Thursday, November 26, 2015

বগুড়া জেলার পরিচিতি

বগুড়া জেলা বাংলাদেশের উত্তর-
পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী
বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল ।
বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে এক
ঐতিহ্যবাহি প্রাচীন জনপদ বগুড়া।
প্রাচীন পুন্ড রাজ্যের রাজধানী
পুন্ডবর্ধন হচ্ছে বগুড়া
ভৌগোলিক সীমানা
৮৮.৫০ ডিগ্রী পূর্ব থেকে ৮৮.৯৫
ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে এবং
২৪.৩২ ডিগ্রী উত্তর থেকে ২৫.০৭
ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশে বগুড়া সদর
উপজেলা অবস্থিত। বগুড়া জেলার
উত্তরে গাইবান্ধা ও জয়পুরহাট
জেলা, দক্ষিণে সিরাজগঞ্জ ও
নাটোর জেলা, পূর্বে জামালপুর
জেলা ও যমুনা নদী এবং পশ্চিমে
নওগাঁ জেলা অবস্থিত । [১]
প্রশাসনিক এলাকাসমূহ
বগুড়া জেলা ১৮২১ সালে জেলা
হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। জেলায়
মোট উপজেলার সংখ্যা মোট ১২ টি।
পৌর সভার সংখ্যা ১২ টি, ইউনিয়ন
রয়েছে মোট ১০৮ [২] টি। এছাড়া
জেলায় ২,৬৯৫ টি গ্রাম, ১,৭৫৯ টি
মৌজা রয়েছে। বগুড়া জেলার
উপজেলা গুলি হল -
1. সোনাতলা
উপজেলা
2. আদমদিঘী
উপজেলা
3. বগুড়া সদর
উপজেলা
4. ধুনট উপজেলা
5. ধুপচাঁচিয়া
উপজেলা
6. গাবতলী
উপজেলা
7. কাহালু
উপজেলা
8. নন্দীগ্রাম
উপজেলা
9.
সারিয়াকান্দি
উপজেলা
10. শেরপুর
উপজেলা
11. শিবগঞ্জ
উপজেলা
12. সাজাহানপুর
উপজেলা
সংসদীয় আসন
1. বগুড়া-১
( সারিয়াকান্দি
- সোনাতলা)
2. বগুড়া-২
( শিবগঞ্জ )
3. বগুড়া-৩
( দুপচাঁচিয়া-
আদমদীঘি )
4. বগুড়া-৪
( কাহালু -
নন্দীগ্রাম )
5. বগুড়া-৫
( শেরপুর - ধুনট )
6. বগুড়া-৬ ( বগুড়া
সদর )
7. বগুড়া-৭
( গাবতলী -
শাহজাহানপুর )
ইতিহাস
খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ শতকে বগুড়া মৌর্য
শাসনাধীনে ছিল। মৌর্য এর পরে এ
অঞ্চলে চলে আসে গুপ্তযুগ । এরপর
শশাংক, হর্ষবর্ধন, যশোবর্ধন পাল, মদন ও
সেনরাজ বংশ ।
সুলতান গিয়াস উদ্দিন বলবনের পুত্র
সুলতান নাসির উদ্দিন বগড়া ১,২৭৯
থেকে ১,২৮২ পর্যন্ত এ অঞ্চলের শাসক
ছিলেন। তার নামানুসারে এ
অঞ্চলের নাম হয়েছিল বগড়া
(English: Bogra)। ইংরেজি উচ্চারন
'বগড়া' হলেও বাংলায় কালের
বিবতর্নে নামটি পরিবর্তিত হয়ে
'বগুড়া' শব্দে পরিচিতি পেয়েছে।
জনসংখ্যা উপাত্ত
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী
জেলার মোট জনসংখ্যা ৩৫,৩৯,২৯৪
জন। এর মধ্যে ১৭,৭৮,৫২৯ জন পুরুষ এবং
১৭,৬০,৭৬৫ জন নারী। জেলার
সাক্ষরতার হার ৪৯.৪৬%।
শিক্ষা
সরকারি শাহ সুলতান কলেজ,
বগুড়া
বগুড়া জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের
দিক দিয়ে অনেক উন্নত। তবে সমগ্র
জেলায় কোন বিশ্ববিদ্যালয় নেই।
জেলায় ১ টি সরকারী মেডিকেল
কলেজ, ১টি বেসরকারী মেডিকেল
কলেজ, ৮ টি সরকারী কলেজ, ৭৬ টি
বেসরকারি কলেজ, ১.৫৬৮ টি
সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৪০২ টি
বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়,
১,৫৬৮ টি সরকারী প্রাথমিক
বিদ্যালয়, ২৩ টি বেসরকারী প্রথমিক
বিদ্যালয়, ১ টি সরকারী
পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট, ১ টি
ভিটিটিআই, ২ টি পিটিআই, ১ টি
টিটিসি ও ১ টি আর্টকলেজ রয়েছে।
[৩]
চিকিৎসা
শহীদ জিয়াউর রহমান
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
জেলায় মান সম্মত চিকিৎসা ব্যবস্থা
রয়েছে। জেলায় সরকারী
হাসপাতালের সংখ্যা ১৭ টি এবং
এতে চিকিৎসার জন্য বেড রয়েছে
১,২৮০ টি। অনুমোদিত ডাক্তারের জন্য
৩০৬ টি পদ রয়েছে যার মধ্যে ১২১ জন
কর্মরত রয়েছে। মোট বেসরকারী
হাসপাতাল রয়েছে ১৫৫ টি
যেখানে বেড সংখ্য ১,৫০০টি
(প্রায়)। [৩]
অর্থনীতি
জেলার অর্থনিতী শিল্প, ব্যবসা-
বানিজ্য ও কৃষি নির্ভরশীল।
কৃষি
জেলার প্রধান কৃশি পন্য গুলো হলো
ধান, পাট, আলু, মরিচ, গম, সরিষা,
ভুট্টো, কলা সবজি, আখ ইত্যাদি। মোট
চাষযোগ্য জমির পরিমান ২,২৩,৪১০
হেক্টর। পতিত জমি ৫,৩৪৩ হেক্টর।
মাথাপিছু জমির পরিমান ০.২১
হেক্টর। জেলায় খাদ্য দ্রব্য সংরক্ষনের
জন্য ২৯ টি হিমাগার রয়েছে।[৩]
শিল্প
বগুড়া জেলায় ১২০ টি বড় শিল্প
কারখানা, ১৯ টি মাঝারি শিল্প
কারখানা, ২৩৫১ টি ক্ষুদ্র শিল্প এবং
৭৪৫ টি কৃষি ভিত্তিক শিল্প রয়েছে।
[৩]
রপ্তানী পণ্য
সিরামিক সামগ্রী, চাল
চিত্তাকর্ষক স্থান
মহাস্থানগড়
মহাস্থানগড় , ৪০০ খৃস্টপূর্বাব্দ। গোকুল
মেধ, ৭০০ খৃস্টাব্দ। ভাসু বিহার, ৪০০
খৃস্টাব্দ। যোগীর ভবণ, ১৫০০ খৃস্টাব্দ।
‍‍‌বিহার, ৮০০ খৃস্টাব্দ। ভীমের
জাঙ্গাল, ১১০০ খৃস্টাব্দ। খেরুয়া
মসজিদ, শেরপুর। নবাব বাড়ী (সাবেক
নীল কুঠির)।
বগুড়া পৌর খোকন পার্কের
অভ্যন্তরে বগুড়ার শহীদ মিনার
যোগাযোগ ব্যবস্থা
বগুড়াকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার
বলা হয়। মূলত ঢাকা থেকে
উত্তরবঙ্গের বেশির ভাগ জেলায়
যেতে বগুড়াকে অতিক্রম করতে হয়
বলেই এরকম বলা হয়ে থাকে।বগুড়ার
যোগাযোগ ব্যাবস্থা খুবই উন্নত
মানের। ট্রেন এবং বাস উভয় ব্যবস্থায়
ঢাকা থেকে আসা যায়। জেলায়
মোট রাস্তার পরিমান ৬,০৪১
কিলোমিটার। এর মধ্যে পাকা
রাস্তা রয়েছে ২,৩১০ কিলোমিটার
এবং কাঁচা রাস্তা রয়েছে ৩,৭৩১
কিলোমিটার। এছাড়াও জেলার
উপর দিয়ে ৯০ কিলোমিটার রেলপথ
রয়েছে
সড়ক পথ
ঢাকা পঞ্চগড় হাইওয়েটি বগুড়া
জেলার একেবারে মধ্যভাগ দিয়ে
শেরপুর, শাহজাহানপুর, বগুড়া সদর ও
শিবগঞ্জ উপজেলা দিয়ে চলে
গেছে। ভারী এবং দূর পাল্লার
যানবাহন চলাচলের জন্য মূল সড়কের
পাশাপাশি রয়েছে প্রশস্ত দুটি
বাইপাস সড়ক। প্রথমটি পুরাতন বাইপাস
নামে পরিচিত শহরের পশ্চিম দিকে
মাটিডালি থেকে শুরু হয়ে বারপুর,
চারমাথা, ১ নং রেলগেট, ফুলতলা
হয়ে বনানীতে গিয়ে শেষ হয়েছে।
দ্বিতীয়টি নতুন বাইপাস নামে
পরিচিত যা ২০০০ সালের পরবর্তীতে
নির্মিত হয়। দ্বিতীয় বাইপাসটি
মাটিডালি থেকে শুরু হয়ে শহরের
পূর্ব পাশদিয়ে জয়বাংলা বাজার,
সাবগ্রাম হয়ে বনানীতে গিয়ে মুল
সড়কের সাথে মিলিত হয়েছে।
এছাড়া নাটোর, পাবনা, রাজশাহী
