Wednesday, November 25, 2015

গ্রামের ভুতের গল্প


প্রকৃতি পরিবেশ ও গ্রামবাংলার
সঙ্গে এ প্রজন্মের বিরাট ব্যবধান
থাকলেও ইসরাককে গ্রামের খাল-
বিল, সবুজ-শ্যামল মাঠ, ফসলের খেত,
ছায়াঢাকা পথ, শান বাঁধানো
পুকুর, গ্রাম বাংলার মানুষের সহজ-
সরল জীবন খুবই আকৃষ্ট করে। তাই
গ্রামে ইসরাকের দুরন্তপনার শেষ
নেই। এ প্রজন্মের অনেকে গাছ
চেনে না, মাছ চেনে না,
কালবৈশাখী ঝড় কী বোঝে না,
ঝড়ে আম কুড়ানোর স্বাদ পায় না।
কিন্তু ইসরাকের সবকিছুই নখদর্পণে।
ইসরাকের গ্রামের নাম গহিরা।
তার বাড়ির সামনের বিস্তৃত
ফসলের মাঠ পেরুলেই পরে হিন্দু
অধ্যুষিত বিশ্বাস পাড়া।
বিশ্বাসপাড়ার হিন্দু সহপাঠীদের
সাথে মেলামেশা করতে
পারলে অদ্ভুত এক ভালো লাগা
কাজ করে তার মাঝে। এই বিশ্বাস
পাড়ায় হিন্দুদের মৃতদেহ
পোড়ানোর জন্য কালিমন্দিরের
সামনে একটি শ্মশান আছে। এই
শ্মশানে হিন্দুরা মৃতদেহ সৎকার
করে। তাই গ্রামের মানুষ এ রাস্তা
দিয়ে চলাচল করতে ভয় পায়।
মানুষের ধারণা, মৃত আত্মা ভূতে
পরিণত হয়। এই ভূত রাতের বেলা
মানুষকে ভয় দেখায়। এমনকি সুযোগ
মত পেলে মেরেও ফেলে। তাই
রাতের বেলা কেউই অত্যন্ত
প্রয়োজন ছাড়া এ রাস্তা দিয়ে
যেতে চায় না। ইসরাকও এ কথা
শুনতে শুনতে বড় হয়েছে। একদিন
গঞ্জ থেকে বাড়ি ফিরতে তার
বেশ রাত হয়ে গেল। আর তাদের
বাড়ি আসতে হলে কালিবাড়ি
মোড় পার হয়ে আসতে হয়। কারণ এ
ছাড়া আর কোনো বিকল্প রাস্তা
নেই। কিন্তু ইসরাক একা, তার
সঙ্গে অন্য কোনো মানুষ নেই।
তাছাড়া রাতের বেলা কোনো
মানুষ এই রাস্তা দিয়ে চলাচল
করে না। ইসরাক কালিবাড়ি মোড়
থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে চিন্তা
করতে থাকে কী করবে, সে ভাবে
আবার গঞ্জে ফিরে যাবে। না হয়
কারও বাড়িতে রাত্রিযাপন
করবে। কিন্তু সে কী করবে? এ
ব্যাপারে সে কোনো সিদ্ধান্ত
নিতে পারে না। অবশেষে সে
চিন্তা করল, নাহ বাড়ি ফিরে
যাবে সে। কীভাবে যাবে সে?
মনে মনে ফন্দি করতে থাকে
কালিবাড়ির মোড়ে এসে এক
দৌঁড় দিয়ে তার বাড়ি চলে
আসবে। এই চিন্তা করে সে পথ
চলতে শুরু করল। কিছু দূর এসে সে
শ্মশানটা দেখতে পায় এবং
দেখে শ্মশানের কাছে সাদা
শাড়ি পরে কে যেন দাঁড়িয়ে
আছে। ইসরাক জানত হিন্দু
মহিলারা সাদা শাড়ি পরে ভূত
হয়ে মানুষকে ভয় দেখায়। এ কথা
মনে পড়ার পর ইসরাক আরও বেশি ভয়
পেতে শুরু করল এবং তার ঘাম হতে
শুরু করল। সে এক দৌঁড় দিয়ে সামনে
এসে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।
সকালে বাড়ির লোকজন এসে
তাকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে
যায়। গ্রামের নানা কবিরাজকে
ডেকে আনা হল, ইসরাকের শরীর
থেকে ভূত ছাড়ানোর জন্য। কেউ
তেল পড়া, পানি পড়া দিয়ে তার
শরীর থেকে ভূত ছাড়ানোর জন্য
চেষ্টা করল, কিন্তু পারল না। কেউ
কেউ তাকে বলল দেবের মা তার
শরীরে ভর করেছে। কারণ জীবিত
থাকতে ওই মহিলা অনেক খারাপ
ছিল। অবশেষে ডাক্তার
চিকিৎসা করে তার জ্ঞান
ফিরিয়ে আনল, জ্ঞান ফিরে এলে
ডাক্তার তাকে জিজ্ঞেস
করলেন, “কী কারণে তুমি অজ্ঞান
হয়েছিলে?” ইসরাক বলল, “শ্মশানে
ভূত দেখেছিলাম।” ডাক্তার
বললেন, “তুমি কোন জায়গাটায় ভূত
দেখেছিলে সেখানে আমাকে
নিয়ে চল।” ইসরাক যে জায়গায় ভূত
দেখেছিল সেখানে গিয়ে
দেখে একটি ছোট কলাগাছ
জন্মেছে সেখানে। এটাকেই সে
ভূত মনে করেছিল। কারণ, রাতের
বেলা গাছের সবুজ পাতায়
জ্যোৎস্না পড়লে হালকা সাদা
দেখায়। ডাক্তার এ কথা বলার পর
ইসরাক কিছু স্বস্তি পেল। তার
ভিতর থেকে ভূতের ভয় দূর হল। শুধু
ইসরাক নয় ইসরাকের মতো আরও
অনেক লোক রাতে শ্মশানের
সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ভয় পায়
না। কারণ ডাক্তার বাবু গ্রামের
লোকদের বলে গেলেন যে, “ভূত
বলে কিছু নেই।” তাই অনেকে এই
কুসংস্কার থেকে মুক্তি পেল।

0 comments:

Post a Comment