Thursday, December 3, 2015

প্রেমিক কংকালের আত্মক্ষত



পরের সিডিটার প্রিন্টআউট পড়ায় একাগ্র হল রিমা, যদি কোনো সূত্র পাওয়া যায় :
নাম নিরঞ্জন পাল, বণিক, ব্যানার্জি, দত্তমজুমদার, মিত্র, লিঙ্গা, গারু, ওয়েডিং গিফ্ট , সাকার, লম্বুলোচ্চা ইত্যাদি । একাধিক ওরফেও পাওয়া গেছে । বয়স আনুমানিক এত বছর এত মাস এত দিন । উচ্চতা পাঁচ ফিট নয় ইঞ্চি । ওজন এত কিলো । মুখাকৃতি সম্ভবত ওভাল , চওড়া কপাল । চুল কাঁচা-পাকা । গায়ের  রঙ ফর্সা । এই ডিস্কে টেক্সট ঢোকাবার সময়ে প্রথম দিন লাল টিশার্ট , ব্লু ফেডেড জিনস  পরে আছি ।
কেন এসব লিখছি ? শেষতম মহিলা জানতে চেয়েছেন । মেয়েটির নাম বিদকুটে । আমি তাই ওকে ‘শেষনি’ বলে ডাকি । ও নিজেও চায় না যে আমি ওর নামটা এখানে রেকর্ড করি । কিন্তু আমি শেষনিকে বলিনি যে আমি সিডিতে তুলে রাখছি । ও শুধু জানে যে হার্ড ডিস্কে থাকছে । ও আমার কমপ্লিট লাইফ-স্টোরি চায় । আমি বাংলায় লিখছি বটে, কিন্তু অক্ষরগুলো থাকছে তেলেগু । ও বলেছে কাউকে দিয়ে বাংলা অক্ষরে কনভার্ট করে নেবে । নিক । কী কাজে লাগবে জানি না । নিরঞ্জনের শিক্ষা গণিতে স্নাতকোত্তর ।  আয়ের স্রোত বহুবিধ । দাদুর বাবার সোনাদান , দাদুর জমিজিরেত, বাবার সম্পত্তি, যা ভাগ্যিস বেদখল হয়নি ; কোমপানি ডিভিডেন্ড ; ফিক্স ডিপজিটস ; গভমেন্ট সিকিউরিটিজ । বাবা নামকরা ফৌজদারি উকিল ছিলেন । কত  খুনি, জোচ্চোর, ডাকাত, ব্যাংক জালিয়াত, বাটপাড়, রাজনৈতিক গুণ্ডা , টাকা ছয়লাপকারীদের জেল থেকে বাঁচিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই । মা ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা ; ব্রাহ্মণ পরিবারের ।
আমি প্রথম চাকরি পাবার দিন বাবা মারা গেলেন। আঘাত সহ্য করতে না পেরে মা মারা গেলেন তিন মাস পর , একই তারিখে, স্ট্রঞ্জলি ; অথচ দুজনের যে খুব ভাব-ভালবাসা ছিল তা নায় । নারী-পুরুষের এরকম ব্যাখ্যার অতীত সমস্যাসংকুল সম্পর্ক যে সম্ভব, তা আমি নিজের জীবন থেকেই জানি ।
জীবনের বাঁকবদলগুলো, যতবার ঘটেছে বাঁকবদল, সব সব সব সব নারীকেন্দ্রিক ; নারীর ইচ্ছার, নির্দেশের, দেহের, আকর্ষণের, রহস্যের মোহে । স্কুলের শেষ পরীক্ষায় ভাল, সান্মানিক স্নাতকে খুব-ভাল , স্নাতকোত্তরে অত্যন্ত ভাল, তাদেরই কারণে , প্রভাবে, চাপে, আদরে । চাকরিতে যোগ নারীর জন্যে উন্নতি নারীর জন্যে, চাকরি ছাড়া নারীর জন্যে , ভাসমান জীবিকা নারীর জন্যে , অবসরে পৈতৃক বৈভবে পরগাছাবৃত্তি নারীর কারণে । কে জানে, হয়তো মৃত্যুও নারীর হাতেই হবে ।
জীবনে নারীদের আসা-যাওয়া, সেনসেক্স ওঠা-পড়ার মতন, না ঘটলে, আমার ব্যর্থতা, ব্যথা, পরাজয়, গ্লানি, অপরাধবোধ, এ-সবের জন্যে কাকেই বা দায়ি করতুম ! কাকেই বা দোষ দিতুম আমার অধঃপতনের জন্যে ?  লোভি লম্পট মাগিবাজ প্রেমিক ফেরারি হয়ে ওঠার জন্যে ? হবার, নাকি হয়ে ওঠার ?
