প্রতি বছর শীতের ছুটির সময় ভাবি
কিছুদিন গ্রামে কাটিয়ে আসব।
দলবল নিয়ে যাব- হৈচৈ করা
যাবে। আমার বাচ্চারা কখনও
গ্রাম দেখেনি- তারা খুশি হবে।
পুকুরে ঝাঁপাঝাঁপি করতে পারবে।
শাপলা ফুল শুধু যে মতিঝিলের
সামনেই ফোটে না, অন্যান্য
জায়গাতেও ফোটে তাও স্বচক্ষে
দেখবে।
আমার বেশির ভাগ পরিকল্পনাই
শেষ পর্যন্ত কাজে লাগাতে
পারি না। এটা কেমন করে জানি
লেগে গেল।
একদিন সত্যি সত্যি রওনা হলাম।
আমাদের গ্রামটাকে অজ
পাড়াগাঁ বললেও সম্মান
দেখানো হয়। যোগাযোগ-
ব্যবস্থার এমন সুন্দর সময়েও সেখানে
পৌঁছাতে হয় গরুর গাড়িতে। বর্ষার
সময় নৌকা, তবে মাঝখানে একটা
হাওর পড়ে বলে সেই যাত্রা
অগস্ত্যযাত্রার মতো।
অনেকদিন পর গ্রামে গিয়ে
ভালো লাগল। দেখলাম আমার
বাচ্চাদের আনন্দবর্ধনের সব
ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে।
কোত্থেকে যেন একটা
হাড়জিরজিরে বেতো ঘোড়া
জোগাড় করা হয়েছে। এই ঘোড়া
নড়াচড়া করে না, এক জায়গায়
দাঁড়িয়ে থাকে। খুব বেশি বিরক্ত
হলে দীর্ঘনিশ্বাসের মতো একটা
শব্দ করে এবং লেজটা নাড়ে।
বাচ্চারা এতবড় একটা জীবন্ত
খেলনা পেয়ে মহাখুশি। দু-তিনজন
একসঙ্গে ঘোড়ার পিঠে উঠে বসে
থাকে।
তাদের অসংখ্য বন্ধু-বান্ধবও জুটে
গেল। যেখানেই যায় তাদের
সঙ্গে গোটা পঞ্চাশেক
ছেলেপুলে থাকে। আমার
বাচ্চারা যা করে তাতেই তারা
চমৎকৃত হয়। আমার বাচ্চারা তাদের
বিপুল জনপ্রিয়তায় অভিভূত। তারা
তাদের যাবতীয় প্রতিভা
দেখাতে শুরু করল-কেউ কবিতা
বলছে, কেউ গান, কেউ ছড়া।
আমি একগাদা বই সঙ্গে করে
নিয়ে গিয়েছিলাম। আমার
পরিকল্পনা- পুরোপুরি বিশ্রাম
নেওয়া। শুয়ে বসে বই পড়া, খুব
বেশি ইচ্ছা করলে খাতা-কলম
নিয়ে বসা। একটা উপন্যাস
অর্ধেকের মতো লিখেছিলাম,
বাকিটা কিছুতেই লিখতে ইচ্ছা
করছিল না। পান্ডুলিপি সঙ্গে
করে নিয়ে এসেছি। নতুন
পরিবেশে যদি লিখতে ইচ্ছা
করে।
প্রথম কিছুদিন বই বা লেখা
কোনোটাই নিয়ে বসা গেল না।
সারাক্ষণই লোকজন আসছে। তারা
অত্যন্ত গম্ভীর গলায় নানান জটিল
বিষয় নিয়ে আলোচনায় উৎসাহী।
এসেই বলবে- ‘দেশের অবস্থাডা
কী কন দেহি ছোডমিয়া। বড়ই
চিন্তাযুক্ত আছি। দেশের হইলডা
কী? কী দেশ ছিল আর কী হইল?’
