করেই বা বুঝবে যে কাকে ও চায় । ধরা যাক আরও কয়েকজন তরুণী পুরুষটাকে প্রেম নিবেদন করে বসল , তখন লোকটা কি করবে ? মায়া আর মিলি এই দুজন একেবারে বিপরীত মেরুর মহিলা । এদের দুজনকেই যদি খুঁজে পাওয়া যায় , তাহলে বাঙলোবাড়িতে এনে কংকালটাকে দেখিয়ে জানতে চাইবে, চেনে কিনা ।

0 comments:

Post a Comment