আসলে আমি একটা কুকুর । আগের সিডিতে লিখেছি, তবু রিপিট করছি শেষনির খাতিরে । যে-মালকিনির হাতে পড়েছি , সে য-রকম চেয়েছে, যে-রকম গড়েছে , তা-ই হয়েছি । সেবার কুকুর, কাজের কুকুর, প্রজননের কুকুর, গুপ্তচর কুকুর, ধাঙড় কুকুর, কুরিয়ার কুকুর, প্রেডাটার কুকুর, পাহারাদার কুকুর, মানসিক থেরাপি কুকুর, শোনার কুকুর, শোঁকার কুকুর, চাটার কুকুর, রক্ষক কুকুর, গাড়িটানার কুকুর, কোলের কুকুর, আদরের কুকুর, এই কুকুর, ওই কুকুর, সেই কুকুর ইত্যাদি ।  কিন্তু একমাত্র কুকুর যেটাকে আমি ভালবেসেছি, তা হল মালকিনিকে উন্মাদের মতন ভালবাসার কুকুর । কিন্তু আমার লেজটা জন্মের সময়ে যেমন আকাশমুখো ছিল , চিরকাল তেমনই থেকে গেছে । আজও, যখন আমার গা থেকে চুল ঝরে যাচ্ছে, চোখে ভাল দেখতে পাই না , ইন্দ্রিয়গুলো খর্ব হয়ে ক্ষয়ে চলেছে ।
ভাবি । যে-বয়সে আমার আসেপাশের লোকেরা ড্রইংরুমে নকল পিকাসো , নকল যামিনী রায় টাঙাতো, আমি টাঙাতুম আসল সিনেমা-সিন্দরীদের । এখনও সেরকমই কেউ একজন টাঙানো রয়েছে । যেমন-যেমন ফিল্মের নায়িকারা পালটেছে আমার দেয়ালের নায়িকাদের বদল ঘটেছে । আমার বয়সী লোকেরা ঘরের আলমারিতে রেখেছে রবীন্দ্ররচনাবলী । আমি রাখতুম হ্যাভলক এলিস , হেনরি মিলারদের । তবে, আমি সোনাগাছিতে যারা যায় তাদের ক্ষমা করি না । আমার কাছে নারীর অর্থ সম্পূর্ণ ভিন্ন । এমনকি আমি কল গার্ল বরদাস্ত করি , কিন্তু সোনাগাছি বরদাস্ত করতে পারি না ।  জানি না লোকে কি করে সেখানে যায় ! গলিটা দিয়ে গিয়েছিলুম একবার ; বমি পেয়ে গিয়েছিল ।
দাদুর বাবা বাইজি নাচাতেন, এই বাড়িতেই । বারোটা ঘর আছে বাড়িটায় । ওনার  কিউরিও ঘর দেখে সবাই স্তম্ভিত হয় । ওনার সময়ে অবশ্য ওটা কিউরিও ঘর ছিল না । বাবা ওনার ক্লায়েন্টদের দেখাবার উদ্দেশে ওটাকে কিউরিও ঘর বানিয়েছেন । বাইজিদের সঙ্গে যে-খাটে দাদুর বাবা শুতেন, সেই বিশাল পালঙ্ক আজও একইভাবে আছে । কল গার্লদের ওই ঘরে নিয়ে গেলে তাদের মুডই বদলে যেত । অনেকে আবার ডাক দেবার জন্যে অনুরোধ করত , এমনকি এও বলত যে কম টাকা দিলেও চলবে, রাতটা ওই ঘরে ঘুমিয়ে কাটাতে চায় । আমার কলেজের বন্ধুবান্ধবরা স্তম্ভিত হয়ে যেত দাদুর বাবার ঘরের সংগ্রহ দেখে ; নিজের প্রেমিকাকে নিয়ে এসে ওই ঘরে রাত কাটিয়ে গেছে কলেজের বন্ধুরা । কত রকমের সংলাপের স্মৃতি ঘুরে বেড়ায় ঘরটায় , নারী-পুরুষের দৈহিক সম্পর্কের তাপ থেকে চাগিয়ে ওঠা সংলাপ । ওই ঘরটা ইস্ট ইনডিয়া কোমপানির স্মৃতি । দাদুর ঘরটা রেনেসঁসের স্মৃতি ;মনীষীদের ছবি টাঙানো দেয়ালে-দেয়ালে । বাবার ঘর ? আধুনিক-অনাধুনিকের খিচুড়ি ; আলমারি জুড়ে আইনের মোটা-মোটা বই , গন্ধও আদালতের মতন । মায়ের ঘর দেখলে মনে হবে ভারতের সব দেবী-দেবতাদের সভা ; কোথা থেকে যে মা ওই সব ছবি এবং মূর্তি সংগ্রহ করতেন জানি না । রবি ভার্মা না থাকলে দেবী-দেবতার মুখ কি এত সুন্দর হতো !
