Monday, November 23, 2015

উচ্চ রক্তচাপ: কারণ ও প্রতিকার


উচ্চ রক্তচাপকে এক ধরনের নীরব
ঘাতক বলা হয়ে থাকে, কারণ খুব
সহজে এর উপসর্গ বোঝা যায় না,
কিন্তু নীরবে হৃৎপিণ্ডের ক্ষতিসাধন
করে থাকে।
ইংল্যান্ডের প্রায় ৩০ ভাগ মানুষ
উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন কিন্তু
অনেকেই প্রথমে তাদের এই রোগটা
ধরতে পারেন না। কিন্তু যখন বুঝতে
পারেন তখন হার্ট-অ্যাটার্ক, স্ট্রোক,
কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া, দৃষ্টি
শক্তি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা
অনেক বেশি থাকে।
উচ্চ রক্তচাপ
হৃৎপিণ্ড রক্ত সঞ্চালন করার সময়
শিরা ও ধমনীর ওপরে যে পরিমাণ
চাপ দিয়ে থাকে তাই হচ্ছে
রক্তচাপ। কিন্তু যখন বিভিন্ন কারণে
হৃৎপিণ্ডের রক্ত নালী সরু হয়ে শক্ত হয়
এবং হৃৎপিণ্ড দুর্বল হয়ে যায় তখন রক্ত
চলাচল করতে হৃৎপিণ্ডের
স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি
মাত্রায় শক্তির বা চাপের
প্রয়োজন হয়, এটাই হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ।
হৃৎপিণ্ড এভাবে চাপ প্রয়োগ করে
শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্ত
ছড়িয়ে দেয়। এই রক্ত চাপের
মাধ্যমে বোঝা যায় হৃৎপিণ্ড কি
পরিমাণ রক্ত সরবরাহ করছে অথবা
রক্ত নালী রক্ত প্রবাহে কি
পরিমাণ বাধা প্রধান করছে। রক্ত
নালীর সরু বা প্রশস্তের ওপর রক্ত
প্রবাহ নির্ভর করে। রক্ত নালী সরু
হলে রক্ত চাপ বাড়বে কিন্তু রক্তের
প্রবাহ কমবে এবং রক্ত নালী প্রসস্থ
হলে রক্ত প্রবাহ বাড়বে, সঙ্গে
সঙ্গে রক্ত চাপ কমবে।
রক্তচাপ পরিমাপ
দিনের বিভিন্ন সময় রক্তচাপ
বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। সাধারণত
ব্যায়াম, হাঁটা-চলার সময় রক্তচাপ
বেশি থাকে এবং ঘুমানোর সময়
রক্তচাপ কম থাকে। এমনকি মানুসিক
চাপেও রক্তচাপ বাড়তে পারে।
তাই বিভিন্ন সময়ে রক্তচাপ
পরিমাপ করে তার গড় করলে
রক্তচাপের সঠিক অবস্থা জানা
যায়।
দুই অবস্থায় রক্তচাপ পরিমাপ
সংকোচনশীল (সিস্টোলিক-Systolic)
অবস্থায়: হৃৎপিণ্ডের সংকোচনের
মাধ্যমে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হৃৎপিণ্ড
হতে সারা শরীরে ছড়িয়ে দেয়। এ
সংকোচনের সময় চাপের পরিমাপ
তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে।
প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য সাধারণত ১২০
মিলিমিটার মার্কারি (mmHg),
তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে
চাপের মাত্রা বাড়তে থাকে।
প্রসারণশীল (ডায়াস্টলিক-Diastolic)
অবস্থায়: এ অবস্থায়
কার্বনডাইঅক্সাইড যুক্ত রক্ত শরীর
থেকে হৃৎপিণ্ডে প্রবেশ করে। এসময়
এর চাপ প্রাপ্ত বয়স্কদের সাধারণত
৮০ মিলিমিটার মার্কারি (mmHg),
এর মাত্রাও বয়স বাড়ার সঙ্গে
সঙ্গে বাড়তে পারে।
উচ্চ রক্তচাপের কারণ
সাধারণ দুই ধরনের রক্তচাপে ভুগেন
মানুষ। এগুলো হচ্ছে- প্রাইমারি উচ্চ
রক্তচাপ ও সেকেন্ডারি উচ্চ
রক্তচাপ।
প্রাইমারি উচ্চ রক্তচাপ: সাধারণত
উচ্চরক্ত চাপের ৯০ ভাগ কারণ নির্ণয়
করা সম্ভব হয়না। তাই যে রক্তচাপের
কোনো কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়না
তা হচ্ছে প্রাইমারি উচ্চ রক্তচাপ। এ
ধরনের উচ্চ রক্তচাপ হৃৎপিণ্ডের জন্য খুব
বিপজ্জনক এবং নীরব ঘাতক
হিসেবে কাজ করে। কারণ এ ধরনের
রক্তচাপ প্রতিরোধ না হলে বয়স
বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য জটিল
হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকগুণ
বেড়ে যায়।
সেকেন্ডারি উচ্চ রক্তচাপ: চর্বি বা
রক্ত জমাট বেধে রক্তনালী সরু হলে
আড্রেনাল গ্রন্থেফোরা বা
টিউমার হলে, কিডনির সমস্যা হলে,
কিছু কিছু ওষুধের
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে যেমন
ব্যাথানাশক ওষুধ (ইবুপ্রফেন,
নাপ্রক্সেন) সেবন করলে বাকি ১০
ভাগ উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। এটি
নিরাময় যোগ্য, চিকিৎসা নিলে
সেকেন্ডারি উচ্চ রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

এছাড়াও আরও কারণ রয়েছে উচ্চ
রক্তচাপের পেছনে। এগুলো হচ্ছে-
• অতিরিক্ত ওজন
• পরিবারের কারো উচ্চ রক্তচাপ
থাকলে
• অতিরিক্ত মাত্রায় লবণ খেলে
• পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসবজি না
খেলে
• নিয়মিত হাঁটা-চলা বা ব্যায়াম
না করলে
• অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যাফেইনযুক্ত
পানীয় (যেমন- চা, কপি) পান
করলে
• অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যালকোহল
পান করলে
• বয়স ৬৫ বছরের বেশি হলে
প্রতিকার ও চিকিৎসা
ওপরের উল্লেখিত কোনো লক্ষণ
আপনার দেখা দিলে সর্বপ্রথম
আপনার জীবন ধারায় পরিবর্তন
আনতে হবে। এজন্য আপনাকে নিচের
বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে-
• ওজন বেশি হলে ওজন কমাতে হবে
• নিয়মিত ব্যায়াম বা হাঁটতে
হবে
• পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে
• ধূমপান পরিহার করতে হবে
• অ্যালকোহলের অভ্যাস থাকলে
তা পরিহার করতে হবে
• খাবারে লবণের মাত্রা কমাতে
হবে এবং চা, কফির অভ্যাস পরিহার
করতে হবে।

পরামর্শ:
বছরে অন্তত একবার রক্তচাপ পরিমাপ
করুন। উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিলে
নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত
চিকিৎসা নিন। কোলস্টোরেলের
মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
পরামর্শমতে জীবনধারা পরিবর্তনের
পাশাপাশি প্রয়োজন হলে
চিকিৎসার মাধ্যমে এ নীরব
ঘাতকের ছোবল থেকে নিজেকে
নিরাপদে রাখুন।
সুত্র -
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

0 comments:

Post a Comment