Wednesday, November 25, 2015

মামা বাড়ির ভূত ||

পরীক্ষা শেষ। বইপত্র শিকেয়
তুলে ড্যাং ড্যাং করতে
করতে মামার বাড়ি চলল
তোতন। সেই কবে থেকে তার
মামাবাড়ি যাওয়ার প্লান।
সেখানে গিয়ে কিভাবে
আরো দুরন্তপনা করা যায়
সেটাই আসলে তার উদ্দেশ্য।
মামাত ভাই রাতুলকে নিয়ে
পাখির ডিম পেড়ে আনা,
টিয়া পাখির ছানা ধরে
আনা, কাঠবেড়ালি শিকার,
ঘুড়ি ওড়ানো, মার্বেল খেলা,
মাছ শিকারের মতো দারুন
কাজগুলো করবে বলে ভেবে
রেখেছে।
তোতনকে দেখেই হৈ হৈ করে
ছুটে এলো রাতুল। অনেকদিন পর
তারও কিছুটা আনন্দ করার
সুযোগ হলো। দুপুরে মামি
সেরকম আয়োজন করেছেন।
তোতন আর রাতুল পেট পুরে
এক্কেবারে গলা পর্যন্ত
খেয়েছে। খেয়ে দেয়ে লম্বা
ঘুম দিয়ে একেবারে বিকেল
গড়িয়ে গেলে তারপর
উঠেছে। ঘুম থেকে উঠে ওরা
চলল শেফালীদের নতুন পুকুর
দেখতে। মাঠের মধ্যে একটা
মস্ত পুকুর কেটেছে। তাতে
এখনো পানি ওঠেনি। তাতে
নেমে ছেলে মেয়েরা সবাই
কুমির কুমির খেলছে।
পুকুরের মধ্যে মাটি কাটার
লোকজন আবার স্বাক্ষী
রেখেছে। তাতে উঠে
দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন। আর
সমতল যায়গায় একজন কুমির হয়ে
দাঁড়িয়ে আছে। স্বাক্ষী হলো
মাটি কাটার হিসেব রাখার
জন্য উঁচু উঁচু মাটির ঢিবি। সেই
ঢিবি থেকে নেমে সবাই
বলছে, ‘কুমির তোর জলে
নেমেছি’ অমনি কুমির ছুটে
গিয়ে তাদের তাড়া করছে।
যাকে ছুঁয়ে দিচ্ছে সে কুমির
হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলছে
খেলা।
তোতনের কাছে খুব মজা
লাগল খেলাটা। সে নিজেও
নেমে পড়ল কুমিরের জলে।
বেশ কয়েকবার কুমির হলো
তোতন। সেখানে ডানপিটে
এক মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হলো
তার। মেয়েটির নাম রাম্পি।
খুব চটপটে। তোতনদের বয়সীই
হবে। তোতনকে বলল, ‘শহর
থেকে এসেছ তো, এই গ্রামের
অনেক কিছুই জানো না।
রাতে যেনো আবার গাজীর
আম বাগানে যেও না।
সেখানে কিন্তু ভূত আছে।’
সে রাম্পিকে জিজ্ঞেস
করে, ‘তুমি কি করে জানলে?’
‘কাউকে বলো না, আমি চুরি
করতে গিয়ে দেখেছি।’ বলে
রাম্পি। তোতন অবাক হয়ে
তাকিয়ে থাকে রাম্পির
দিকে। বলে কি এই মেয়ে! ‘আম
চুরি করা কি খুব দরকার?’ বলে
তোতন। ‘না, রাতে আম চুরি
করার মজাই আলাদা। তুমি
কখনো করেছ? করলে বুঝতে।
চলো যাবে আজ? সাহস
থাকলে এসো।’ তোতন বলে,
‘ভূতের ভয় করে না তোমার?’
জবাবে মুচকি একটু হেসে দৌড়
লাগায় রাম্পি।
রাতে খাওয়ার পর তোতন
রাতুলকে বলল, ‘কিরে রাতুল,
রাম্পি তখন এভাবে ভয় দেখাল
কেনো? গাজীর আম বাগানে
কি সত্যিই ভূত আছে?’ রাতুল
কোনো জবাব দেয় না।
তোতনের প্রশ্নের চোটে
শেষে সে বলে, ‘বেশ কিছু
দিন থেকেই শোনা যাচ্ছে