আমার ঘর ? সিম্পল । আমি বেশি আসবাব পছন্দ করি না । অতিপ্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া কিছুই নেই আমার ঘরে ।
একদা নারীর নৈকট্য ছাড়া আমার জীবন ছিল ঘটনাহীন । কে এই নিরঞ্জন ? নারী ছাড়া ! বেঁচে থাকার মানে , কারণ, মূল্য আর কী-ই বা হতে ওপারে ? আমার তো জানা নেই । পৃথিবী নামের ছোট্টো দ্বীপটায়, নারী ছাড়া আমি একা, নিঃসঙ্গ, অন্তরীণ । জীবনে নারী নেই ভাবলেই মনে হয় মরে যাবো, মরে যাচ্ছি, মরে গেছি ; ফাঁকা, ফোঁপরা, খালি । জানতেই পারতুম না আহ্লাদ কি, আঘাত কি, বেদনা কি, হাহাকার কি ।
এতজন নারীর সান্নিধ্য সত্ত্বেও , কি স্বদেশে বা কি বিদেশে, আমি জীবনসূত্র পেয়েছিলুম একজনের কাছ থেকেই । সে লরেটোতে পড়া, ইংরেজিতে সান্মানিক স্নাতক । স্নাতকোত্তরে টি এস এলিয়ট বিশেষজ্ঞ ।  আমি তো গণিতে এম এস সি । সাহিটভ বা দর্শন সম্পর্কে আগ্রহ ছিল না ; আজও অবশ্য নেই । সে আমাকে টমাস হবস, জোসেফ কনরাড, অ্যান্টনি বারজেস, উইলিয়াম গোলডিং আরো কারা কারা যেন, প্রতিটি নাম মনেও নেই এতদিন পর , এনাদের লেখালিখির কথা শোনাতো । তার জীবনের অতীতসূত্র কেবল এই সাহিত্যদর্শনকে ঘৃণা । তার অতীত সম্পর্কে আর বিশেষ কিছু জানি না, সে বলতে চায়নি ।  বলত ওনারা জীবনের ভুল ব্যাখ্যা করে গেছেন । ওনারা নাকি বলে গেছেন একজন মানুষের জীবন সংক্ষিপ্ত, সে একাকী, কেউ নেই তার, যত বৈভব থাক নাকেন সে প্রকৃতপক্ষে দরিদ্র , পঙ্কিল, কদর্য, অশ্লীল, জঘন্য, স্হূল, পাশবিক, অশিষ্ট ও বর্বর । সে বলত, জীবনের এই আশাহীন দৃষ্টিকোণ অসত্য । জানি না সে প্রমাণ করতে পেরেছিল কিনা যে ওই লোকগুলোর বক্তব্য ভুল না সঠিক । আমাকে সে নতুন মানুষ করে তুলছিল ; তার মাঝেই একদিন সে হঠাৎ বলে উঠল, ‘আচ্ছা চলি’ । আমি বাকি জীবনটা নানা নারীদের মাধ্যমে তাকে মুছে ফেলতে চেয়েছি । পারিনি ।
তদন্তকারী  পুলিস অফিসার রিমা খানের সামনে টেবিলের ওপর এক গোছা সিডির পাশে যে প্রিন্টআঊটটা পড়ে আছে, তেলেগু অক্ষরে লেখা বাংলা ন্যারেটিভ । অনুবাদ-করা নয় , তেলেগু অক্ষরকে বাংলায় রুপান্তরণ ।
একটি সিডিতে ব্যাস ওইটুকুই লিখে গেছে লোকটা , যার অদ্ভুত মৃত্যু সম্পর্কে তদন্ত করছে রিমা , পুলিসের ইনভেসটিগেটিং অফিসার , বর্তমানে চাকরি থেকে নিলম্বিত ।  এই কেস যিনি সর্বপ্রথম দদন্ত করেছিলেন, তিনি স্হানীয় থানার ওসি সুমন মিশ্র । এফ আই আর অনুযায়ী, বাঙলোবাড়ির পাশের মাঠে একটি পিকনিক দল শীতের আমেজে, সেবার শীত পুজোর পর-পরই এসে  পড়েছিল , যখন হইচই করছে, কয়েকটা তিনচার বছরের ছেলেমেয়ে খেলতে-খেলতে বাঙলোবাড়ির দেয়াল পর্যন্ত চলে যায় বলের খোঁজে । তাদের পিঁপড়ের ঝাঁক আক্রমণ করে । পিঁপড়ে কামড়ের অ্যালার্জি কম-বেশি কয়েকটা বাচ্চার হলেও, সবচেয়ে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয় একটি মেয়ে ; বস্তুত সে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় । তাৎক্ষণিক জ্বরে আক্রান্ত হয় মেয়েটি এবং সে অজ্ঞান হয়ে যায় । পিকনিকদলের সদস্যদের সাক্ষ্য অনুযায়ী , পিঁপড়ের ঝাঁক আসছিল বাঙলোবাড়ির ভেতর থেকে । দলের নেতা রবিরঞ্জন কর্মকার গিয়ে খবর দেন স্হানীয় থানায়  এবং থানা ইনচার্জের জিপে চেপে ডাকতার ডেকে আনেন ।