দিন চার-পাঁচেকের পর সবাই বুঝে
গেল দেশ সম্পর্কে আমি কিছুই
জানি না। গল্পগুজবও তেমন করতে
পারি না। তারা আমাকে রেহাই
দিল। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।
গ্রামের নতুন পরিবেশের কারণেই
হোক বা অন্য কোনও কারণেই হোক
আমি লেখালেখির প্রবল আগ্রহ
বোধ করলাম। অসমাপ্ত পান্ডুলিপি
নিয়ে বসলাম। সারাদিন
লেখালেখি কাটাকুটি করি,
সন্ধ্যায় স্ত্রীকে সঙ্গে করে
বেড়াতে বের হই। চমৎকার লাগে।
প্রায় রাতেই একজন দুজন করে
‘গাতক’ আসে। এরা
জ্যোৎস্নাভেজা উঠোনে বসে
চমৎকার গান ধরে-
“ও মনা
এই কথাটা না জানলে প্রাণে
বাঁচতাম না।
না না না-আমি প্রাণে বাঁচতাম
না।”
সময়টা বড় চমৎকার কাটতে লাগল।
লেখার ব্যাপারে আগ্রহ বাড়তেই
লাগল। সারাদিনই লিখি।
এক দুপুরের কথা- একমনে লিখছি।
জানালার ওপাশে খুট করে শব্দ
হলো। তাকিয়ে দেখি
খালিগায়ে রোগামতো দশ-
এগারো বছরের একটা ছেলে গভীর
আগ্রহে আমার দিকে তাকিয়ে
আছে। ওকে আগেও দেখেছি।
জানালার ওপাশ থেকে গভীর
কৌতূহলে সে আমাকে দেখে।
চোখে চোখ পড়লেই পালিয়ে
যায়। আজ পালাল না।
আমি বললাম- কী রে?
সে মাথাটা চট করে নামিয়ে
ফেলল।
আমি বললাম- চলে গেলি নাকি?
ও আড়াল থেকে বলল- না।
‘নাম কী রে তোর?’
‘মন্তাজ মিয়া।’
‘আয় ভেতরে আয়।’
‘না।’
আর কোনও কথাবার্তা হল না।
আমি লেখায় ডুবে গেলাম।
ঘুঘুডাকা শ্রান্ত দুপুরে
লেখালেখির আনন্দই অন্যরকম।
মন্তাজ মিয়ার কথা ভুলে গেলাম।
পরদিন আবার এই ব্যাপার।
জানালার ওপাশে মন্তাজ মিয়া।
বড় বড় কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে
আছে। আমি বললাম- কী ব্যাপার
মন্তাজ মিয়া? আয় ভেতরে।
সে ভেতরে ঢুকল।
আমি বললাম, থাকিস কোথায়?
উত্তরে পোকা-খাওয়া দাঁত বের
করে হাসল।
‘স্কুলে যাস না?’
আবার হাসি। আমি খাতা থেকে
একটা সাদা কাগজ ছিঁড়ে তার
হাতে দিলাম। সে তার এই বিরল
সৌভাগ্যে অভিভূত হয়ে গেল। কী
করবে বুঝতে পারছে না।
কাগজটার গন্ধ শুঁকল। গালের উপর
খানিকক্ষণ চেপে রেখে উল্কার
বেগে বেরিয়ে গেল।
রাতে খেতে খেতে আমার ছোট
চাচা বললেন- মন্তাজ
হারামজাদা তোমার কাছে
নাকি আসে? আসলে একটা চড়
দিয়ে বিদায় করবে।
‘কেন?’
‘বিরাট চোর। যা-ই দেখে তুলে
নিয়ে যায়। ত্রিসীমানায়
ঘেঁষতে দিবে না। দুই দিন পরপর
মার খায় তাতেও হুঁশ হয় না।
তোমার এখানে এসে করে কী?’
‘কিছু করে না।’
‘চুরির সন্ধানে আছে। কে জানে
এর মধ্যে হয়তো তোমার কলম-টলম
নিয়ে নিয়েছে।’
‘না, কিছু নেয়নি।’
‘ভালো করে খুঁজে-টুজে দ্যাখো।
কিছুই বলা যায় না। ঐ ছেলের
ঘটনা আছে।’
‘কী ঘটনা?’
‘আছে অনেক ঘটনা। বলব একসময়।
পরদিন সকালে যথারীতি
লেখালিখি শুরু করেছি। হৈচৈ
শুনে বের হয়ে এলাম। অবাক হয়ে
দেখি মন্তাজ মিয়াকে তিন-
চারজন চ্যাংদোলা করে নিয়ে
এসেছে। ছেলেটা ফোঁপাচ্ছে।
বোঝাই যাচ্ছে প্রচন্ড মার
খেয়েছে। ঠোঁট ফেটে রক্ত পড়ছে।
একদিকের গাল ফুলে আছে।
আমি বললাম, কী ব্যাপার?
