Friday, November 27, 2015

সিলেট জেলার পরিচিতি

সিলেট উত্তর পূর্ব বাংলাদেশের
একটি প্রধান শহর, একই সাথে এই শহরটি
সিলেট বিভাগের বিভাগীয় শহর।
এটি সিলেট জেলার অন্তর্গত।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের
আওতাধীন এলাকাই মূলত সিলেট শহর
হিসেবে পরিচিত। সিলেট ২০০৯
সালের মার্চ মাসে একটি
মেট্রোপলিটন শহরের মর্যাদা লাভ
করে।[১] সুরমা নদীর তীরবর্তী এই
শহরটি বাংলাদেশের অন্যতম
বৃহৎ[ তথ্যসূত্র প্রয়োজন ] ও গুরুত্বপুর্ণ শহর।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত এ শহরটি
দেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী
হিসেবে খ্যাত। সিলেট
বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনি
জেলা হিসেবে পরিচিত। শিল্প,
প্রাকৃতিক সম্পদ ও অর্থনৈতিক ভাবে
সিলেট দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ধনি
জেলা। জৈন্তিয়া পাহাড়ের অপরূপ
দৃশ্য, জাফলং এর মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য,
ভোলাগঞ্জের সারি সারি
পাথরের স্তূপ পর্যটকদের টেনে আনে
বার বার। এ শহরের বিশাল সংখ্যক
লোক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাস
করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ
করে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ
ভূমিকা পালন করে আসছে [৩] ।
সিলেটের পাথর , বালুর গুণগতমান
দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এখানকার
প্রাকৃতিক গ্যাস সারা দেশের
সিংহভাগ চাহিদা পূরণ করে থাকে
[৩] । স্বাধীনতা যুদ্ধে এ জেলার
ভূমিকা অপরিসীম। জেনারেল
এম,এ,জি ওসমানী এ জেলারই কৃতী
সন্তান। হযরত শাহজালাল (রাঃ) ও
হযরত শাহ পরান (রাঃ) এর পবিত্র
মাজার শরীফ এ জেলায় অবস্থিত।
প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ লোক
মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আগমন
করে। আসে বিপুল সংখ্যক পর্যটক।
সিলেট এর স্থানীয় ভাষা ‘‘ সিলটি
ভাষা ’’র একটি বিশেষত্ব রয়েছে যা
অন্য অঞ্চল থেকে পৃথক।এছাড়া
নাগরী বর্ণমালা নামে সিলেটের
নিজস্ব বর্ণমালা ও রয়েছে। শীত
মৌসুমে সিলেটের হাওর- বাওর গুলো
ভরে উঠে অতিথি পাখির কলরবে।
ইতিহাস
ইতিহাসবিদেরা বলেন বহুযুগ ধরে
সিলেট একটি বাণিজ্যিক শহর
হিসেবে প্রচলিত আছে। ধারণা করা
হয়ে থাকে যে "হরিকেলা
রাজত্তের" মুল ভুখন্ড ছিলো এই
সিলেট।১৪'শ শতকের দিকে এই
অঞ্চলে ইসলামী প্রভাব দেখা যায়
সূফী দার্শনিকদের আগমনের মাধ্যমে।
১৩০৩ সালে কালৈতিহাসিক মুসলিম
সাধু হযরত শাহজালাল (রাঃ) এর
আবির্ভাব ঘটে এই সময়ে। তিনি
মক্কা থেকে দিল্লি ও ঢাকা হয়ে
এই এলাকায় আসেন। তার আধ্যাতিক
ক্ষমতার প্রভাবে ও তার অনুসারী ৩৬০
জনের মাধ্যমে আরো অনেকেই
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। পরবর্তীতে তা
দেশের অন্যত্র ও ছড়িয়ে পড়ে। তার
দরগাহ সিলেটের একটি অন্যতম
দর্শনীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত
হয়। এছাড়া হযরত শাহ পরান ও শাহ
কামাল কাহাফানের সান্নিধ্যে
এসেও অনেকে বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্ম
থেকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত
হয়েছিল। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া
কোম্পানি এর শাসনামলে ইন্ডিয়ান
লস্করেরা এই এলাকায় তাবেদারী
শাসন চালাতো। ১৭৭৮ সালে রবার্ট
লিন্ডসে কে সিলেটের দায়ভার
দেয়া হয়। তবে তখনকার স্থানীয়
সিলেটিরা তাকে ভালোভাবে
নেয় নি।১৭৮১ সালে এই এলাকায়
একটি বড় ধরনের বন্যা হয়েছিলো।
এতে অসংখ্য ফসল ও পাখি মারা