থানাত ওসি সুমন মিশ্র ঘটনাস্হলে পোঁছে বাঙলোবাড়িটা তালা-বন্ধ পান , এক নজরে টের পাওয়া যায় কেউ থাকেনা বাড়িটায় , বহুদিন যাবত অব্যবহৃত পড়ে আছে । তিনি জিপে চেপে কাছাকাছি যে ডাকতার পেয়েছিলেন তাঁকে ডেকে আনেন । ডাকতার সযত্নে বাচ্চাটির শুশ্রুষা করেন । কোনো ফিস নেননি , বরং নিজেই ওষুধ দিয়ে বাচ্চা মেয়েটিকে সুস্হ করেন ও জ্ঞান ফেরে তার । সাদা কাগজে কয়েকটা ওষুধ লিখে দেন কয়েকদিন খাবার জন্য ; তাড়াহুড়োয় নিজের প্রিন্টেড প্যাড আনতে পারেননি । সামান্য ঘটনা বলে ওসি বিশেষ আগ্রহ দেখাননি । থানায় নতুন এসেছিলেন, তাই এলাকা সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান ছিল না তাঁর । পিকনিকদলের আক্রান্ত শিশুদের অভিভাবকদের ঠিকানা ডিটেইলসে লিখে রাখা প্রয়োজন মনে করেননি । যে শিশুটি সর্বাধিক আক্রান্ত হয়েছিল তার বাবার নাম ও স্হানটুকু লেখা : দীপ্যমান গোস্বামী, সাকিন লেক টাউন । ভালোয়-ভালোয় ঘটনা মিটমাট হয়ে যাওয়ায় তখনকার মতন নিশ্চিন্ত ছিলেন ওসি ।
মাস ছয়েক পর, হঠাৎই, হাতে তেমন কাজ ছিল না, ওসি বাঙলোবাড়িটার হাল-হকিকাত জানার জন্য, সেখানে ক্রিমিনাল আড্ডা থাকতে পারে অনুমান করে, কেননা কিছুদিন যাবত তাঁর এলাকায় অপরাধের সংখ্যা বেড়েই চলছিল, একাই ঢুঁ মারেন । গেটের তালা একজন তালা-খুলিয়ে বিশেষজ্ঞ কন্সটেবলকে দিয়ে খুলিয়ে, ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পান যে বাড়িটায় বহুকাল বসবাস করা হয়নি ; ঝোপ-ঝাড় উঁচু ঘাসে সামনের বাগান ছয়লাপ , এক-আধটা ফুলের গাছ দেখে টের পাওয়া যায় যে কখনও সাজানো বাগান ছিল । আগাছার জঙ্গলে পিঁপড়ে আর ছিল না । ওসির ধারণা হয় যে পিঁপড়েরা কলোনি সরিয়ে নিয়ে গিয়ে থাকবে ।  বাঙলোবাড়িটার ফাটলেও গাছ গজিয়েছে । সিঁড়ি দিয়ে উঠে, পুলিস অফিসার হলেও, তাঁর গা ছমছম করে । সেদিনকার মতন অনুসন্ধান স্হগিত রেখে  আবার কিছুদিন পর তিনি হেড কন্সটেবল পীতাম্বর পোড়েল আর সইফুদ্দি তালাঅলাকে এনে প্রবেশের সদরের তালা খোলান, গোদরেজের ডুলিকেট ল্যাচকি নিজের কাছে রেখে, চাবিঅলাকে চলে যেতে বলে, ভেতরে ঢুকে সাজানো বাড়ির বৈভব দেখে অবাক হয়ে যান । বাড়িতে কেমন যেন অশরিরী গন্ধ রয়েছে মনে হয় তাঁর , পোড়োবাড়ির গন্ধ সচরাচর যেমন হয় তেমন সোঁদাটে নয়, কিছুটা ইংরেজ-রাজত্বের ফেলে যাওয়া গোরস্হানের মতন , স্বদেশে ফিরতে পারেনি বলে গোরা সায়েবের প্রেতাত্মা হাহাকার করে বেড়াচ্ছে ।  নিজের দৈনিক ডায়েরিতে এভাবেই বর্ণনা করে গেছেন তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা ।