শাস্তিদাতাদের একজন বলল,
দেখেন তো এই কলমটা আপনের কি
না। মন্তাজ হারামজাদার হাতে
ছিল।
দেখলাম কলমটা আমারই, চার-পাঁচ
টাকা দামের বলপয়েন্ট। এমন কোনও
মহার্ঘ বস্তু নয়। আমার কাছে
চাইলেই দিয়ে দিতাম। চুরি করার
প্রয়োজন ছিল না। মনটা একটু
খারাপই হল। বাচ্চা বয়সে
ছেলেটা এমন চুরি শিখল কেন? বড়
হয়ে এ করবে কী?
‘ভাইসাব, কলমটা আপনার?’
‘হ্যাঁ। তবে আমি এটা ওকে দিয়ে
দিয়েছি। ছেড়ে দিন। বাচ্চা
ছেলে এত মারধর করেছেন কেন?
মারধর করার আগে আমাকে
জিজ্ঞেস করে নেবেন না?’
শাস্তিদাতা নির্বিকার
ভঙ্গিতে বলল, এই মাইরে ওর কিছু হয়
না। এইডা এর কাছে পানিভাত।
মাইর না খাইলে এর ভাত হজম হয়
না।
মন্তাজ মিয়া বিস্মিত চোখে
আমাকে দেখছে। তাকে দেখেই
মনে হল সে তার ক্ষুদ্র জীবনে এই
প্রথম একজনকে দেখছে যে চুরি
করার পরও তাকে চোর বলেনি।
মন্তাজ মিয়া নিঃশব্দে বাকি
দিনটা জানালার ওপাশে বসে
রইল। অন্যদিন তার সঙ্গে দুএকটা
কথাবার্তা বলি, আজ একটা কথাও
বলা হল না। মেজাজ খারাপ
হয়েছিল। এই বয়সে একটা ছেলে
চুরি শিখবে কেন?
মন্তাজ মিয়ার যে একটা বিশেষ
ঘটনা আছে তা জানলাম আমার
ছোট চাচির কাছে। চুরির ঘটনারও
দুদিন পর। গ্রামের মানুষদের এই
একটা অদ্ভুত ব্যাপার। কোন ঘটনা
যে গুরুত্বপূর্ণ, কোনটা তুচ্ছ তা এরা
বুঝতে পারে না। মন্তাজ মিয়ার
জীবনের এত বড় একটা ব্যাপার
কেউ আমাকে এতদিন বলেনি, অথচ
তুচ্ছ সব বিষয় অনেকবার করে শোনা
হয়ে গেছে। মন্তাজ মিয়ার
ঘটনাটা এই-
Featured
BTemplates.com
Categories
- অনলাইন ইনকাম
- অন্যান্য
- অ্যাডবি ফটোশপ
- অ্যাডসেন্স
- অ্যান্টিভাইরাস
- আইওএস
- আইন
- ইন্টারনেট
- ইসলাম
- উইন্ডোজ
- উইন্ডোজ ৭
- উইন্ডোজ ৮
- উপন্যাস
- এনিমেশন
- এন্ড্রোয়েড মোবাইল
- এয়ারটেল
- ওডেস্ক
- ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
- কম্পিউটার
- কৌতুক
- খবর
- গানের লিরিক্স
- গ্রামীনফোন
- জীবনী
- তথ্য ও প্রযুক্তি
- দেশাত্মবোধক গান
- নেটওয়ার্কিং
- নোকিয়া
- পড়াশুনা
- পেপাল
- ফেইসবুক স্ট্যাটাস
- ফ্রিলান্সিং
- বাংলাদেশ
- বাংলালিংক সিম
- বিজ্ঞান
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
- ব্লগিং
- ভৌতিক গল্প
- মাইক্রোসফট
- মাইক্রোসফট এক্সেল
- মাইক্রোসফট ওয়ার্ড
- মানবদেহ
- মেডিটেশন
- রোমান্টিক এস.এম.এস
- ল্যাপটপ
- সকল জেলা
- স্বাস্থ্য
- হাদিস
- হিপনোটাইজ
- হ্যাকিং
Powered by Blogger.