সহ দক্ষিণ বঙ্গের জেলা গুলোর
সাথে যোগাযোগের জন্য একটি
আলাদা মহাসড়ক রয়েছে যা
নন্দীগ্রাম উপজেলার মধ্যদিয়ে
নাটোরের সাথে সংযুক্ত। নওগা
জেলার সাথে যোগাযোগের জন্য
চারমাথা থেকে আরেকটি সংযোগ
সড়ক কাহালু, দুপচাঁচিয়া,
সান্তাহারের মধ্য দিয়ে নওগাঁয়
গিয়ে শেষ হয়েছে। এছাড়া বগুড়া
জয়পুরহাট জেলাকে সংযুক্ত করার জন্য
রয়েছে আলাদা সড়ক ব্যবস্থা।
রেল
বগুড়া জেলার সর্ব পশ্চিমে রয়েছে
সান্তাহার রেলওয়ে জংশন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্রডগেজ
লাইন নাটোর থেকে জয়পুরহাট পর্যন্ত
সান্তাহাররের উপর দিয়ে চলে
গেছে। এছাড়া সান্তাহার থেকে
একটি মিটারগেজ লাইন আদমদিঘী,
তালোড়া, কাহালু, বগুড়া শহরের
মধ্যদিয়ে রংপুর, গাইবান্ধা,
লালমনিরহাটকে সংযুক্ত করেছে।
আকাশ পথ
বগুড়ার একমাত্র বিমানবন্দরটি[৪]
কাহালু উপজেলার এরুলিয়া নামক
স্থানে অবস্থিত। তবে বিমান
বন্ধরটি সাধারণ বিমান বাহিনীর
প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হয়।
ঐতিহ্যবাহী উৎসব
পোড়াদহ মেলা
মূল নিবন্ধ: পোড়াদহ মেলা
বগুড়ার ঐতিয্যবাহী মেলার মধ্যে
পোড়াদহ মেলা [৫] উল্লেখযোগ্য।
বগুড়া শহর হতে ১১ কিলোমিটার
পূর্বদিকে ইছামতি নদীর তীরে
পোড়াদহ নামক স্থানে সন্ন্যাসী
পূজা উপলক্ষে প্রতি বছর এ মেলা হয়ে
আসছে। মেলার নাম পোড়াদহ
মেলা। পোড়াদহ নামক স্থানে
মেলা বসে তাই নাম হয়েছে
পোড়াদহ মেলা। কথিত আছে প্রায়
সাড়ে চারশত বছর পূর্বে থেকে
সন্ন্যাসী পুজা উপলক্ষে এই মেলা
হয়ে আসছে। পূজা পার্বন হিন্দুদের
উৎসব হলেও এই মেলা ধর্মের গন্ডি
পেরিয়ে হয়ে উঠছে পূর্ব বগুড়ার সকল
ধর্মের মানুষের মিলন মেলায়।
প্রতিবছর মাঘ মাসের শেষ দিনের
কাছের বুধবারে এই মেলা হয়ে
আসছে। মেলার প্রধান আকর্ষন বড় মাছ
আর বড় মিষ্টি। এছাড়াও থাকে
নারীদের প্রসাধন, ছোটদের খেলনা
ও দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র।
কাঠ ও স্টিলের আসবাব পত্রও সুলভ
মুল্যে পাওয়া যাবে এ মেলায়।
এছাড়াও আছে নাগড়দোলা,
সার্কাস, মটরসাইকেল খেলার মত
মজার সব ব্যবস্থা। মেলা উপলক্ষে দুর
দুরন্ত হতে আত্বীয়রা এসে ভরে যায়
প্রতিটি বাড়ি। মেয়েরা জামাই সহ
বাপের বাড়িতে বেড়াতে আসে।
ঈদ, দূর্গা পুজার মত বড় উৎসবের
পাশাপাশি এই মেলা পরিনত
হয়েছে মানুষের মিলন মেলায়।
মেলা প্রধানত একদিনের হলেও উৎসব
চলে তিনদিন ব্যাপি। বুধবার মুল
মেলার পরদিন বৃহস্পতিবার একই
স্থানে এবং একই সাথে
আশেপাশের গ্রামে গ্রামে চলে বউ
মেলা। যেহেতু অনেক মেয়েরা মুল
মেলায় ভিরের কারণে যেতে
পারেনা তাই তাদের জন্যই এই
বিশেষ আয়োজন। বউ মেলায় শুধু
মেয়েরা প্রবেশ করতে পারে এবং
কেনাকাটা করতে পারে।
পোড়াদহ মেলা
পোড়াদহ মেলার মাছ
পোড়াদহ মেলার মিষ্টি
কেল্লাপোষী মেলা
এছাড়াও আছে শেরপুর উপজেলার
কেল্লাপোষী মেলা [৬] । বগুড়ার
শেরপুরে ৪৫৭ বছর পূর্ব থেকে এ মেলা
হয়ে আসছে। মেলার তারিখ
প্রতিবছর জৈষ্ঠ মাসের দ্বিতীয়
রোববার।

0 comments:

Post a Comment