বাড়িটার সবকটা ঘর খোলা থাকলেও একটা ঘর বাইরে থেকে তালা-বন্ধ ছিল , তার জানালাও ভেতর থেকে বন্ধ । হেড কন্সটেবল পীতাম্বর পোড়েলের কাঁধের ধাক্কায় খুলে যায় মরচেধরা তালাটা । বিশেষ আসবাবপত্র নেই ঘরটায় । ঘরের ভেতরের দৃশ্যে অবাক হয়ে যান ওসি সুমন মিশ্র । ঘরের দামি মেহগনি খাটে পুরু বিছানার ওপর অর্থেক ঝুলে আছে একজন মানুষের কংকাল , বিছানা থেকে কয়েক পা দূরে একটা প্রাণীর কংকাল । প্রাণীটাকে খুঁটিয়ে দেখার জন্যে উবু হয়ে বসলেন ওসি । প্রাণীটার চামড়া রয়ে গেছে দেহের কয়েকটা অংশে , কালো-সাদা, পোকা আর সময় সম্পূর্ণ খেয়ে নিশ্চিহ্ণ করতে পারেনি । মুখের আকৃতি , কাটা লেজের আর দেহের চামড়া থেকে ওসি অনুমান করলেন যে কংকালটি একটি কুকুরের । বাঙলোবাড়িটায় তালা দিয়ে ফিরলেন তিনি, এবং স্বতঃপণোদিত হয়ে পিঁপড়ের কামড়ের যে নথি ছিল, তা নিয়ে একটি ফাইল খুললেন, জনৈক ব্যক্তির  অস্বাভাবিক মৃত্যুর ।
পরের দিন বাঙলোবাড়িটায় দুজন কন্সটেবলকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন ওসি সুমন মিশ্র । মানুষের আর কুকুরের কংকালের রহস্য , যদিও তাঁর জানা জরুরি ছিল না, তবে তাঁর মনে হয়েছিল যে এর পেছনে একটা অঘটনের কাহিনি নিশ্চই আছে , যার রহস্য ভেদ করা পুলিসের কাজ । কয়েকটা জিনিস তিনি সংগ্রহ করেছিলেন রহস্যময় বাঙলোবাড়ি থেকে : ( ১ ) বাথরুমে রাখা চটি ; ( ২ ) দ্রেসিংটেবিলের ওপর রাখা কয়েকগাছা চুলসহ একটা হেয়ারব্রাশ ; ( ৩ ) কমপিউটারবিহীন ও মনিটরবিহীন কিবোর্ড ; কমপিউটারটা না থাকায় সন্দেহের খচখচানি হল ওসির ; ( ৪ ) এক হাজারটি সিডি , ইংরেজিতে নম্বর দেয়া ; ( ৫ ) ব্রাউনরঙের খামে কোনো মহিলার দীর্ঘ চুলের আঁটি, সম্ভবত তাঁকে নেড়া করার সময়ে একটুখানি নেয়া । সিজ করার মতন আর তেমন কিছু পেলেন না ওসি ।
মিউনিসিপালিটির রেকর্ড থেকে বাঙলোবাড়ির মালিকের নাম পেয়েছিলেন ওসি, গুরুচরণ দত্তমজুমদার ; তিনি তো দেশ স্বাধীন হবার আগেই মারা গিয়েছিলেন, বোধহয় ইংরেজদের আমলেই, তখন মিউনিসিপালিটি ছিল না । তাঁর ছেলেও মারা গিয়েছিল । মিউনিসিপাল কর্পোরেশানের কাছে তাঁদের মৃত্যুর দিনক্ষণ দর্জ করা নেই । তাঁদের সময়ে অবশ্য ওটা নোটিফায়েড এরিয়া ছিল, মিউনিসিপালিটির অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি । তাঁর উত্তরাধীকারী এরকম দায়িত্বজ্ঞানহীন কী করে,  লোকটা যখন ফৌজদারি উকিল ছিল । সাবইন্সপেক্টারকে পাঠিয়ে বার কাউনসিলের পুরানো রেকর্ড থেকে দত্তমজুমদার পদবির অ্যাডভোকেট পেয়েছিলেন ওসি, সুবীর দত্তমজুমদার । পরের প্রজন্মের উকিলরা জানে যে তিনি ব্রিফ নেবার অনেক ফিস নিতেন , বিচারপতিরা তাঁকে আইনী-জ্ঞানের কারণে সমীহ করতেন । রাশভারি দশাসই চেহারার লোক ছিলেন , বাজখাঁই গলা, রাগি মেজাজের, অথচ তাঁর পরিবারের বিষয়ে কেউ কিছুই বলতে পারল না ।
সাইবার কাফেতে গিয়ে কয়েকটা সিডি দেখার চেষ্টা করেছিলেন, কেননা পুলিস কমপিউটার সেন্টার তখনও স্হাপিত হয়নি এই রাজ্যে ; বিলেতি আর হিন্দি গানের আধিক্য দেখে কোনো ক্লু পাননি  । চুলের দুটি গোছা, হেয়ার ব্রাশ আর ব্রাউন প্যাকেটে, তাঁর মতে, বাড়ির কোনো সদস্যের ; হয়তো ওই কংকাল মহিলার , যিনি হঅর্ট অ্যাটাক বা সেরিব্রাল অ্যাটাকে মারা যান ; কুকুরটা মণিবের দুঃখে মারা গেছে । নিজে থেকে পিঁপড়ের কেসকে কংকালের কেসে নিয়ে গিয়ে নিজেই বিপদে পড়েন তিনি । ক্লোজ করার জন্যে ঊর্ধতন অফিসারদের পাঠিয়েছিলেন, তাঁরা মত না দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন ।