statistics

Recent
Comment
Business
Subscribe
Blog Rule
বাংলা ভাষার দেশীয় প্রযুক্তি ব্লগ প্রযুক্তির কথায় আপনাকে স্বাগতম। প্রযুক্তির কথায় টিউন ও মন্তব্য করার পূর্বে অবশ্যই নীতিমালা মেনে চলুন।প্রযুক্তির কথায় নিবন্ধন ও মন্তব্য করলে ধরে নেওয়া হবে তিনি 'নীতিমালা ও ব্যবহারবিধি' পড়ে তাতে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।
Learn More : Click Here
Learn More : Click Here
About Blogger
Mohammad Rabiul Islam
Ambaria, Madhupur, Tangail
Dhaka, Bangladesh-1997
Mobile: +8801929541403
Facebook: Rabiul Islam
Email:
pcworldbdsite@gmail.com
rabiul_islam15@yahoo.com
Ambaria, Madhupur, Tangail
Dhaka, Bangladesh-1997
Mobile: +8801929541403
Facebook: Rabiul Islam
Email:
pcworldbdsite@gmail.com
rabiul_islam15@yahoo.com
Beauty
Office Address
Updated very soon. Still working.
Contributors
Contact With Us
Comments
Recent Post
Most Recent
Wednesday, November 25, 2015
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Popular Posts
-
আমার সোনার বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত “ আমার সোনার বাংলা ” র গীতিকবিতা: আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি । চিরদিন তোমার আকাশ , ত...
-
প্রকৃতি পরিবেশ ও গ্রামবাংলার সঙ্গে এ প্রজন্মের বিরাট ব্যবধান থাকলেও ইসরাককে গ্রামের খাল- বিল, সবুজ-শ্যামল মাঠ, ফসলের খেত, ছায়াঢাকা পথ, ...
-
জোবায়ের রহমান ৮ মার্চ ২০১৫ হিপনোসিস শব্দের অর্থ সম্মোহন। একজনের চরম প্রস্তাবনা, তীব্র আবেগ ও কল্পনা শক্তি দ্বারা অন্যের মনকে প্রভাবিত ক...
-
আজ আমি আপনাদের সাথে কিছু মজার কৌতুক শেয়ার করলাম .. আশা করি ভালো লাগবে .. জাহাজের ক্যাপ্টেন নিয়োগ পেতে এক লোক ইন্টারভিউ দিতে এসেছে নিয়ো...
-
হস্তমৈথুনের ফলে যে সব ক্ষতি হয় তা জেনে নিন (A-Z) হস্তমৈথুন(Masturbation) বা স্বমেহন বর্তমানে একটি বড় সমস্যা। হস্তমৈথুনের কারণে দুই ধরনের...
-
দুইশো এক গম্বুজ বিশিষ্ট নির্মাণাধীন মসজিদটি সেখানকার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে বলে জানা গেছ...
-
ল্যাপটপ বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান সমস্যা ১- ল্যাপটপ ব্যাকআপ কম দিচ্ছে সমস্যা ২- ল্যাপটপের বাটারি ব্যাকআপ বাড়ানোর উপায় কি? সমস্যা ৩...
-
একজন মানুষকে হিপনোটাইজড বা সন্মোহিত করতে যে সেশনটা করা হয় তাকে বলা হয় হিপ্নোটিক সেশন। হিপ্নোটিক সেশনটা হয় ৫ ভাগে। 1. pre-talk – ...
-
১. পলাতকার উড়াল তারিখটা আজও মনে আছে : পয়লা সেপ্টেম্বর । মেট্রো রেল স্টেশানের চত্বরে দাঁড়িয়ে, মোবাইলট...
-
‘দাদি প্লিজ আমাদের একটা কিচ্ছা শুনাও প্লিজ আমরা কিচ্ছা শুনবো।’ ফায়সাল ওর দাদিকে জড়িয়ে ধরে বলল । ফায়সালের সাথে সাথে সুমা, রনি, দানিয়াল, ...
0 comments:
Post a Comment