যায়। স্থানীয়রা এজন্য ব্রিটিশ দের
দায়ী করে। এই আন্দোলনে মুখ্য
ভূমিকা পালন করেন সৈয়দ হাদী ও
সৈয়দ মাহাদী(পীরজাদা নামে
পরিচিত)। লিন্ডসের সাথে তখন
তাদের যুদ্ধ সংঘটিত হয় যাতে প্রচুর
ভারতীয় তস্কর অংশ নেয়। ফলস্রুতিতে
অনেকেই সিলেট ছেড়ে লন্ডনে
চলে যায় ও বসতি গড়ে তোলে।
ব্রিটিশ শাসনের সময় আসাম ও
সিলেট একত্রিত হয়ে আসামের অংশ
ছিল। পরবর্তীতে ভারত ও
পাকিস্তান আলাদা দেশ গঠনের সময়
আসাম ও সিলেট আলাদা হয়ে যায়।
১৯৭১-এর যুদ্ধে জয়লাভের পর এটি পূর্ব
পাকিস্তান তথা বাংলাদেশ -এর
ভূখন্ডে পড়ে।
জনপ্রশাসন
সিলেট শহরে ২৭টি ওয়ার্ড ও ২১০টি
মহল্লা রয়েছে। এর আয়তন ২৬·৫ বর্গ
কিলোমিটার। ২০০১ সালের ৯
এপ্রিল সিলেট শহরকে সিলেট সিটি
কর্পোরেশনের অধীন করা হয়। সিলেট
শহর হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ,
মৌলভীবাজার ও সিলেটের
বিভাগীয় শহর হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন মূলত
সিলেট শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা,
রাস্তা নির্মাণ,ট্রাফিক
পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ, নিবন্ধনসহ
আরো অনেক কাজে সংশ্লিষ্ট কাজ
সম্পাদন করে। কর্পোরেশনের মেয়র ও
২২জন কমিশনার পুরো শহরের সব ধরণের
উন্নয়নের কাজ করে থাকেন।
শিক্ষা ও শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান
শিক্ষা ক্ষেত্রে সিলেটের রয়েছে
এক সমৃদ্ধ ইতিহাস। এ শহরে স্বাক্ষরতার
হার প্রায় ৭০%। এখানে রয়েছে শত
বছরের ঐতিহ্যমন্ডিত মুরারিচাঁদ
কলেজ, যা এই শহরের এমনকি সিলেট
অঞ্চলেরই সবচাইতে পুরনো কলেজ।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই কলেজটি
এতদঞ্চলের শিক্ষা, সাহিত্য ও
সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন
করে আসছে।
সিলেটে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক
স্তরের শিক্ষা প্রদানের জন্য
সরকারী বেসরকারী অনেকগুলো
প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে
হজরত শাহ পরান (র:) উচ্চ বিদ্যালয়,
সিলেট সরকারী পাইলট উচ্চ
বিদ্যালয় , সরকারী অগ্রগামী
বালিকা বিদ্যালয় , ও ব্লু বার্ড স্কুল
অন্যতম। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের জন্য
এখানে রয়েছে জালালাবাদ
ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড
কলেজ, মুরারিচাঁদ কলেজ, সিলেট
সরকারী মহিলা কলেজ, সিলেট
ক্যাডেট কলেজ, মদনমোহন কলেজসহ
আরও অনেক কলেজ।
উচ্চতর শিক্ষার জন্য রয়েছে
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয় , সিলেট কৃষি
বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিলেট
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (প্রস্তাবিত
সিলেট প্রকৌশল ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়) ।
দর্শনীয় স্থানসমূহ
সিলেট শহরে হযরত
শাহজালালের [রহ.] মাজার
সিলেট শহরের অন্যতম দর্শনীয় স্থানসমূহ
হলো:
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়
এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল
কলেজ
শাহী ঈদগাহ
হযরত শাহজালালের দরগাহ
শাহ পরাণের মাজার
গাজী বুরহান উদ্দীনের মাজার
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর
কীন ব্রিজ
আলী আমজদের ঘড়িঘর
লাক্কাতুরা চা বাগান
এডভেঞ্চার ওয়ার্ল্ড
জাফলং
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট
ভোলাগঞ্জ
সৈয়দবাড়ী টুলটিকর
বিছনা কান্দি গুয়াইনঘাট
শ্রী চৈতন্য মন্দির, ঢাকা দক্ষিণ
এম সি কলেজ

0 comments:

Post a Comment