পরের ইনভেসটিগেটিং অফিসার রমেন বসু ফাইলটা নাড়াচাড়া করতেন আর চিন্তা করতেন কী করা যায় । বাঙলোবাড়ি সিল করে দেয়া হয়েছিল । মানুষের কংকাল যে অবস্হায় ছিল তেমনই পড়ে ছিল । তিনি বাড়তি সিজ করেছিলেন কুকুরের কংকাল আর তার ছাল । কুকুরের ছালসহ কংকালটি থানার মালখানায় এনে রেখেছিলেন । সিডিগুলোর মধ্যে থেকে কয়েকটা বাছাই করে দেখার চেষ্টা করে তিনি দেখেন সেগুলো খুলছে না , যেগুলো খুলছে সেগুলো বাংলা ইংরেজি হিন্দি গানের । তাঁর সন্দেহ হয় । তিনি পুলিস কমপিউটার সেন্টারে সাইবার বিশেষজ্ঞকে পাঠালে , বিশেষজ্ঞ জানান, যেগুলো খুলছিল না ওগুলো তেলেগু ভাষায় লেখা । সেসময়ে তেলেগু-জানা কাউকে পুলিসে না পেয়ে তিনি সিডিগুলো সম্পর্কে আগ্রহ হারিয়ে ফ্যালেন । তবে কুকুরের কংকালটা তিনি সরকারি পশু ডাকতার কাকলি সোমকে দেখিয়ে একটা রিপোর্ট নিয়েছিলেন । কুকুরটা সম্ভবত পিট বুল প্রজাতির , ভয়ানক হিংস্র , কেবল মালিকের হুকুম শোনে , মাংস ছাড়া খায় না । বোধহয় না খেতে পেয়ে মরে গেছে । তার মালিকের মৃত্যুর পর তাকে খেতে দেবার কেউ ছিল না বাঙলোবাড়িটায় । চামড়াটা পোকায় খেয়ে ফেলেছে , আর বহুকাল পড়ে থাকার দরুণ চুল ঝরে গেছে । তিনি নেক্রপসি করেছিলেন কিন্তু ডিএনএ স্যামপেলের কেমিকাল অ্যানালিসিস করেননি । সেসময়ে ফরেনসিক ল্যাব ঠিকমতন গড়ে ওঠেনি ।
কোনো নির্ণয়ে পোঁছোতে না পেরে, মৃত্যুর কারণ অনিশ্চিত লিখে, রমেন বসুও ঝুলিয়ে রাখেন ফাইলটা । সেই থেকে কেসটা হাফ-খোলা হাফ-বন্ধ হয়ে পড়েছিল । এখন রিমার দায়িত্ব , নির্ণয়ে পৌঁছোবার ; ওকে কেসটা দেয়া হয়েছে দুর্নাম থেকে সুনামে ফেরত যাবার একমাত্র উপায় হিসাবে । দুর্নাম থেকে সুনামে ফেরত যাবার জন্যে রিমা খান অনেককে ধরাধরি করেছিকল ; কোনো কাজ হয়নি । অনেক ওপর পর্যন্ত গিয়েছিল ; মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে অত সহজে বদনাম থেকে মুক্ত করা যাবে না ; রিমাকে কিছু-একটা করে দেখাতে হবে যাতে মিডিয়ার চোখে ও নায়িকার পাবলিসিটি পায় । কেননা মিডিয়াই ওকে বদনাম করেছে । চ্যালেঞ্জ নিয়েছে রিমা ; এর শেষ দেখে তবে ছাড়বে ।
রিমার ধারণা কেসটার সমাধান করার জন্য বিল্ডার লবির চাপ আছে ; তারা অতখানি জমির লোভ সামলাতে পারছে না । কেস-ফাইল হঠাৎ ক্লোজ করে দিলে মিডিয়ার লোকেরা নতুন রসদ পেয়ে হইচই করবে । কেন্দ্রীয় নেতাদের টাকা গেঁড়িয়ে সুইসব্যাঙ্কে রাখার খবর শুনে আর পড়ে লোকে ক্লান্ত হয়ে গেছে ; দেশের মানুষ মেনে নিয়েছে যে এই সমস্ত জোচ্চর রাজনীতিকদের নিয়েই ভোটাভুটির গণতন্ত্র চলতে থাকবে এদেশে । পাবলিকের এখন নতুন মালখাদ্য চাই ।
রিমা একটা ফিলটার টিপ সিগারেট ধরালো । অন্য মেয়েরা রাস্তা-ঘাটে লুকিয়ে ফোঁকে ; রিমার লুকোছাপা নেই, উচ্চমাধ্যমিকের সময় থেকে । মুখেরও আগল নেই, স্কুল থেকেই । পুলিসে ঢুকে অবশ্য সেই গুণগুলো কাজে দিয়েছে ।  পুরুষতান্ত্রিক পুলিসে সহকর্মীরা ভেবেছিল অশ্লীল শব্দ আর গালমন্দ প্রয়োগ করে ঘাবড়ে দেবে রিমাকে । অপরাধীরাও রিমার মুখনিঃসৃত এমসেবিসি বাণী থেকে নিস্তার পায় না ।