রাতে নাকি দিকে কি সব
ঘোরা ফেরা করে। আমি অবশ্য
কোনো দিন যাইনি। কিছু
দেখিওনি।’ ‘তাহলে চল
আজকে যাই, দেখি আসি ভূতটা
কেমন দেখতে।’ চটপটিয়ে বলে
ওঠে তোতন। ‘তোর মাথা
খারাপ হয়েছে নাকি? আমি
যেতে পারব না, তুই যা।’ বলে
বালিশের নিচে মাথা গুঁজে
দেয় রাতুল।
রাত তখন বেশি হয়নি, আটটার
মতো হবে। এই সন্ধ্যে উৎরানো
রাতেই গ্রামের সবাই
খেয়েদেয়ে ঘুমানোর
জোগাড় করেছে। তোতন দরজা
খুলে বেরিয়ে পড়ে। পিছন
থেকে তাকে ডাকতে থাকে
রাতুল। ‘আরে কি করিস?
আরে...’ ইতস্তত করতে করতে
সেও পিছু নেয়।
আকাশে চাঁদের আলোয় বান
ডেকেছে। ঝিরি ঝিরি
হাওয়ায় সদ্য ওঠা ধানের
ঘ্রাণ। তোতন গাজীর আম
বাগান চেনে না। তবে ঠিকই
জানে রাতুল তার পিছে
আসবে। এজন্য দরজা খুলে
বেরিয়ে পড়ে। পেছন থেকে
রাতুল এসে তাকে আরেকবার
বোঝানোর চেষ্টা করে।
তোতন তখন তাকে বলে, ‘শোন
কখনো কোনো বিষয়ে ভয়
পেলে সেই ভয়ের মুখোমুখি
হতে হয়। তা না হলে
সারাজীবন সেই ভয় তাড়া
করে বেড়ায়।’
দূর থেকে গাজীর
আমবাগানটি দেখে গা ছম ছম
করে ওঠে রাতুলের। তোতনও
খানিকটা শিউরে ওঠে।
কাছাকাছি হতেই বাগানের
গাছভর্তি আমের গুটি দেখা
যায়। চাঁদের মোলায়েম
আলোয় সেগুলোকে এক একটা
বড় সাইজের রসগোল্লার মতো
মনে হয়। বাগানে পা দেওয়া
মাত্র সামনে দিয়ে সাদা
মতো কি যেনো একটা দৌড়ে
গেল। ভয়ে রাতুলের কথা
আটকে যায়। সে পালাতে
চেষ্টা করে। তোতন তার হাত
শক্ত করে টেনে ধরে।
সাদা মূর্তিটি এক গাছ থেকে
আরেক গাছের আড়ালে
দৌড়াতে থাকে। হঠাৎ
দেখলে সত্যিই ভয় লাগে।
একটা ঢিল কুড়িয়ে নেয়
তোতন। তারপর সাদা মূর্তিটা
যেই গাছের আড়াল থেকে
বের হয় ওমনি সেটা তাক করে
ছুড়ে মারে তোতন। সাদা
মূর্তিটির গায়ে লাগতেই উহ
করে ওঠে। গলাটি একটা
বাচ্চা মেয়ের বলেই মনে
হলো। বুকে সাহস নিয়ে
সেদিকে দৌড়ে যায় তোতন।
রাতুলও দৌড় লাগায়। তারপর
গিয়ে চেপে ধরে
মূর্তিটিকে।
‘ছেড়ে দাও, মরে গেলাম’
বলে চেঁচিয়ে ওঠে সাদা
মূর্তি। তোতনরা ছেড়ে
দিতেই লাফ দিয়ে উঠে
দাঁড়ায় রাম্পি। ‘ওরে বাবা,
তোমাদের দেখছি বেজায়
সাহস।’ গর্বে বুক ফুলে ওঠে
রাতুলের। তোতন রাম্পিকে
জিজ্ঞেস করে, ‘তুমি এভাবে
সাদা কাপড় পরে ভূত সেজে
ভয় দেখাচ্ছ কেনো?’
রাম্পি হেসে বলে, ‘এবার এই
বাগান আমরা লিজ নিয়েছি।
কিছুতেই যখন আম চুরি
ঠেকানো যাচ্ছিল না, তখন এই
বুদ্ধি করি আমি। এখন আর
কোনো চোর বাগানে আসে
না।’ রাতুল বলে, ‘তোতনকে
তুমি এভাবে আসতে বললে
কেনো?’ ‘শহুরে মানুষেরা
কেমন সাহসী হয় সেটা দেখার
জন্য।’ বলে আর দাঁড়ায় না
রাম্পি। তোতন আর রাতুলও
বাড়ির দিকে পা বাড়ায়।

0 comments:

Post a Comment