কানের রোগগুলোর মধ্যে
কানপাকা রোগ অন্যতম। কানপাকা
রোগ দুই ধরনের। একটি হচ্ছে
নিরাপদ ধরনের, অন্যটি মারাত্মক
ধরনের। নিরাপদ ধরনের কানপাকা
রোগে কান থেকে কানের পর্দা
ছিদ্র থাকে। কান দিয়ে পুঁজ পড়ে।
কানেব্যথা হয়, কান চুলকায়, কানে
কম শোনা যায়। প্রাথমিক অবস্থায়
কিছু ওষুধ ব্যবহার করে ও উপদেশ
মেনে চললে রোগ নিরাময় করা
যায়। তবে এতে কানের পর্দা
জোড়া লাগে না। অপারেশন করে
কানের পর্দা জোড়া লাগানো
যায়।
মারাত্মক ধরনের কানপাকা
রোগে কান দিয়ে সবসময় একটু করে
কষের মত ঝরে। কানের এ কষ পচা-
দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা এ দুর্গন্ধ থেকেই
রোগটির ধরন বুঝতে পারেন।
মারাত্মক ধরনের কানপাকা
রোগে অপারেশনই হচ্ছে প্রকৃত
চিকিৎসা। উভয় ধরনের কানপাকা
রোগ জটিল হয়ে কানের পুঁজ
মস্তিষ্কে পৌঁছে যেতে পারে।
এ ধরনের জটিলতায় কানে
অপারেশন লাগে। অনেক ক্ষেত্রে
রোগ নিরাময়ের পাশাপাশি
রোগীর জীবন বাঁচানোর জন্য এ
অপারেশন করতে হয়। কানপাকা
রোগ নিয়ে কখনোই হেলা-ফেলা
করা উচিত নয়।
মধ্যকর্ণে প্রদাহ; এ সমস্যা শিশুদের
বেশি হয়ে থাকে। তবে বড়দেরও
হয়ে থাকে। সাধারণত
ঊর্ধ্বশ্বাসনালির প্রদাহ, টনসিলে
ইনফেকশন, এডিনয়েড নামক গুচ্ছ
লসিকা গ্রন্থির বৃদ্ধি ইত্যাদি
থেকে এ ইনফেকশন হয়ে থাকে। এ
রোগে কানে বেশ ব্যথা হয়, কান
বন্ধ মনে হয়। সঠিক সময়ে এ রোগের
চিকিৎসা না করলে কানের পর্দা
ফুটো হয়ে রোগটি কানপাকা
রোগে রূপ নিতে পারে।
অ্যান্টিবায়োটিক ও নাকের
ড্রপসহ অন্যান্য ওষুধ হচ্ছে এ রোগের
চিকিৎসা। মধ্যকর্ণে পানির মতো
তরল জমা হয়।
এ রোগের কারণও উপসর্গ অনেকটা
মধ্যকর্ণে প্রদাহের মতোই। তবে
উপসর্গগুলোর তীব্রতা অনেক কম
থাকে। সাধারণ ওষুধেই এ রোগ
সারে। অনেক সময় ছোট অপারেশন
করে মধ্যকর্ণে জমে থাকা পানি
বের করে দিতে হয়। কানে
ফাঙ্গাস ও ক্ষত কানের মধ্যে
অনেক সময় ফাঙ্গাস এবং ক্ষত হয়।
সাধারণত কান খোঁচানোর জন্য
কানের মধ্যে ফাঙ্গাস হয়ে
থাকে। কান পরিষ্কার করা
কিংবা কান খোঁচানো অনেক
সময় একই বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এসব
কাজে ব্যবহার করা হয় কটনবাড
থেকে মুরগির পালক, কলমের মুখ,
চুলের ক্লিপ ইত্যাদি ব্যবহার করা
হয়। এসব কানের রোগটির জন্য
দায়ী। কানে ফাঙ্গাস হলে মূলত
চুলকায়। সঙ্গে ইনফেকশন বেড়ে
প্রদাহ হলে ব্যথা হয়, কষ ঝরে ও কান
বন্ধ হয়ে থাকে। অনেক সময় কানের
ভেতরে ক্ষত হয়ে ফাঙ্গাসের
সঙ্গে কানের বাইরের পথটিতে
ক্ষত সৃষ্টি হলে ব্যথা মারাত্মক
আকার ধারণ করে। তবে চিকিৎসায়
পুরো সেরে যায়।
তবে ওষুধের চিকিৎসা শুরুর আগে
ইএনটি বিশেষজ্ঞ দিয়ে কান
পরিষ্কার করিয়ে নিতে হবে।
কানে ওয়াক্স বা খোল কানে
ওয়াক্স বা খোল অতি পরিচিত
সমস্যা। এ খোল অনেকেই পরিষ্কার
করার চেষ্টা করেন। নিজে এটি
পরিষ্কার করা ঠিক নয়। নিজে
পরিষ্কার করতে গেলে জমে
থাকা খোলের বেশিরভাগই
ভেতরে চলে যায়। ফলে বিপত্তি
আরও বাড়ে। কানে খোল আটকে
গেলে কানে ব্যথা হয়, কানে কম
শোনা যায়। ইএনটি স্পেশালিস্ট
কান দেখে এটি পরিষ্কার করে
দিতে পারেন। তাবে পরিষ্কার
করা সম্ভব না হলে খোল গলানোর
ওষুধ রয়েছে। তাতেও কাজ না হলে
কিংবা অবস্থা বেশি খারাপ
হলে অজ্ঞান করে কান পরিষ্কার
করে দিতে হয়। যাদের কানে
খোল হওয়ার প্রবণতা রয়েছে
তারা নিয়মিত কানে ৪-৫
ফোঁটা করে অলিভ অয়েল দিতে
পারেন।
ডা. সজল আশফাক
সহযোগী অধ্যাপক
নাক কান গলা বিভাগ
হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
সংগৃহীত
0 comments:
Post a Comment