দীপ্যমান গোস্বামী । চাকরিতে থাকলে থাকার কর্মীদের পাওয়া যেত । রিমার জন্য ডিজি পবিত্র মুখোপাধ্যায় বরাদ্দ করেছেন সাব-ইন্সপেক্টার রজত মণ্ডলকে । তার জন্যেও কত ধরাধরি করতে হয়েছিল । ডিজি নিজের ডিসক্রিশানারি পাওয়ার প্রয়োগ করে রজতকে দিয়েছেন । রিমা অবশ্য ব্যক্তিগতভাবে কোনো-কোনো কর্মীর সাহায্য নেয় । কন্সটেবলরা, যারা ওর আন্ডারে কাজ করেছে, তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কাজ করে দ্যায় । রিমা চিরকাল ওর অধস্তনদের বাঁচিয়েছে , ঊর্ধতনদের প্রকোপ থেকে ।
বাঙালিদের পিকনিকে যাবার অভ্যাসটাও মন্দ নয় । কবে থেকে পিকনিকের চল হয়েছে তা অনুমান করতে পারে রিমা । ইংরেজরা যাবার সময়ে তাদের বাতিল গোরস্তানের সঙ্গে দিয়ে গেছে এটা । বলিউডি গান সহযোগে বিয়ার বা পাউচমালের সঙ্গে মুর্গির টাকনা । সপরিবারে হলে অন্তাক্ষরী। অনেক রকমের এঁটো  ফেলে গেছে ওরা । যারা পিকনিকে যায় তারাও নানা এঁটো ফেলে জায়গাটা নোংরা করে চলে যায়।
বিএসএনএল-এর ডিরেক্টরি তন্ন তন্ন খুঁজে কোনো দীপ্যমান গোস্বামীকে লেক টাউন অঞ্চলে পাওয়া গেল না । ইনটারনেটে বিএসএনএল-এর তালিকাতেও পেল না । মোবাইল হয়ে লোকে ল্যান্ডলাইন কাটিয়ে দিলেও, পুরানোতে হয়তো আছে ; কিন্তু ওয়েবসাইটে অবিরাম পরিবর্তন ঘটতে থাকায় পুরানো রেকর্ড নেই । কী করা যায় ?
রাজ্য নির্বাচন দপতরে একদিন গেল রিমা, উর্দি পরে ।  লেক টাউনের হালের লিস্টটায় পেয়ে গেল দুজন দীপ্যমান গোস্বামী । একজন কালিন্দীতে , অন্যজন বাইরে । রবিবার দেখে কালিন্দীতেও পুলিসের উর্দিতে গেল । বাড়িতে দীপ্যমান ছিলেন না । তাঁর স্ত্রী চৈতালি, গায়ের রঙ ময়লাটে,  দুবেলা ভাত-খাওয়া ভরাট কাঠামো, প্রতিদিনের গৃহদেবতার পুজোর সন্দেশ আর জল দিয়ে ভয়ে-ভয়ে জানতে চাইলেন, কেন আসা ।  পুলিস দেখে কয়েকজন দরজায় উঁকিঝুঁকি মারছিল । দীপ্যমানের স্ত্রী দরজা বন্ধ করে দিতে যাচ্ছিলেন, রিমা বলল, আসতে দিন আসতে দিন, আমি আপনাদের পিকনিকে গিয়ে পিঁপড়ে কামড়ের ঘটনাটা জানতে চাই । দীপ্যমানের স্ত্রী বললেন, হ্যাঁ, আমার মেয়েকেই জংলি পিঁপড়ে কামড়ে ছিল, ওঃ, সে কি অঘটন, ভাগ্যিস সুমনবাবু একজন ডাকতার এনে তক্ষুনি ওষুধপথ্য করলেন , নয়তো কী যে হতো ভগবানই জানেন ।
সমবেত প্রতিবেশীরা ঘটনাটাকে নানাভাবে উপস্হাপন করছিলেন । কিছুক্ষণ পর দীপ্যমান গোস্বামী বাজার থেকে দুহাতে দুটি থলে ঝুলিয়ে ফিরলেন , এবং যথারীতি পুলিস দেখে ঘাবড়ে গেলেন । প্রতিবেশিরা তাঁকে রিমার আগমনের উদ্দেশ্য জানালে তিনি ফ্ল্যাটের অন্য ঘর থেকে একটা ফাইল নিয়ে এলেন । বললেন, সেই পিঁপড়ের কামড়ে আমার মেয়ে আজও মানসিকভাবে ভুগছে , কীটফোবিয়া হয়ে গেছে ওর , আমরা প্রতি মাসে পেস্ট কন্ট্রোলকে দিয়ে পুরি ফ্ল্যাট ডিসইনসেক্টিফাই করাই । দীপ্যামন গোস্বামী লোকটা ওর স্ত্রীর চেয়ে বেশ ফর্সা , বোধহয় প্রেম, নয়তো মোটা যৌতুক । গালদুটো মোদো-চকচকে , চুল কোঁকড়ানো, পায়জামা কুর্তায় , আজকালকার রঙিন চকরাবকরা পাঞ্জাবি ।
রিমা জানাল , আমি সেই ঘটনার সূত্রে আরেকটি ঘটনার তদন্ত করছি । ডাকতারের ক্লিনিকটা কোথায় আর তাঁর নাম-ঠিকানা জানেন কি ?
—না, তা তো আমরা জিগ্যেস করিনি তখন, এত বিপর্যস্ত ছিলাম আমরা । আমার মেয়েকে সবচে বেশি কামড়ে ছিল, কিন্তু কমবেশি অনেকের বাচ্চাকে কামড়েছিল ওই বিদকুটে বিষাক্ত পিঁপড়ে ।
—হ্যাঁ, আমার মেয়েকেও পিমড়ে কামড়েছিল , তবে অত জঘন্য ভাবে নয় ; বাড়ি ফিরে ডাকতার দেখিয়ে ওষুধ দিয়ে কয়েক দিনেই সেরে গিয়েছিল ।
—আমার দুই ছেলেকে কামড়েছিল বটে, তবে গোস্বামীদার মেয়ের মতন নয় ।
দীপ্যমান গোস্বামীকে রিমা অনুরোধ করা প্রেসক্রিপশানের জেরক্স নিল, মোবাইল নম্বর নিল দীপ্যমানসহ কয়েক জনের । ডাকতারদের হাতের লেখা এত নোংরা কেন যে হয় , নামের জায়গায় ইজকুড়ি-বিজকুড়ি । নয়তো  ডাকতার সাহায্য করতে পারতেন ।
ডাকতারকে কী রকম দেখতে ? জানতে চাইল রিমা ।
দীপ্যমান : মহিলা ডাকতার যুবতী-যুবতী টাইপ । ঢ্যাঙা । কাঁধ পর্যন্ত চুল ; চুলে তেমন পাক ধরেনি যদিও । গায়ের রঙ এই ধরুন আমার চেয়ে এক পোঁচ ময়লা । ফিস দিতে চাইলেও নেননি ।
চৈতালি : কম বয়সী কী ? চাহারা তো একহারা । বোধহয় বিয়ে করেননি বলে কম বয়সী মনে হচ্ছিল , মানে সিঁদুর-টিঁদুর তো দেখিনি ; আজকাল অবশ্য ডাকতার-টাকতাররা শাঁখা-সিঁদুর পরেন না । তবে বেশি বয়স নয় ; আলগাচটুকে ।
দীপ্যমান : ডাকতার হলেও কিন্তু দামি জামদানি পরেছিলেন । চোখে রিমলেস চশমা । হাতে একগাছা সোনার বালা । অন্য হাতে চারচৌকো ঘড়ি । ফিস নিশ্চই অনেক, কিন্তু আমার কাছ থেকে নিলেন না ।  বোথহয় বাচ্চার কষ্ট দেখে ।
—স্যার, খবরটা কি টিভিতে আসবে ? মানে টিভির লোক কি দীপ্যমানবাবুর  বাড়ি আসবেন এই কেস তুলে ধরতে ? জিগ্যেস করল একজন যুবক ।
—না না, এখনই এটা নিউজ হবার মতন নয় । হলে দীপ্যমানবাবুকে  ওরা অবশ্যই কভার করবে , বলে, রিমা উঠে দাঁড়াল, যোগ করল, পরে দরকার পড়লে যোগাযোগ করব । আর, ডাকতারের সঙ্গে যোগাযোগ হলে ঠিকানা-ফোন নম্বর নিয়ে নেবেন প্লিজ ।
বাইরে বারিয়ে রিমা দেখল ওর লাল-কালো সুজুকি হায়াবুসা মোটর সাইকেল ঘিরে ভিড় । স্টার্ট  করে আধা-থ্রটল হুমকি দিতেই ভিড় সরে গেল । রিমা শুনতে পেল কেউ বলছে,  আরে এ তো সেই বিখ্যাত নোংরা পরি, উরিব্বাস, কত চুপটি করে কথা বললে আমাদের সঙ্গে । টিভিতে দেখেছিলিস তো ওনাকে নিয়ে প্রোগ্রাম করেছিল ? জাঁদরেল অফিসার , চোর-ডাকাতরা ওনার ভয়ে হেগে ফ্যালে । মোটর সাইকেলটার ফোটো বেরিয়েছিল কাগজে । নোংরা পরি ওপর বসলে সাইকেলটার ডানা গজায় ।

আর পুরুষদের ওপর বসলে তাদের গায়ে কাঁটা গজায় , রিমা নিজেকে শোনালো, রে-ব্যান গগলস পরতে-পরতে ।

0 comments:

Post a Comment